শেষের পাতা
৪ দিনেও ভারত থেকে ফেরত আসেনি জহুর আলীর মরদেহ
চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
৯ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবারভারতের ত্রিপুরাতে উদ্ধার হওয়া জহুর আলীকে কোথায় হত্যা করা হয়েছে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অপরদিকে চারদিনেও জহুর আলীর মরদেহ ফেরত না আসায় তার বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি চলছে। সোমবার সকালে চুনারুঘাটের গুইবিল সীমান্ত বরাবর ত্রিপুরা রাজ্যের গৌড়নগর থেকে তার মরদেহ নিয়ে নানা আলোচনা হয় দুই বাংলায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ পত্র-পত্রিকায় ভিন্ন তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে, যাতে ঘটনার মূল রহস্য থেকে যাচ্ছে অন্ধকারে।
ত্রিপুরার কয়েকটি মিডিয়ার সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে গুইবিল সীমান্তের ১৯৬৮ নম্বর মেইন পিলারের ৫ ও ৬ নম্বর সাব পিলারের কাছে গৌড়নগর এলাকা থেকে বিএসএফ এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করে খোয়াই থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। খোয়াই থানা পুলিশ সেই মরদেহ মর্গে পাঠায়। মর্গে থাকা মরদেহটি বাংলাদেশি বৃদ্ধ জহুর আলীর বলে শনাক্ত করা হয়। এরপর চুনারুঘাট থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন গাজীপুর ইউনিয়নের ডুলনা গ্রামে গিয়ে মৃত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করেন। জহুর আলীর ছেলে অলি মিয়া জানান, তার বাবা ঢাকা বসুন্ধরা সিটির সিটিএল কোম্পানিতে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি শনিবার বাড়িতে আসেন। রোববার বিকালে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। তার বাবাকে কেউ খুন করেছে কিনা তা তিনি জানেন না।
জহুর আলীর স্ত্রী সুফিয়া খাতুন বলেন, তিনি যখন ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন তখন তার কাছে ১০-১২টি নতুন লুঙ্গি ছিল। তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে লুঙ্গির ব্যবসা করবেন বলে জানান। তার কাছে ১০-১১ হাজার টাকা একটি পলিথিনে মোড়ানো ছিল। সেই নতুন লুঙ্গি এবং টাকা সঙ্গে নিয়ে রোববার সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হন। তিনি জানান, প্রায় ১২টার সময় এলাকার একজন লোক তাকে বলেছে, তার স্বামী অজ্ঞান হয়ে বাড়ির কাছেই একটি পরিত্যক্ত ধানি জমিতে পড়ে আছেন। খবর পেয়ে তিনিসহ তার আত্মীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে জহুর আলীকে পাননি। তবে তার পায়ের প্লাস্টিকের নীল রঙের স্যান্ডেল, মাফলার ও মোবাইল ফোন পড়ে থাকতে দেখেন। সেখানে টাকা মোড়ানো পলিথিন ছেড়া অবস্থায় দেখতে পান তিনি। ঘটনাস্থলের অনতিদূরে সাদা রঙের আরও একজোড়া প্লাস্টিকের স্যান্ডেল উদ্ধার করা হয়। সেই সূত্র ধরে চুনারুঘাট থানার দারোগা দেলোয়ার হোসেন ডুলনা গ্রামে জহুর বাড়িতে আসেন এবং তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। তিনি স্যান্ডেল, মোবাইল ফোন ও সেই পলিথিন আলামত হিসেবে জব্দ করে নিয়ে যান।
বিজিবি’র কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজিল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জানান, বিজিবি থেকে ইতিমধ্যেই খোয়াই থানা পুলিশ ও বিএসএফ’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সে দেশের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মরদেহ ফেরতের পদক্ষেপ নেবেন তারা। তবে বিজিবি বলছে, জহুর আলী মানসিক রোগী ছিলেন। তবে তা মানতে রাজি নন জহুর আলীর স্বজনরা। জহুর আলী কীভাবে সীমান্ত এলাকায় গেলেন? কীভাবে কাঁটা তারের বেড়া অতিক্রম করলেন? কেন গেলেন সেই রহস্য এখনো অন্ধকারে রয়ে গেছে? তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে বা অধিকতর তদন্ত সমাপ্ত হলে জানা যাবে আসল রহস্য, এমনটাই জানিয়েছেন চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলম।