শেষের পাতা
প্লট দুর্নীতি
শেখ হাসিনা-পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
স্টাফ রিপোর্টার
১৩ জানুয়ারি ২০২৫, সোমবার
ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম করে পূর্বাচলে প্লট নেয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়েজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৬০ কাঠা প্লটের মধ্যে এ মামলাটি ১০ কাঠার প্লটটি নিয়ে, যেখানে প্রধান আসামি করা হয়েছে পুতুলকে। গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। মামলায় শেখ হাসিনা ও পুুতুলসহ আরও দায়ী করা হয়েছে রাজউক ও গণপূর্তের সাবেক ১৪ জন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে।
দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। শেখ হাসিনা ও পুতুল ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউক’র সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নং সেক্টরের ২০৩ নং রাস্তার প্লট নং ১৭ সায়মা ওয়াজেদের নামে বরাদ্দ নিয়ে এবং প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রিমূলে প্লটগ্রহণ করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
এর আগে গত ৮ই জানুয়ারি দুদকের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, এ বিষয়ে আমাদের অনেক অগ্রগতি আছে। অনুসন্ধান দল এ নিয়ে অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য এসেছে। যেগুলোর মধ্যে বিশেষ করে রাজউক’র পূর্বাচল প্রকল্পের ৬০ কাঠা বরাদ্দ সংক্রান্ত বিষয়ে শিগগিরই ভালো কিছু তথ্য জানাতে পারব। আমরা যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি, সেগুলোতে স্পষ্টভাবেই ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ দুদক থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা গত ২৭শে ডিসেম্বর জানিয়েছিল দুদক।
অভিযোগে বলা হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তির নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নং সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে প্রায় ৮০ হাজার কোটি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে, রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণসহ ৯টি মেগা প্রকল্প। এছাড়াও বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে শেখ হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে।
এসব অনিয়মের অভিযোগে দুদকের একাধিক দল অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিগগিরই এসব অনুসন্ধান শেষ হবে বলেও জানান দুদকের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। অনুসন্ধানেও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।