শেষের পাতা
দলে ঐক্য ভাঙতে চাইলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে
স্টাফ রিপোর্টার
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার
দলের ঐক্য কেউ ভাঙতে চাইলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করে দলের নেতাকর্মীরা এ পর্যন্ত এসেছেন, এ পর্যন্ত দলের ঐক্য ও জনগণের আস্থাকে ধরে রেখেছেন। আমাদের ভেতরে যদি কেউ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই আস্থাকে আঘাত করে, জনগণের বিশ্বাসকে নষ্ট করে, আমার অনুরোধ ও নির্দেশ থাকবে- শক্ত হাতে সেই লোকগুলোকে দমন করতে হবে, শক্ত হাতে সেই লোকগুলো বিরুদ্ধে আপনাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য দলের সুনাম যাতে কেউ নষ্ট করতে না পারে। মঙ্গলবার বিএনপি’র ৩১ দফা নিয়ে ঢাকা বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালায় গাজীপুরের ৮১০, নারায়ণগঞ্জের ৯৬৫ এবং ঢাকা জেলায় ৭৫০ জন নেতাকর্মী অংশ নেন। ঢাকা জেলার এই কর্মশালা রাজধানীর কাকরাইল ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে অনুষ্ঠিত হয়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে অনেক কঠিন হবে মন্তব্য করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আগামীতে যে নির্বাচন হবে, আপনাদের আমি ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, আপনারা যদি ভাবেন- এখানে তো প্রধান প্রতিপক্ষ নাই, নির্বাচন খুব সহজ হবে- না, না এবং না। এই নির্বাচন অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে অনেক কঠিন হবে। সেজন্য নিজেদের সেভাবে প্রস্তুত করুন। জনগণের সমর্থন নিয়ে সেই নির্বাচনের পুলসিরাত যাতে আমরা পার হতে পারি।
তিনি বলেন, বিএনপি’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মানে, বাংলাদেশ এবং এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। যেটি অব্যাহত রয়েছে, থেমে যায়নি। স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। স্বৈরাচারের মাথা পালিয়ে গেছে। ছোট ছোট মাথাও পালিয়ে গেছে। কিন্তু লেজ ও শরীরের অনেকাংশ অবশিষ্ট রয়ে গেছে। তারা কিন্তু ভেতরে ভেতরে ষড়যন্ত্র করছে। এ ব্যাপারে আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমাদের ভেতরে অনেক এজেন্ট ঢুকিয়ে দিয়েছে। এগুলোর ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তারেক রহমান বলেন, আমি প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে ও কর্মশালায় বলেছি, জনগণকে সঙ্গে রাখুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন। আমরা কিন্তু সবসময় বলেছি, আমরা আমি ডামির নির্বাচনে বিশ্বাস করি না। আমরা একটি রাজনৈতিক দল, নির্বাচনে আমরা যাবো, নির্বাচন আমরা করবো এবং নির্বাচন আমরা চাইবো। এখানে লুকোছাপার কোনো ব্যাপার নাই। জনগণের সমর্থন আমরা পাবো। পেলে আইন, নিয়ম ও দেশের সংবিধান অনুযায়ী যেটি হওয়ার- সেটি হবে। জনগণ যাকে বেশি সমর্থন দেবে তারা দেশ পরিচালনা করবে। অর্থাৎ আমরা নির্বাচন চাইবো, নির্বাচন চাওয়াটা কোনো অন্যায় বিষয় না।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখন নির্বাচনকে যদি ফেস করতে হয়, আমরা আমি ডামির নির্বাচনে তো বিশ্বাসী না, আমরা নিশিরাতের নির্বাচনেও বিশ্বাসী না, আমরা ভোট ডাকাতির নির্বাচনেও বিশ্বাসী না। আমরা একটি স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক নির্বাচনে বিশ্বাসী। যেখানে মানুষ নির্ভয়ে এবং নির্দ্বিধায় ভোট দেবে, মুক্তভাবে ভোট দেবে। আমরা সেই নির্বাচনে বিশ্বাসী। আমাদের তো পরিকল্পনা আছে, যেকোনো মূল্যে এদেশের মানুষের ভোটাধিকারকে রক্ষা করা, মানুষ যখন ভোটের অধিকার রক্ষা করবে, তখন তারা নির্দ্বিধায় ভোট দেবে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মশালায় বিএনপি’র নেতাদের বক্তব্য উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, আপনারা বলেছেন- ‘বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি’র দিকে তাকিয়ে আছে’। বিএনপি’র কাছ থেকে ভালো ও বড় কিছু প্রত্যাশা তাদের। কোটি কোটি মানুষের যখন প্রত্যাশা থাকে তখন সেই দায়িত্বটা কিন্তু অনেক বড় থাকে। তারা মনে করে কিছু ভালো করতে পারলে বিএনপি করতে পারবে। দেশের অধিকাংশ মানুষের এ রকম বিশ্বাস, প্রত্যাশা এবং ধারণা।
তিনি বলেন, ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা দেশ এবং দেশের মানুষকে নিয়ে ভবিষ্যতে কি চিন্তা করছি। কীভাবে রাষ্ট্রের কাঠামোর কিছু মেরামত করা সম্ভব হয়। বিগত পলাতক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা দল, মত, নির্বিশেষে জুলাই-আগস্ট মাসে রাজপথে নেমে এসেছিলাম। এই সকল মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তাদের যে প্রয়োজন, চাওয়া এবং দেশ ও ভবিষ্যৎকে নিয়ে প্রত্যাশা- তার সমষ্টিগত চিন্তার প্রতিফলন আমাদের এই ৩১ দফা।
এ সময় ৩১ দফা নিয়ে সারা দেশে প্রতিটি গ্রাম ও ঘরে ঘরে যাওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তারেক রহমান। জনগণের সমর্থনকে যেকোনো মূল্যে ধরে রাখার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতিজ্ঞা এবং শপথ নিতেও বলেন তিনি। ঢাকা জেলা বিএনপি’র সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য দেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, দলের কেন্দ্রীয় নেতা আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, ঢাকা জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।
নারায়ণগঞ্জের কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনসহ জেলার বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা।
গাজীপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নানের সঞ্চালনায় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবিবা প্রমুখ।
পাঠকের মতামত
আশা করছি, তারেক রহমানের চিন্তাভাবনা এমনই থাকবে। ক্ষমতায় গিয়ে এসব ভুলে গেলে চলবে না। বরং, কথাগুলোকে কাজে পরিণত করতে হবে। সার্বিক অবস্থায় জনগণের সাথে থাকতে হবে। নিজেকে জনগণের সেবক ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে, আবার লোভী হলে সব শেষ। এর সাথে সেও মরবে, আমাদেরও মারবে। এমনটি অবশ্যই কাম্য নয়। তাকে পূর্ব থেকেই শুভকামনা জানাচ্ছি।
কেও যেন চাঁদাবাজি না করে, জনগনের অশান্তির কারণ না হয়, চাঁদাবাজির কারণে দাম না বাড়ে, সরকারি রাস্তা দখলে নিয়ে চাঁদাবাজি না করে, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে যোক্তিক বাজার দর ঠিক রাখা, এগুলো হলেই জনগন খুশি, আর অন্য কোন দেশের তাঁবেদারি/গোলামী মুক্ত দেশ চাই জনগন।
তারেক রহমানের চিন্তাভাবনা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিপক্ব। বিএনপির নেতাকর্মীরা এটা ধারণ করতে পারলে তাকে ঠেকানোর ক্ষমতা বাংলাদেশে কারো নেই।