অনলাইন
হাজারীবাগের ট্যানারি গোডাউনে আগুন
ছিল না কোনো ফায়ার সেফটি, দুই দফা ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয় ভবনটি
স্টাফ রিপোর্টার
১৮ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবাররাজধানীর হাজারীবাগে ফিনিক্স লেদার কমপ্লেক্স লি. নামে একটি ট্যানারির গোডাউনে আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল দুপুর ২টার পর হাজারীবাগের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের পাশের ১৮০/সি নম্বর ভবনের ৫মতলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আড়াই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র সদস্যরাও। তবে আগুন লাগা ওই একই ভবনে ২০২৩ ও ২০১৪ সালে আগুন লাগার পর দুই দফা ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। এরপরও জুতা-স্যান্ডেল, ওয়ানটাইম থাল-গ্লাস তৈরিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন মালিকপক্ষ।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, শুক্রবার দুপুর ২টা ১৪ মিনিটে আমাদের কাছে খবর আসে হাজারীবাগের একটি ট্যানারির গোডাউনের ৭তলা ভবনে আগুন লেগেছে। খবর পাওয়ার পরই ২টা ২৩ মিনিটে আমাদের ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরে সেখানে একে একে যোগ হয় আশপাশের আরও ১০টি ইউনিট। মোট ১২ ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে। এরপর আরও একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে ১২টা ইউনিটের আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় বিকাল পোনে ৫টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
ফরিদ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, দুুপুর ২টার পর হঠাৎ আমরা দেখি ফিনিক্স গোডাউনের ৫তলা দিয়ে অনেক ধোঁয়া বের হচ্ছে। ধীরে ধীরে আশপাশের লোকজন জড়ো হতে থাকে। যখন নিশ্চিত হই ভবনটিতে আগুন লেগেছে তখন আমরা ফায়ার সার্ভিসে খবর দিই। এর কিছুক্ষণ পরই ফায়ার সাভির্সের গাড়ি এসে কাজ শুরু করে। কিন্তু কাজ শুরুর কিছুক্ষণ পরই পানি শেষ হয়ে যায়। আশেপাশে কোনো পুকুর বা জলাশয় না থাকায় প্রথমে তারা পানি নিতে পারছিলেন না। পরে অন্যান্য ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও সেনাবাহিনীর পানির গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। তিনি বলেন, আগুন লাগার সময় ভবনের ভেতর থেকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। আমাদের ধারণা জুতা তৈরির কাজে ব্যবহৃত বড় বড় আঠার কৌটা ও মেশিনারির কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল ভবনটির ছয়তলায়। আগুন লাগাতে সেগুলোই বিস্ফোরিত হয়েছে। আগুন লাগার সময় বেশ কয়েকজনকে উদ্ধারের জন্য জানালা দিয়ে হাত নেড়ে ইশারা করতে দেখা যায়। পরে বিজিবি সদস্যদের সহায়তায় ফায়ার ফাইটাররা আগুন লাগা ভবনের ভেতর থেকে ৭ জনকে অক্ষত অবস্থায় বের করে আনেন। স্থানীয়রা বলেন, এর আগেও ২০২৩ সালে ও ২০১৪ সালে এই একই ভবনে আগুন লাগে। তখনই ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু মালিকপক্ষ কোনো তোয়াক্কা না করেই ভবনের নিচে বিভিন্ন দোকান ভাড়া দিয়েছিল। একই সঙ্গে ভবনের অভ্যন্তরে চামড়ার জুতা-স্যান্ডেল তৈরির কারখানা ছিল। এছাড়াও ওয়ান টাইম থালা-গ্লাস, কাপ তৈরির কারখানাও ছিল ভবনটিতে।
এসব বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লে. কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম বলেন- প্রথমত, রাজধানীর হাজারীবাগের আগুন লাগা ফিনিক্স নামে ট্যানারি গোডাউনের ওই ভবনে কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান ছিল না। এছাড়া পানির সংকট, ভেতরে দাহ্য বস্তু, উৎসুক জনতার ভিড় ও সরু রাস্তার কারণে আমাদের সক্ষমতার পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। এজন্যই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ১২ ইউনিটের প্রচেষ্টায় ৩ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এটি একটি পুরাতন ভবন। ভবনটিতে মিশ্র পদার্থ ছিল, কাঁচামাল, প্লাস্টিক, গার্মেন্টস পণ্য এবং ওপরে ছিল জুতার কারখানা। জুতার কারখানায় বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ রয়েছে। তাই আগুন দ্রুত ভবনের ৫, ৬ ও ৭ তলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। আমরা ভয় পাচ্ছিলাম এটি জনবহুল এলাকা, আগুন বিস্তার লাভ করলে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো। সেটি আমরা রোধ করতে পেরেছি, এটিই আমাদের বড় সফলতা। তবে আগুনের সূত্রপাত এখনো বের করা যায়নি। শর্টসার্কিট কিংবা সিগারেটের কারণে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তদন্তের পর মূল কারণ জানা যাবে। তিনি বলেন, সরকারের আইনে ফায়ার সেফটি অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু এই ভবনটিতে দাহ্য পদার্থ থাকার পরও কোনো ফায়ার সেফটি ছিল না। আগুন ছড়িয়ে পড়লে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারতো। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধারকাজে সহায়তায় সেনাবাহিনী ছাড়াও ১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয় বলেও জানান- ফায়ার সার্ভিসের এই পরিচালক।