শেষের পাতা
জানুয়ারিতে সড়কে মৃত্যু ৬০৮ জনের
স্টাফ রিপোর্টার
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬২১টি। এসব দুর্ঘটনায় ৬০৮ জন নিহত ও আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১১০০ জন। মঙ্গলবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পাঠানো এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দেয়া হয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, নিহতের মধ্যে নারী ৭২ ও শিশু ৮৪। ২৭১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২৬৪ জন, যা মোট নিহতের ৪৩.৪২ শতাংশ।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৩.৬৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১৪৩ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৩.৫১ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৩ জন, অর্থাৎ ১২ শতাংশ। এই সময়ে ৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়েছেন। ২২টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত এবং ৭ জন আহত হয়েছেন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র তুলে ধরে সংস্থাটি জানায়, মোট নিহতের ২৬৪ জন হলেন মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী। এ ছাড়া বাসের যাত্রী ২৮ জন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ৩৪ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-এম্বুলেন্স আরোহী ১৯ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ৯০ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র) ১৮ জন এবং বাইসাইকেল-রিকশা আরোহী ১২ জন নিহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৩৪.৪৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪২.৬৭ শতাংশ আঞ্চলিক সড়কে, ১৫.৪৫ শতাংশ গ্রামীণ সড়কে, ৬.৭৬ শতাংশ শহরের সড়কে এবং ০.৬৪ শতাংশ অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে ১৩৩টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৫৮টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৪১টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৭৫টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৪টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে। দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ডাম্পট্রাক ২৯.৬৬ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৪.৬২ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-এম্বুলেন্স ৩.৭০ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৮.৭৩ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ১৪.১০ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-চান্দের গাড়ি-টমটম-মাহিন্দ্র-বোরাক-লাটাহাম্বা) ৪.৩২ শতাংশ, বাইসাইকেল-রিকশা ১.৬৪ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ৩.১৯ শতাংশ।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৭.৬৯ শতাংশ, প্রাণহানি ২৬.৪৮ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.৮১ শতাংশ, প্রাণহানি ১৭.৪৩ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫.৬১ শতাংশ, প্রাণহানি ১৫.৭৮ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.৫৬ শতাংশ, প্রাণহানি ১২.১৭ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৪.৯৩ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৭৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৬.২৫ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩.৩৬ শতাংশ, প্রাণহানি ১১ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.১৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৫.৯২ শতাংশ ঘটেছে। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৭২টি দুর্ঘটনায় ১৬১ জন নিহত হয়েছেন। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ৩১টি দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় ৪২টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম পঞ্চগড় জেলায়। এই জেলায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি।
দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে পুলিশ সদস্য ২ জন, বিজিবি সদস্য ২ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন শিক্ষকসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক ৯ জন, সাংবাদিক ৩ জন, চিকিৎসক ২ জন, বিপিএটিসি-এর কর্মকর্তা ১ জন, ডিসি অফিসের কর্মকর্তা ১ জন, কারারক্ষী ১ জন, নৃত্যশিল্পী ১ জন, বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৮ জন, বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৪ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ২৬ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ২৭ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১৩ জন, ইমাম-মুয়াজ্জিন ৬ জন, সাইকেল মিস্ত্রি ১ জন, টিউবওয়েল মিস্ত্রি ১ জন, ইলেক্ট্রিশিয়ান ১ জন, মেকানিক ২ জন, পোশাক শ্রমিক ৯ জন, নির্মাণ শ্রমিক ৪ জন, রাজমিস্ত্রি ৩ জন, ধানকাটা শ্রমিক ৭ জন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ১ জন, প্রতিবন্ধী ২ জন এবং দেশের বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসা ও কলেজের ৭৪ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ হিসেবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ-যুবাদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি; গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।