প্রথম পাতা
এনসিটিবি’র সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী এরা কারা
স্টাফ রিপোর্টার
১৬ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার
আন্দোলনের মুখে পাঠ্য বই থেকে ‘আদিবাসী’ লেখা সংবলিত গ্রাফিতি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রবেশ এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী অখণ্ড ভারতের কল্পিত গ্রাফিতি সংযোজনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তিসহ ৫ দফা দাবিতে এদিন এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করে ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’- নামের একটি সংগঠন। অন্যদিকে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর একদল মানুষ পাঠ্য বইয়ে গ্রাফিতিটি পুনর্বহালের দাবিতে এনসিটিবি’র সামনে কর্মসূচি পালন করতে যায়।
বেলা ১২টার দিকে ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ও ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারধারীরা মুখোমুখি হয়। এ সময় হাতাহাতি হয় তাদের মাঝে। প্রথমাবস্থায় পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে ফেলে। দু’পক্ষ পরস্পরবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। দুপুর ১টার দিকে আদিবাসী ছাত্র-জনতার ব্যানারে আসা মানুষের ওপর হামলা চালানো হয়। এই হামলার বেশ কয়েটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যাতে দেখা যায় লাঠি, বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটানো হচ্ছে।
দু’পক্ষই দাবি করছে অপরপক্ষ তাদের ওপর হামলা করেছে। দু’পক্ষই নিজেদের নেতাকর্র্মীরা আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন। ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’- আগের গ্রাফিতিটি সংযোজনের দায়ে রাখাল রাহার অপসারণ এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি করে। এনসিটিবি’র সামনে আয়োজিত কর্মসূচিতে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহম্মদ ইয়াকুব মজুমদার। দাবির মধ্যে রয়েছে- অবাঙালিদের (ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠী) আদিবাসী সম্বোধন করে কোনো বক্তব্য দেয়া যাবে না, কোনো বই পুস্তক ছাপানো যাবে না, লেখালেখি করা যাবে না, কোনো নাটক-সিনেমা বা গল্পকাহিনী রচনা করা যাবে না। বাঙালিদেরই বাংলাদেশের একমাত্র আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে। ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর (অবাঙালি) ‘আদিবাসী’ বলা ও প্রচারণাকে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
অন্যদিকে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার দাবি হলো, আগের গ্রাফিতিটি পাঠ্য বইয়ে পুনর্বহাল করা। এনসিটিবি’র সামনে কর্মসূচি পালন করতে যাওয়া অলিক মৃ বলেন, তার বিরুদ্ধে ‘মব’ তৈরি করা হয়েছে। ওই গ্রাফিতি পুনর্বহাল করতে হবে।
ওদিকে আমাদের মেডিকেল রিপোর্টার জানান, অতর্কিত এই হামলায় সাংবাদিকসহ ১২জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন, রূপায়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা (২৪), ইসাবা (২৫), রেংইয়ংরূ (২৭), ধন জেত্রা (৩২), সৈয়দ আওলাদ (৪৫), জুয়েল মারার্ক (৩৮) ডিবিসি টিভি’র রিপোর্টার, মারিয়া নওমি (১৮), শৈলী (২৫), মিশাল (২৪), আরতি (২৬), টনি (২৮)ও শান্তিময় চাকমা (২৭)। আহত শান্তিময় চাকমা জানান, আমরা রাজু ভাস্কর্য থেকে শান্তিপূর্ণভাবে যাওয়ার পথে কিছু লোক লাঠি-সোঁটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় এতে আমরা আহত হই। আমাদের দাবি আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া ও পাঠ্য বইয়ে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা।
আহতদের মধ্যে রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য বলে ফেসবুকে এক পোস্টে জানান সংগঠনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির হামলায় রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা গুরুতর আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খিসা বলেন, এটা ‘মব’ বাহিনীর হামলা। তারা আগে থেকেই সেখানে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নিয়েছিল।
‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ যাত্রাকালে ছাত্রলীগের একাধিক কর্মী জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়। এই সংগঠনটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ নিজেদের ১৬ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করে। সংগঠনটির আহ্বায়ক জিয়াউল ইসলাম গণমাধ্যমকে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা তাদের ওপর হামলা চালাইনি। তারাই আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সংগঠন। কিন্তু অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আমাদের শাখা রয়েছে। আর যেহেতু এটি সার্বভৌমত্বের ইস্যু, তাই অনেকেই এখানে আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
পাঠকের মতামত
এই অঞ্চলে আদিবাসী বলতে বাঙালিরা এবং বাকি যারা আছে তারা সবাই উপজাতি এবং আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশী #ReformBangladesh
উপজাতিরা তাদের নাম পরিবর্তন করতে চাচ্ছে। এটি একটি ভারতীয় মিশনের অংশ। তারা যদি নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। তাহলে চট্টগ্রাম বিভাগ বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে যাবে। এটাই হলো ভারতের মাস্টার প্ল্যান। এই সামান্য রাজনীতি যারা বুঝে না আমি বলব তাদের ভোটদানের বয়স হয়নি।