শেষের পাতা
ট্রুডোর পদত্যাগ কে হচ্ছেন উত্তরসূরি
মানবজমিন ডেস্ক
৮ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবার
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো কোনো উত্তরসূরি ঠিক না করেই দলীয় প্রধানের পদ ত্যাগ করেছেন। একই সঙ্গে তার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকেও পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তার পরে কে দলের হাল ধরবেন সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি। এ ছাড়া বছরের শেষে ফেডারেল নির্বাচনে ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টিকে নেতৃত্ব কে দেবেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৫ সাল থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রুডো। এর আগে নাজুক পরিস্থিতি থেকে দলকে টেনে তুলেছিলেন তিনি নিজেই। এ খবর দিয়ে বিবিসি বলছে, ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন ট্রুডো। যার ফলে তার দীর্ঘ রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান হচ্ছে। কেননা, দল থেকে পদত্যাগ করার অর্থ হচ্ছে তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকেও সরে দাঁড়াতে হবে। তবে পরবর্তী নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনিই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে পার্লামেন্ট মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। দেশটির পার্লামেন্ট না ভেঙে এই স্থগিতাদেশ বিতর্কের জন্ম দেবে, যাতে ভোট সহ অন্যান্য কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আগামী ২৪শে মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্টের সকল কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এর চার দিন পর ফেডারেল সরকার গঠনের ভোট হবে। সাধারণত কানাডার ফেডারেল দলগুলো তাদের নেতা নির্বাচনে চার থেকে পাঁচ মাস সময় নেয়। দেশব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন নতুন নেতা নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রুডো। এমন পরিস্থিতিতে ট্রুডোর উত্তরসূরির তালিকায় উঠে এসেছে লিবারেল দলের সাবেক অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড, পরিবহনমন্ত্রী অনিতা আনন্দ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকার মার্ক কার্টির নাম। তাদের মধ্য থেকেই কেউ একজন দলীয় প্রধান হতে পারেন। দেশটির বিভিন্ন জরিপের পূর্বাভাস বলছে আগামী নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির কাছে ভরাডুবি হতে পারে ট্রুডোর দলের। অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলা করে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে- এমন দলই নির্বাচনে জয়ী হতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
সোমবার প্রায় এক দশক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির নেতা হিসেবে পদত্যাগ করেন ট্রুডো। দলীয় প্রধানের পদ ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পদও চলে যায়। এ ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। অটোয়াতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, দল একজন নতুন নেতা নির্বাচন না করা পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন। উল্লেখ্য, নিজের দলের ভিতরে এবং সর্বমহল থেকে পদত্যাগের জন্য ক্রমবর্ধমান চাপ ছিল ট্রুডোর ওপর। ওদিকে বিরোধী কনজার্ভেটিভ দলের নেতা পিয়েরে পোইলিভরে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ট্রুডোর পদত্যাগের ঘোষণায় কোনো কিছুই পরিবর্তন হয়নি। তিনি এক্সে লিখেছেন, ট্রুডো ৯ বছর ধরে যা করেছেন তার সবটাই সমর্থন করেছেন লেবার দলের প্রতিটি এমপি এবং নেতা। এখন তারা লিবারেল পার্টিতে নতুন একটি মুখ এনে কানাডিয়ান ভোটারদের সঙ্গে ছল করার চেষ্টা করতে চাইছে এবং আরও চার বছর ক্ষমতায় থাকতে চাইছে ট্রুডোর মতো।
ওদিকে বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিনিধি সামিরা হোসেন বলেন, ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের খবর রুদ্ধশ্বাসে কভার করছিল সোমবার। শীর্ষ স্থানীয় সংবাদ বিষয়ক সাইটগুলোর প্রথম পৃষ্ঠায় দেখানো হয়েছে যে, ট্রুডোর রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। এর কারণ, তার সময়ে ভারত ও কানাডার মধ্যকার সম্পর্ক সব সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। কারণ, শিখ নেতা হরদিপ সিং নিজার হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় এজেন্টদের দায়ী করে অভিযোগ করেছেন স্বয়ং জাস্টিন ট্্রুডো। এ নিয়ে দুই দেশের কূটনীতিতে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। এমনকি কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন পর্যন্ত হয়ে যায়। ভারত নিজার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে। ভারত বিশ্বাস করে, কানাডায় বসবাসকারী বিপুল পরিমাণ শিখ জনগোষ্ঠীর সহানুভূতি পাওয়ার জন্য তিনি এমন অভিযোগ করেছেন। ফলে তার রাজনৈতিক পরাজয়কে সরকার স্বাগত জানিয়েছে। ভারত সরকার মনে করছে কানাডায় একজন নতুন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত হবে।