ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ রজব ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

দুদক ও বিচার বিভাগ হাসিনার দাসে পরিণত হয়েছিল

স্টাফ রিপোর্টার
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবারmzamin

দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিচার বিভাগকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাসে পরিণত করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। গতকাল আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুদক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। 

রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত ওই সভায় আসিফ নজরুল বলেন, সেই ‘চোর’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যার পুরো পরিবার ছিল ‘চোর’। তিনি সারা দেশে বলে বেড়াতেন, খালেদা জিয়া নাকি এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ওই ‘চোরের’ মুখের সামনে কেউ কথা বলতে পারতেন না, দুদক ও বিচার বিভাগ তার দাসে পরিণত হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমার দুঃখ লাগে, আমার সঙ্গে যারা বড় হয়েছেন, ছাত্রজীবন-বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, সাংবাদিকতা জীবন ও শিল্প-সাহিত্যের জগতে যাদের দেখেছি, তারা যে বড়লোক হয়েছেন, সেটার কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা, দুঃখবোধ বা লজ্জা ছিল না।...দুর্নীতি এই সমাজে ‘এক্সেপ্টেড নর্মে’ (সাধারণ বিষয়) পরিণত হয়েছিল। কেউ প্রশ্ন করতো না, এত টাকা কোত্থেকে এলো? উল্টো গর্ব করতো, খুশি হতো; আরে, তার এত টাকা! অবৈধ বিত্ত নিয়ে অহংকার চলতো।...মসজিদ কমিটিগুলোও চোরে ভরে গিয়েছিল।

আসিফ নজরুল বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় আড্ডায় শুনতাম, শেখ হাসিনার ক্যাশিয়ার কে, রেহানার ক্যাশিয়ার কে, জয়ের টাকা কার মাধ্যমে যায়, পলক কার টাকা রাখে। দুদক তো ছিল, উচ্চ আদালতও ছিলেন, কোনো বিচার হয়নি। বিচার কার হতো? খালেদা জিয়ার। তিন কোটি টাকা একটা ব্যাংকে রেখেছেন, একটা টাকা সেখান থেকে কেউ আত্মসাৎ বা স্পর্শ করেনি; শুধু প্রক্রিয়াগত ভুলের জন্য তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ১০ বছরের জেল দিয়েছিল দুদক-বিচার বিভাগ মিলে।
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, দুর্নীতি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হওয়ার কারণ ছিল, দুর্নীতির কোনো বিচার তো হতোই না, বরং দুর্নীতি যে একটা খারাপ জিনিস, এটা ভাবার সংস্কৃতিটাই চলে গিয়েছিল। আমরা দেখতাম, একটা বেহায়া প্রধানমন্ত্রী তার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে- এটা হাসতে হাসতে জাতির সামনে বলছেন। আওয়ামী লীগের কোনো নেতার সঙ্গে দেখা হলে বলতেন, আপা তো আসলে কিছু করতে পারেন না, ওনার ছোট বোনের জন্য। বোনের প্রতি কী মায়া! বোন ‘চোর’ দেখে উনি কিছু করতে পারেন না।

দুদকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে আসিফ নজরুল বলেন, দুদকের যারা কমিশনার ছিলেন, পদত্যাগ করার আগে তারা গত আমলে চুরি করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া শতাধিক মন্ত্রী-ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমোদন দিয়ে গেছেন। এখন তদন্ত করুন। প্রমাণ করুন, ভালো পরিবেশ পেলে আপনারা কাজ করতে পারেন। এটাই আপনাদের প্রতি আমাদের ও সারা দেশের আকাঙ্ক্ষা।
সভায় বিশেষ অতিথি টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা যে ধরনের তথ্য পাচ্ছি, সেটি অত্যন্ত বিব্রতকর। এতদিন যা শুনে এসেছি, তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি। অনিয়ম, অনাচার, বৈষম্য, দুর্নীতি, লুণ্ঠনতন্ত্র। বুকে হাত দিয়ে বলছি, আমি বিব্রত হচ্ছি। এই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। আমাদের তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।
অতীতে দুদকের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সহযোগী ভূমিকা পালনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কেন হবে? দুদকের জন্য এর চেয়ে বড় অবমাননা কি আর হতে পারে? এর কারণ, একদিকে দুদক দুর্নীতির সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, অন্যদিকে তারা নিজেরাও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। এ ছাড়া সংস্থাটির মহাপরিচালক, উপ-পরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এতে উপস্থিত ছিলেন।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Hamdard

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status