শেষের পাতা
যুক্তরাজ্যের আদলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ার প্রতিশ্রুতি বিএনপি’র
স্টাফ রিপোর্টার
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের আদলে বাংলাদেশে ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই রূপরেখা উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা যেমন আজও নিশ্চিত হয়নি, তেমনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষা আজ পরিকল্পিত নয়। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাঙ্ক্ষিত প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন করেনি। সাধারণ জনগোষ্ঠীর চিকিসাসেবা প্রাপ্তির জন্য বিদেশগমন প্রবণতায় এখনো রয়েছে উচ্চহার। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা অদ্যাবধি সার্বজনীন জনবাস্তব হয়ে উঠেনি। স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি দেশের জনগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার এই কথাটির বাস্তব প্রতিফলন আজও প্রত্যাশিত মাত্রায় উপনীত হতে পারেনি।
তিনি বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজের আলোকে বিএনপি’র রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখায় ২৬তম ধারায় স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী বিএনপি সবার জন্য স্বাস্থ্য এই নীতির ভিত্তিতে উন্নত কল্যাণকামী রাষ্ট্রে বিদ্যমান ব্যবস্থার আলোকে সকলের জন্যে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, যুক্তরাজ্যের যে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস-এনএইচএস বা এই জাতীয় সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হেলথ কাভারেজের আলোকে সকলের জন্য সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির নিমিত্তে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্বাস্থ্য খাতের প্রস্তাবনা তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় আসলে দারিদ্র্য বিমোচন না হওয়া পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত হৃতদরিদ্র জনগণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত করবো। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপি ৫% এর কম হবে না।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আলোচনায় প্রায়শই মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের অধীনে রেজিস্টার্ড মেডিকেল চিকিৎসকদের বিবেচনায় রেখে সকল পরিকল্পনা-নির্দেশনা ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। ফলে দেশে বিদ্যমান প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী টেডিশনাল মেডিসিন, ইউনানী, আয়ুর্বেদী, হোমিওপ্যাথিক, কবিরাজী চিকিৎসা ব্যবস্থার অস্তিত্ব উপেক্ষিত হচ্ছে। ফলে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার অধিকতর উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও বৈজ্ঞানিক করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গবেষণা ও বিবিধ সহায়তা প্রদান সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনিয়ম, আর্থিক দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্বৃত্তায়ন, দলীয়করণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতকে কুক্ষিগত করার ফলে ‘চিকিৎসক ও রোগী সম্পর্কের অবনতি, বিদেশমুখী চিকিৎসার বিস্তার’ ঘটেছে।
বিএনপি’র প্রস্তাবনায় স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক উন্নয়নে তিন ধাপে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ তুলে ধরে বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমাদের প্রস্তাবনায় স্বল্পমেয়াদি (এক থেকে তিন বছর) পরিকল্পনা রয়েছে। এতে আমরা গ্রামীণ স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি।
তিনি বলেন, জিপি-জেনারেল ফিজিশিয়ান প্রত্যেক নাগরিককে একজন সরকারি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের অধীনে রাষ্ট্রীয় খরচে সর্বোত্তম স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিদ্যমান জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও বিশেষায়িত স্তরের স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালীকরণ ও সঠিক রেফারেন্স সিস্টেম বাস্তবায়ন করা হবে, ২৪ ঘণ্টা হেল্প লাইন, জরুরি চিকিৎসা সেবা, দুর্ঘটনা পরবর্তী সেবা, দ্রুত স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্যসেবায় ন্যায় বিচার, রোগী ও সেবা প্রদানকারীর জন্য সমতাভিত্তিক আইন প্রণয়ন, সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্ক উন্নয়নের কার্যকর ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া ‘মধ্যমেয়াদি’ (এক থেকে পাঁচ বছর) এবং ‘দীর্ঘমেয়াদি’ (১০ বছর পর্যন্ত) পরিকল্পনার মাধ্যমে গোটা স্বাস্থ্য খাতে আমুল পরিবর্তনের কথা তুলে ধরেন তিনি।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা জাতির জন্য এই প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছি যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি এসব প্রস্তাবনা গ্রহণ করে ভবিষ্যতে জনগণের যে সরকার আসবে তারা সেগুলো বাস্তবায়ন করবে। আর যদি বিএনপিকে যদি জনগণ পছন্দ করে আগামী নির্বাচনে সরকারে পাঠায় তাহলে আমরা জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে আমাদের উপস্থাপিত সবকিছু বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালাবো।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বিএনপি’র মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত
এটি একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।