মত-মতান্তর
মা- খালার রাজনীতি পরিহার করে টিউলিপ কি পারবেন বৃটিশ রাজনীতিতে ফিরতে পিটার ম্যান্ডেলসনের মতো!
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
(২ সপ্তাহ আগে) ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৪:৫৪ অপরাহ্ন
এক ‘নক্ষত্রের’ বিদায় হলো বৃটিশ রাজনীতি থেকে। নক্ষত্র বলছি এ কারণে আমার সাথে যখন লেবার পার্টির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের দেখা হতো তখন তারা বলতেন- টিউলিপ মেয়েটি বৃটেনে ইতিহাস সৃষ্টি করবে। কারণ সে যে বয়সে কাউন্সিলর হয়েছিল- তারপর এমপি -তারপর জুনিয়র মন্ত্রী। পরের ধাপ ছিল হয় সে লন্ডনের মেয়র নতুবা বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তার আগেই তাকে বিদায় নিতে হয়েছে এক দুঃখজনক ও লজ্জাজনক অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে। আমি যখন টিউলিপের খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতির তীব্র সমালোচনা করেছি, তখন বিষয়টিকে তারা সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। আমার পেছনে তারা এমনভাবে লেগেছিলেন যে, আমাকে রাস্তায় নামিয়ে তারপর তাদের নিস্তার হয়েছে। আজ কী হলো? টিউলিপকে রাস্তায় নামিয়ে দিলো মা-খালাদের দুর্নীতির রাজনীতি!
২০১৬/'১৭ সালের কথা। হিথ্রোতে বাংলাদেশ বিমানে বসব। বিজনেস ক্লাসের যাত্রী। হাতের ব্যাগ রাখার সময় লক্ষ করি- একজন মহিলা আমার দিকে তাকাচ্ছেন। আমি ব্যাগ রেখে যখন দেখলাম ততক্ষণে তিনি বলে উঠলেন- চিনতে কি সমস্যা হচ্ছে? সারাক্ষণ তো থাকেন টেলিভিশনের ভেতরে। আমি হেসে উত্তর দিয়েছিলাম- রেহানা আপা আপনাকে না চেনার কোনো কারণ নেই। কেমন আছেন কুশল বিনিময়ের পর পাশে তার ছেলে ববি, পরিচয় করিয়ে দিলেন। কথাবার্তা হলো। বিমান আকাশে উড়লো। এয়ারহোস্টেসরা এই খাবার-সেই খাবার নিয়ে আসছে। ‘আপা’, ‘আপা’ করছে। কিন্তু তিনি আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আস্তে করে এয়ার হোস্টেসকে কী যেন বললেন। আমি বুঝতে পারলাম তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। আমিও এয়ারহোস্টেসদের ‘আপা’ ‘আপা’ ডাক পছন্দ করছি না। রেহানা আপা সেটি বুঝতে পেরেছিলেন। আমি ততক্ষণে পেছনে চলে যাই। পরিচিত মানুষদের সঙ্গে কথা বলি। ঘণ্টা দুয়েক পরে আমি আমার সিটে আসার পর জিজ্ঞেস করেন, আপনি কোথায় ছিলেন এতক্ষণ? বলেছিলাম, আপনাকে সুযোগ দেয়ার জন্য পেছনে গিয়েছিলাম।
অনেক কথাবার্তার মধ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি তাকে সেদিন বলেছিলাম সেটি ছিল- টিউলিপকে ধান্ধাবাজদের থেকে দূরের রাখার কথা। সেদিন বিমানের ভেতরে আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলেছিলাম, বাংলাদেশি স্টাইলে বৃটিশ রাজনীতি চলে না। রেহানা আপা সেদিন আমার কথাকে যে ভালোভাবে নেননি পরবর্তীতে তার কিছু কার্যকলাপে বুঝতে পেরেছিলাম। তিনি লন্ডনের এক ভদ্রমহিলাকে আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। শুনেছি সেই ভদ্রমহিলা আমার ব্যপারে অনেক আজে-বাজে কথা বলেছেন। অবশ্য ঐ মহিলার সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ ছিল না। শুধু একদিন বলেছিলাম, আপনি গাও-বুড়ি মহিলা। তারপর থেকে ঐ মহিলা আমাকে ভালো ভাবে নেয় না। দোষ আমার। মহিলা বুড়ি হলেও বলবেন আপনি অনেক সুন্দরী, অনেক ইয়াং। আপনার বয়স ১০০ হলেও কিন্তু আপনাকে ৩০/৩৫ এর উপরে লাগে না ইত্যাদি।
সে যাই হোক। গত বৃটিশ নির্বাচনের সময় টিউলিপকে সহযোগিতা করার জন্য আওয়ামী লীগের লোকজন বিভিন্ন এলাকা থেকে যেতে শুরু করে । এক পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকেও লোকজন লন্ডনে এসে টিউলিপের জন্য ভোট চায়। বিষয়টি বৃটিশ গণমাধ্যম ভালোভাবে নেয়নি। এ নিয়ে শুনেছিলাম চ্যানেল ফোর নিউজও করেছিল।
সে যাক, টিউলিপের বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ উঠেছিল তখনই সাথে সাথে পদত্যাগ করা উচিৎ ছিল। এটি বৃটিশ রাজনীতির বিউটি। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ হয়নি বলা যে, তিনি টিউলিপকে ব্যাক করবেন বা সাপোর্ট করবেন। কারণ বৃটিশ গণমাধ্যম তো আর বাংলাদেশের গণমাধ্যম না।
এর মধ্যেই শুনেছি টিউলিপ একটি পত্রিকাকে বলেছেন, দেখে নেবেন অথবা মামলা করবেন। সত্যি-মিথ্যা জানিনা। তখন নাকি ঐ পত্রিকা জান শফার মোকদ্দমা শুরু করে দিয়েছিল। ফলে বৃটেনের প্রত্যকটি নিউজপেপার ঝাপিয়ে পড়েছিল টিউলিপ ইস্যুতে।
এদিকে টিউলিপ ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোও কম করে না। এখানে যারা আওয়ামী লীগ-বিএনপি করেন তাদেরকে একটু অনুরোধ করি আপনারা দয়া করে বাংলাদেশের রাজনীতি বৃটেনের রাজনীতির সাথে মিশানোর চেষ্টা করবেন না।
টিউলিপের জন্য আমার প্রার্থনা- টিউলিপ ফিরে আসুন পিটার ম্যান্ডেলসেনের মতো।
মনে আছে টনি ব্লেয়ার যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন লেবার পার্টিতে চার খলিফা ছিলেন এ চারজন ছিলেন গর্ডন ব্রাউন-টনি ব্লেয়ার-রবিন কুক-আর পিটার ম্যান্ডেলসন। পিটার ম্যন্ডেলসনের সাথে গর্ডন ব্রাউনের সম্পর্ক ভালো ছিলো না। পিটার ম্যান্ডেলসন প্রথমদিকে মর্গেজ সংক্রান্ত কী একটা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। টনি ব্লেয়ার সাথে সাথে তাকে পদত্যাগ করতে বলেন। তিনি তাই করেছিলেন। এর পর কিথভাজ এবং পিটার ম্যান্ডেলসেন দুজনই জড়িয়ে পড়েন হিন্দুজা পাসপোর্ট কেলেঙ্কারিতে। কিথভাজ আর ফিরতে না পারলেও পিটার ম্যন্ডেলসন ফিরে এসেছিলেন। শেষের দিকে ইউরোপীয়ান কমিশনার করেছিলেন। তবে টনি ব্লেয়ারের ব্যক্তিগত বন্ধু ছিলেন পিটার।
স্যার কিয়ের স্টারমারের সাথে টিউলিপের সম্পর্ক ভালো। যদি স্যার বৃটিশ রাজনীতিতে সার্ভাইভ করতে পারেন তাহলে আমার বিশ্বাস- টিউলিপ ফিরতে পারবেন। টিউলিপ ইস্যুতে স্যার কিন্তু পানি ঘোলা করে ফেলেছেন। এখন সন্দেহের তীর কিন্তু স্যারের দিকেও। কারণ স্যার তো এক সময় বাংলাদেশ সফর করেছেন তখন টিউলিপের খালা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
শেষ কথা- টিউলিপের জন্য আমার কষ্ট হয়। একটি মেয়ে এতটুকু পথ পাড়ি দিয়ে হারিয়ে যাবে? টিউলিপের প্রতি আমার শুভকামনা রইলো।
লেখক: সভাপতি, ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চ্যানেল ইউরোপ আইপি টিভি
লন্ডন, ১৪/০১/২৫
www.channeleurooe.tv