প্রথম পাতা
মেট্রোরেলে টিকিট সংকট, ভোগান্তি
স্টাফ রিপোর্টার
২২ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার
বেশ কিছুদিন ধরেই সংকট রয়েছে মেট্রোরেলের একক যাত্রার টিকিটের। পর্যাপ্ত টিকিট না থাকায় স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় টিকিট বিক্রির মেশিনগুলো বন্ধও রাখা হচ্ছে। আবার যেসব মেশিন চালু থাকে তাতেও মাঝেমধ্যেই যান্ত্রিক ত্রুটি হচ্ছে। এতে মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে সৃষ্টি হচ্ছে যাত্রীদের দীর্ঘলাইন ও বিশৃঙ্খলা। আর ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মেট্রোযাত্রীদের। যাত্রীরা জানিয়েছেন, লাইনে দাঁড়িয়ে একক যাত্রার টিকিট সংগ্রহ করতে ৩০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। এজন্য অনেকে আবার মেট্রোরেল থেকে ফিরে যাচ্ছেন বাসের পথে।
গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরজমিন মেট্রোরেলের মতিঝিল, সচিবালয় ও কাওরান বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্টেশন ঘুরে যাত্রীদের অনেক ভিড় দেখা যায়। টিকিট বিক্রয় মেশিনের একেকটি লাইনে ৫০ থেকে শতাধিক যাত্রী দাঁড়িয়েছিল। একক যাত্রার টিকিট স্বল্পতার কারণে কিছু টিকিট বিক্রয় মেশিনও বন্ধ রাখা হয়। সচল থাকা মেশিনেও মাঝেমধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটি সৃষ্টি হয়ে টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। এতে টিকিটপ্রত্যাশীদের লাইন আরও দীর্ঘ হতে থাকে। স্টেশনে যাত্রীদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডাও দেখা যায় এসব কারণে। মেট্রোরেলে দিনে গড়ে প্রায় তিন লাখের অধিক যাত্রী যাতায়াত করেন। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক যাত্রী একক যাত্রার টিকিট ব্যবহার করেন। বাকি যাত্রীরা নিজস্ব এমআরটি কার্ড ব্যবহার করে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া মতিঝিল স্টেশনে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্ল্যাটফরমে প্রবেশের দু-একটি মেশিনও বন্ধ দেখা গেছে। এতে সব ধরনের যাত্রীদের প্ল্যাটফরমে প্রবেশে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাঞ্চ করে ঢোকার গেট কারিগরি ত্রুটির কারণে বন্ধ থাকতে পারে।
মেট্রোরেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এককযাত্রার টিকিট সংকটের কারণে নতুন যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে। তবে এমআরটি ও র্যাপিড পাশের যাত্রীদের ক্ষেত্রে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না। একক যাত্রার টিকিট সরবরাহ হলে বা কিউআর সিস্টেম চালু হলে এই ভোগান্তি দূর হয়ে যাবে। মতিঝিল থেকে শেওড়াপাড়ার যাত্রী জলিল সরকার। দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখনো লাইন শেষ হচ্ছে না। দ্রুত যাওয়ার জন্য মেট্রোরেলে এসেছিলাম। অথচ স্টেশনেই সময় নষ্ট হচ্ছে। লিটন সরকার নামের আরেক যাত্রী বলেন, সব মেশিন চালু না। যেগুলো চালু তাও মাঝেমধ্যে হ্যাং হয়ে যায়। টিকিট দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। মো. খোকন সচিবালয় স্টেশন থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশনে যাবে। এজন্য একঘণ্টা ধরে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। খোকন বলেন, টিকিটের স্বল্পতা আছে। তাই দেরি হচ্ছে। তিনটা টিকিট বিক্রয় মেশিনের মধ্যে একটা বন্ধ। আরেকটা একটু আগে টিকিট শেষ হয়েছে। এখন লাইন আর আগাচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরেই টিকিট সংকটে এমন ভোগান্তি হচ্ছে যাত্রীদের। এমনকি গত শুক্রবার ছুটির দিনেও দীর্ঘ লাইন ছিল স্টেশনগুলোতে। এসব সমস্যা সমাধানে নতুন টিকিট কার্ড আনাসহ আলাদাভাবে কিউআর সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সম্প্রতি ডিএমটিসিএল জানায়, প্রায় ২ লাখ একক যাত্রার টিকিট যাত্রীরা সঙ্গে করে নিয়ে গেছে। কিছু কার্ড নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে মেট্রোরেলে ন্যূনতম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টিকিট প্রয়োজন। সেখানে বর্তমানে মাত্র ৩০ হাজার টিকিট রয়েছে।
একক যাত্রার টিকিটের স্বল্পতার কারণে গত শুক্রবার রাতে ডিএমটিসিএলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দুঃখ প্রকাশ করে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। জানানো হয়, সিঙ্গেল জার্নি টিকিটের স্বল্পতার বিষয়টি দ্রুতই সমাধান করা হচ্ছে। হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে স্টেশনে আসার জন্য যাত্রীদের বিনীত অনুরোধ জানানো হয়। এ ছাড়া মেট্রোরেলে ব্যবহারের জন্য এমআরটি পাসের পরিবর্তে র্যাপিড পাস কিনতে অনুরোধও করে ডিএমটিসিএল। একইসঙ্গে আগে যাত্রীদের কেনা এমআরটি পাসগুলো ব্যবহার করা যাবে বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি। সার্বিক বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ গতকাল বিকালে মানবজমিনকে বলেন, টিকিটের সংকট রয়েছে। তবে এরজন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আশাকরি রোববার থেকে কোনো সমস্যা থাকবে না। কিইউআর কোডের টিকিটের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী এটা সরবারহ করা যাবে। আমাদের র্যাপিড পাস পুরোপুরি বিক্রি শুরু হয়েছে। এমআরটি পাসের পরিবর্তে সবাই র্যাপিড পাস কিনতে পারবে। নতুন করে আর এমআরটি পাস ক্রয় করবো না আমরা। র্যাপিড পাসই এমআরটি পাসের কাজ করবে।