মত-মতান্তর
খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার উচিত কথা বলা শুরু করা
স্যামুয়েল চারাপ ও জেরেমি শাপিরো
৩০ জুলাই ২০২২, শনিবারপশ্চিমা শক্তিগুলো চাচ্ছে রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে সহায়তা করতে। আবার একইসঙ্গে তারা রাশিয়ার সঙ্গে নিজেদের সরাসরি সংঘাতও এড়াতে চাচ্ছে। অর্থাৎ, যুদ্ধ যাতে ইউক্রেনের মধ্যেই আটকে থাকে সেটি নিশ্চিত করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। কিন্তু ইউক্রেনকে সহায়তা করতে গিয়ে এরইমধ্যে রাশিয়াকে বেশ ভালোই চটিয়ে দিয়েছে তারা। দিন যত যাচ্ছে পশ্চিমারা ইউক্রেনকে আরও শক্তিশালী অস্ত্র দিতে শুরু করেছে। রাশিয়াও পাল্টা ধ্বংসযজ্ঞ বৃদ্ধি করেছে। এখন পর্যন্ত নিজেদের অস্ত্রের গভীর রিজার্ভ খালি করতে ইউক্রেনকেই ব্যবহার করছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু একপর্যায়ে গিয়ে ন্যাটো বনাম রাশিয়া যুদ্ধ এখন অনেকটাই পূর্ব-নির্ধারিত হয়ে আছে
রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ ৫ মাস পার হলো। এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র শুধু সামরিক সাহায্য হিসেবেই ইউক্রেনকে দিয়েছে ২৪ বিলিয়ন ডলার। এটি ২০২১ সালে ইউক্রেনের মোট সামরিক বাজেটের চার গুণেরও বেশি।
পশ্চিমা শক্তিগুলো চাচ্ছে রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে সহায়তা করতে। আবার একইসঙ্গে তারা রাশিয়ার সঙ্গে নিজেদের সরাসরি সংঘাতও এড়াতে চাচ্ছে। অর্থাৎ, যুদ্ধ যাতে ইউক্রেনের মধ্যেই আটকে থাকে সেটি নিশ্চিত করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। কিন্তু ইউক্রেনকে সহায়তা করতে গিয়ে এরইমধ্যে রাশিয়াকে বেশ ভালোই চটিয়ে দিয়েছে তারা। দিন যত যাচ্ছে পশ্চিমারা ইউক্রেনকে আরও শক্তিশালী অস্ত্র দিতে শুরু করেছে। রাশিয়াও পাল্টা ধ্বংসযজ্ঞ বৃদ্ধি করেছে। এখন পর্যন্ত নিজেদের অস্ত্রের গভীর রিজার্ভ খালি করতে ইউক্রেনকেই ব্যবহার করছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু একপর্যায়ে গিয়ে ন্যাটো বনাম রাশিয়া যুদ্ধ এখন অনেকটাই পূর্ব-নির্ধারিত হয়ে আছে।
এর মানে এই নয় যে, ইউক্রেনকে সাহায্য পাঠানো বন্ধ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। কিন্তু তাদেরকে অবশ্যই পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। কীভাবে সেই যোগাযোগের চ্যানেল চালু করা যায় তা নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গেও বসতে হবে। যদিও যুদ্ধ কোন দিকে যাচ্ছে তা এখনই বুঝা মুশকিল, তবে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির লক্ষ্য এখনই নির্ধারণ করতে হবে। যুদ্ধ চলাকালীন আলোচনা শুরু হওয়ার কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। এছাড়া এই আলোচনা সফল করার জন্য ব্যাপক কূটনৈতিক চেষ্টার দরকার পড়বে। এরপরেও সফলতার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু তারপরেও এখন পশ্চিমা বিশ্বকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার একটি সুযোগ তৈরি করতেই হবে।
কারণ, কেবলমাত্র আলোচনার মধ্য দিয়েই আপসের জায়গা তৈরি হবে এবং এই সংঘাত স্থায়ীভাবে বন্ধের রাস্তা তৈরি হবে। যদি তা না হয়, তাহলে আজ হোক বা কাল, রাশিয়া ও ন্যাটো নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হবে নিশ্চিত।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে যে ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্র কারোরই আগ্রহ নেই তা তাদের আচরণেই স্পষ্ট। তারা সরাসরি সেটি জানিয়েছেও। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সাহায্য করার সময় এর ঝুঁকিটা বুঝেই নিয়েছে। তাদের সাহায্য যাতে রাশিয়ার টানা কোনো রেড লাইন অতিক্রম না করে সেটি নিশ্চিত করা হয়েছে। ইউক্রেনকে যখন দূরপাল্লার রকেট সিস্টেম দেয় যুক্তরাষ্ট্র, তখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন যে, এই অস্ত্র যেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলায় ব্যবহৃত না হয়। প্রথমে এই অস্ত্র কিয়েভকে দেয়ারই ইচ্ছা ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের। তবে রাশিয়ার কাছে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর হারানোর কারণে ইউক্রেনকে বিভিন্ন শর্তে এই অস্ত্র দেয়া হয়। এর প্রথম এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শর্তই ছিল শুধুমাত্র ইউক্রেনের মধ্যেকার যুদ্ধেই এই অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে। পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা হলে রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোতে পাল্টা হামলা চালাবে বলেই ধরে নেয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে পশ্চিমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাশিয়াকে একেবারে না চটিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করে যাওয়া।
তবে এই যুক্তি নিয়ে সন্দেহের কারণ রয়েছে। ক্রেমলিন এখন ইউক্রেনের যত বেশি এলাকা সম্ভব দখলে নিতে চায়। কিন্তু মার্কিন অস্ত্রের কারণে রাশিয়া তার লক্ষ্য অর্জনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই শুধু রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলাই না, রুশ বাহিনী যদি ইউক্রেনের মধ্যে হারতে শুরু করে তাহলেও যথেষ্ট চটবেন প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। আর এই যুদ্ধে হারের কোনো স্থান নেই ক্রেমলিনের কাছে। অপরদিকে পশ্চিমারাও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার জয় মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। রাশিয়া যদি ইউক্রেনের আরও গভীরে অভিযান শুরু করে, পশ্চিমারা আরও শক্তিশালী অস্ত্র দেবে ইউক্রেনকে। আর এসব অস্ত্র ইউক্রেন ব্যবহার করবে রাশিয়াকে থামাতে। তখন রাশিয়ার সামনেও পশ্চিমাদের শায়েস্তা করার বিকল্প থাকবে না। এবং সেই পর্যায়ে গিয়ে ন্যাটোর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে নামবে রাশিয়া। বর্তমানে রাশিয়া এবং পশ্চিমা দুনিয়া যে অবস্থানে রয়েছে তাতে আগে হোক বা দেরিতে, এই দিন আসবেই। তাই রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাত এড়াতে চাইলে অবিলম্বে আলোচনা শুরু করতে হবে। ওই পরিস্থিতি এড়াতে যা যা আপস প্রয়োজন তা এখনই ঠিক করতে হবে।
রাশিয়া ও পশ্চিমারা উভয়পক্ষই ইউক্রেনে জয় পেতে মরিয়া। এজন্য যা যা দরকার পড়ুক তা করতেই প্রস্তুত দুই পক্ষ। মূলত এ কারণেই এই সংঘাত আরও বড় হতে চলেছে সেটি এত নিশ্চিতভাবে বলা যায়। কিন্তু পশ্চিমা নেতাদের বুঝতে হবে যে, তাদের এই চিন্তা ইউক্রেনে তাদের লক্ষ্যের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। ক্রমাগত ইউক্রেনকে শক্তিশালী অস্ত্র দেয়ার মাধ্যমে এই সংকট আরও ঘনীভূত হতে চলেছে। এই অস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে পাল্টা আক্রমণ করতে পারছে। কিন্তু রুশ বাহিনী যুদ্ধ জয়ে আরও বেশি বদ্ধপরিকর। যুদ্ধে জয় পেতে কিংবা অন্তত না হারতে যা যা করা দরকার তা করতে প্রস্তুত রাশিয়া। বিশ্ব এখন এমন একটি যুদ্ধ দেখছে, যাতে এক পক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য পক্ষ আরও বেশি কিছু করার বাধ্যবাধকতা অনুভব করে। তাই সময় দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই আসন্ন মহাবিপর্যয়কর এড়াতে দুই পক্ষের উচিত কথা বলা শুরু করা।
নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে অনূদিত