বাংলারজমিন
বান্দরবানে সড়ক সংস্কারের নামে গাছ নিধন
নুরুল কবির, বান্দরবান থেকে
১১ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবারবান্দরবানে গ্রামীণ সড়ক সংস্কার, উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে রাস্তার দু’পাশে থাকা শত শত গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে আমানউল্লাহ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। রাস্তাটি সদর উপজেলার বান্দরবান-কেরানীহাট প্রধান সড়ক হতে রেইচা-গোয়ালিয়াখোলা পর্যন্ত্ত ৭ দশমিক ১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য। কৃষিভূমির জন্য বিখ্যাত বলেই স্থায়ীদের মুখে এলাকাটি বান্দরবানের ‘হৃদপিণ্ড’ বা বান্দরবানের সবজি উৎপাদনের রাজধানী নামেও পরিচিত। এই রাস্তার দু’পাশে বেষ্টিত আছে হাজারের অধিক বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ। ২ বছর আগেও এই রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সমারোহে সবুজ বেষ্টনিতে মোড়ানো ছিল বলে জানান স্থানীয়রা। কিন্তু রাস্তা সম্প্রসারণ করা হবে বলে এই ২৫-৬০ বছর বয়সী গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। সরজমিন দেখা যায়, রাস্তার দু’পাশে বিশাল সমভূমি। গাছগুলো দাঁড়িয়ে বহু বছর ধরে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে। তেমনি সমতল মাঠ জুড়ে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির ক্ষেত। স্থানীয়রা জানান, ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। অনেক গাছের ডালপালা ছেটে রাখা হয়েছে। অনেক গাছের গুঁড়ি স্কেভেটর দিয়ে উপড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। আমানউল্লাহ নামে ওই ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি চক্র এ কাজ করছে। গাছগুলো গোড়া থেকে কেটেছে এই চক্র। এরপর স্কেভেটর দিয়ে গাছের গুঁড়ি উপড়ে ফেলে সেখানে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।
গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক নজরুল ও মোহাম্মদ রফিক বলেন, আমাদের আমানউল্লাহ আমান নামে এক ব্যবসায়ী গাছগুলো কাটার জন্য বলেছেন। আমরা ৪ দিনে ৫৫-৬০টির মতো গাছ কেটেছি। রাস্তার দু’পাশের সব গাছ কাটা হবে। তারা বলেন, আমরা দিনের বেলায় গাছের ডালপালাগুলো কেটে রাখি। রাতে এসে গাছের গোড়া থেকে কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যাই। আর একদল, পরদিন স্কেভেটর দিয়ে গোড়াগুলো উপড়ে ফেলে মাটি দিয়ে ভরাট করে রেখে দেয়। যেন সহজে গাছ কাটার চিহ্ন বুঝতে না পারে। নিলামের মাধ্যমে অনুমতি পেয়েছেন দাবি করে আমানউল্লাহ আমান বলেন, এই রাস্তাটি সম্প্রসারণের জন্য যখন বাজেট প্রণয়ন হয়, তখন বান্দরবান সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাবুখয় মারমার নেতৃত্বে ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে গাছগুলো কাটার জন্য নিলামে তোলা হয়। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নিলামে ১০ লাখ টাকায় ১ হাজারটি গাছ কাটার জন্য অনুমতি পেয়েছি। তিনি জানান, যখন গাছগুলো কাটা শুরু করেন তখন উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ, এলজিইডি ও বন বিভাগ গাছকাটা ও পরিবহনের অনুমতি না থাকার কথা বলে বাধা প্রদান করে। এরপর এই চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বান্দরবান জজ আদালতে মামলা করেন। যা এখনো চলমান আছে বলে জানান তিনি।
সদর ইউপি চেয়ারম্যান অংসা হ্লা মারমা জানান, সাবেক চেয়ারম্যান সাবুখয় মারমা থাকাকালীন গাছগুলোকে কাটার জন্য নিলামে তুলেছিলেন। গাছগুলো কাটার সময় উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ এবং উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বাধা দিলে, বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এলজিইডি, ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা বন বিভাগকে বিবাদী করে মামলা করেছিলেন আমানউল্লাহ আমান। যা এখনো চলমান আছে। বান্দরবান বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, রেইচ্চা-গোয়াখোলা রাস্তাটি স্থানীয় প্রশাসনের অধীন। সেখানে বন বিভাগ অংশীজন নয়। রাস্তার দু’পাশে গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে আদালতে মামলা চলমান আছে। কেউ যদি বন বিভাগের অনুমতি ব্যতীত গাছ পরিবহন করে তাহলে পরিবহন আইন অনুসারে বন বিভাগ ব্যবস্থা নেবে। স্থানীয় এলজিইডি’র সিনিয়র প্রকৌশলী পারভেজ সারোয়ার হোসেন বলেন, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের জনগণ এবং পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ এলজিইডি করবে না। আমরা কাউকে গাছ কাটা কিংবা পরিবেশ ধ্বংসের জন্য সুপারিশ বা অনুমতি দিতে পারি না।