খেলা
গঠনতন্ত্র সংশোধন ইস্যু
বিসিবিকে তিন দিনের আল্টিমেটাম, লীগ বর্জনের হুমকি
স্পোর্টস রিপোর্টার
১৫ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবার
ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সরকার পতনের পর অন্যতম এজেন্ডা ছিল বিসিবি’র বর্তমান গঠনতন্ত্র সংশোধন। এরইমধ্যে একটি খসড়া সংশোধিত গঠনতন্ত্রের প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে সিসিডিএম বিলুপ্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বিসিবি’র সাধারণ পরিষদে ক্যাটাগরি-২ এ কাউন্সিলরের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস কমানোর প্রস্তাব করেছে গঠনতন্ত্র সংশোধনে গঠিত কমিটি। বিষয়টি ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে মর্যাদা ও ঐতিহ্যের প্রতি চরম অবমাননাকর বলে মনে করেছে ক্লাব কর্মকর্তারা ও কাউন্সিলরা। গতকাল ঢাকার ক্লাব প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভা শেষে বিসিবি’র সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু বিসিবিকে তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, সংশোধিত গঠনতন্ত্র যদি বাতিল করা না হয় তাহলে সব ধরনের ক্রিকেট লীগ বর্জন করবেন তারা। শুধু তাই নয় তারা শনিবার দেখা করবেন বিসিবি’র নয়া সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গেও। এ ছাড়াও সভা থেকে দাবি তোলা হয়েছে যে গঠনতন্ত্র সংশোধিত কমিটির আহ্বায়ক ও বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিমকে অপসারণ করার।
৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) ব্যাপক রদবদল ঘটে। প্রেসিডেন্ট পদে আসেন ফারুক আহমেদ। নতুন করে পরিচালক পদে আসেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। ফারুকের নেতৃত্বে নতুন বোর্ড ‘নতুনভাবে সংস্কারের’ সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে আছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রতিনিধি মো. সাইফুল ইসলাম। বাকি তিন সদস্য হচ্ছেন আইনের তথা বিসিবি’র লিগ্যাল অ্যাডভাইজর মো. কামরুজ্জামান, ব্যারিস্টার শেখ মাহদি এবং এ কে এম আজাদ হোসেন। তাদের খসড়া সংশোধনীতে ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে ১২ পরিচালক থেকে কমিয়ে মাত্র ৪ জন পরিচালককে নিয়ে আসা হয়েছে। অর্থাৎ, ঢাকার প্রিমিয়ার ডিভিশন, ফার্স্ট ডিভিশন ও থার্ড ডিভিশন ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে মাত্র ৪ জন পরিচালক আসতে পারবেন বোর্ডে। ক্লাব ক্রিকেটের সংশ্লিষ্টতা কমলেও বাড়ছে ডিভিশন ও ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশনের প্রভাব। আগে ১০ জন পরিচালক আসতে পারতেন বিভাগ ও জেলা থেকে। সেটি তিনজন বাড়িয়ে ১৩ করার প্রস্তাব আনা হচ্ছে। প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্রে ঢাকা বিভাগ থেকে একজন বাড়িয়ে তিনজন করা হচ্ছে। এ ছাড়া, দু’জন করে পরিচালক হবেন চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর। একজন করে থাকবেন বরিশাল ও সিলেট থেকে। রংপুর ও রাজশাহীর পরিচালক সংখ্যা একের পরিবর্তে দু’জন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ইনস্টিটিউশন থেকে একজন বাড়িয়ে দু’জন করা হচ্ছে। একই থাকছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে। আগের মতো বর্তমান সংশোধনীতেও দু’জন রাখা হচ্ছে। সবমিলিয়ে ২৫ জন পরিচালক থেকে কমিয়ে আনা হচ্ছে ২১-এ। তাতে বোর্ডে বাড়বে ‘সরকারের প্রভাব’ আর কমবে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট ক্লাবের কর্তৃত্ব। এটাই মানতে পারছেন না ক্লাব প্রতিনিধিরা। সংশোধিত গঠনতন্ত্র বাতিল ও কমিটির চেয়ারম্যান ফাহিমের দাবিতে একাট্টা হয়েছিলেন ক্লাব কর্মকর্তারা। সিসিডিএম এর অন্তর্ভুক্ত ৭৬ ক্লাবের ৬৩টির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন এই সভাতে। সেখানে ক্লাব কর্মকর্তারা এই ধরনের গঠনতন্ত্র সংশোধন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেন। বিশেষ করে কমিটির প্রধান নাজমুল আবেদিন ফাহিমকে তারা অপসারণের দাবি তোলেন। এ নিয়ে ক্লাব কর্মকর্তা ও ক্রিকেট সংগঠক সাব্বির রুবেল বলেন, ‘আসলে নাজমুল আবেদীন বিসিবি’র পরিচালক তাকে অপসারণের কথা আমরা বলতে পারি কিন্তু বাকিরা কেউ ক্রিকেটের মানুষ নন। যে কারণে তাদের নিয়ে আমাদের কথা বলারও কিছু নেই। আমরা চাই যে গঠনতন্ত্র সংশোধন হয়েছে সেটি বাতিল হোক। নয়তো আমরা তিন দিনের মধ্যে কঠিন সিদ্ধান্ত নিবো।’ এ মাসেই প্রথম বিভাগ ক্রিকেট ও ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ মাঠে গড়ানোর কথা রয়েছে। তবে অসঙ্গতিপূর্ণ সংশোধন হলেও ক্লাবকে অবমূল্যায়ন করা হলেও সব ধরনের ক্রিকেট লীগ বর্জন করা হবে বলে জানিয়েছে ক্লাব কর্মকর্তারা। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্লাবগুলোই ঢাকার ক্রিকেটের প্রাণ। আমাদের নিয়ে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। তারা যে সংশোধন করার চেষ্টা করে সেখানে ক্লাবগুলোর জন্য অবমাননা করা। যদি তা দ্রুত আমাদের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে বাতিল না করে সেক্ষেত্রে আমরা সব ধরনের লীগ বর্জন করবো।’