ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে তারাপুর চা বাগানে ভূমি দখলের মহোৎসব

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৩০ নভেম্বর ২০২৪, শনিবারmzamin

সিলেটের তারাপুর চা বাগান একটি আলোচিত বাগান। উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে ৫ বছর আগে বাগানের মালিকানা পায় সেবায়েত অংশ। এরপর থেকে সেবায়েতরাই পরিচালনা করছেন বাগান। প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাগানের ভূমি দখল নিয়ে এলাকায় উত্তাপ- বিরাজ করছে। সরজমিন দেখা গেছে- চা বাগানের ভূমি দখল থেকে অট্টালিকা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া শতাধিক দোকানপাট নির্মাণ করে বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে বাগানের বর্তমান ম্যানেজার রিংকু চক্রবর্তীকে। অভিযোগ উঠেছে- তার ছত্রছায়ায় ভূমিখেকোরা বাগানের ভূমি দখলের মহোৎসব চালাচ্ছে। তবে রিংকু’র অভিযোগ- জমি দখল বন্ধ করতে প্রশাসনের কাছে বার বার ধরনা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। স্টার টি গার্ডেন থেকে বর্তমান তারাপুর চা বাগান। ১৯১৫ সালে সৃজন করা বাগান ১৯৮৮ সালে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে কিনে নেন বৈকণ্ঠ চন্দ্র গুপ্ত। মাঝখানে বাগানটি হাতছাড়া হলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৯ সালে বাগানের মালিকানা ফিরে পান সেবায়েত অংশ। বাগান কর্তৃপক্ষের দাবি; তারাপুর চা বাগান পূর্বের মালিকানায় থাকার সময় শত শত একর ভূমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

পরবর্তীতে প্রশাসনের তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে বাগানের জমিতে ৭২৩টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এ কারণে বৃটিশ শাসনের সময় থাকা মোট ৫০০ একর ভূমির মধ্যে এখন সেটি ১৩০ একরে ঠেকেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- বাগানের অভ্যন্তরে মেডিকেলের প্রধান ফটকের সামনে প্রায় ৫০ শতক ভূমি দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে ওই দোকানপাটের ভাড়ার টাকা নিচ্ছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। বাগানের  গোয়াবাড়ি সড়কের প্রবেশমুখে প্রায় ৬০ শতক ভূমি দখল করে দোকানপাট সহ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে একটি আবাসিক এলাকাও। হাওলাদারপাড়া, জগদীশটিলা, করেরপাড়ার কয়েক একর ভূমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতা সুদীপ দে প্রায় ৮ শতক ভূমিতে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা চালান। পরে আইনি লড়াইয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ জমি পায়। তবে; বর্তমানে মন্দিরের উন্নয়নের কথা বলে ওই ভূমিতে বাগান কর্তৃপক্ষ দোকানপাট নির্মাণ করে বিক্রি করে দিচ্ছে। ভূমি ক্রয়কারী দোকানের মালিকরা জানিয়েছেন- ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় ৮টি দোকান তারা বাগান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিজ নিয়েছেন। দোকানের পজিশন নিয়ে বর্তমানে মালিকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। লাখাউড়া এলাকায় প্রায় ৫৩ একর ভূমি বেহাত রয়েছে। পীর মহল্লার শেষাংশে প্রায় ২০ বিঘা ভূমি দখল করে বাসাবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে ৫ই আগস্টের পর থেকে বাগানের নিকটবর্তী ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপাড়া এলাকায় অন্তত এক বিঘা ভূমিতে অট্টালিকা নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা চলছে। অভিযোগ উঠেছে- স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শরীফ বক্সের নেতৃত্বে আলাউদ্দিন বক্স, রুমেল বক্স, সুমন বক্স, রুক্কল বক্স সহ ১৬ জন ব্যক্তি ওই ভূমি দখলে নিয়ে বর্তমানে বাসা নির্মাণ করছেন।

দখলের বিষয়টি বুধবার সরজমিন তদন্ত করেছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি টিম। তারা সরজমিন ভূমি দখলের সত্যতা পেলেও সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করেননি। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। আওয়ামী লীগ নেতা শরীফ বক্স ওই ভূমি দখলে তার নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান- কয়েক বছর পূর্বে ওই ভূমিতে অস্থায়ী স্থাপনা ছিল। তখন বাগান কর্তৃপক্ষ কোনো নিষেধ করেনি। স্থাপনা নির্মাণকারী হাজীপাড়া এলাকার রুমেল বক্স মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ২০১৭ সালে ৩৫ শতক ভূমি বাগান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিজ নিয়ে তারা বাড়ি নির্মাণ করছেন। জমি দখলের বিষয়টি সত্য নয়। রুমেলের এই বক্তব্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন বাগানের ম্যানেজার রিংকু চক্রবর্তী। তিনি জানিয়েছেন- পূর্বের স্থাপনা তিনি নিজেই উচ্ছেদ করেছেন। প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সময় তিনি সহ বাগানের শ্রমিক নেতাদের মামলা হওয়ায় বর্তমানে তেমন পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। এ কারণে ভূমি দখলের জন্য স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় তিনি সাধারণ ডায়েরি ও সেনাবাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ৭ নং ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর সাঈদ আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন- একটি বাগান ধ্বংস করে স্থাপনা নির্মাণ করা অপরাধ। এ কারণে আমাদের দাবি হচ্ছে বাগান এলাকা এবং বসতি এলাকার সীমানা নির্ধারণ করা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেটি করা হচ্ছে না। তারাপুর বাগান শুধু হাজীপাড়া অংশই নয়, চতুর্দিকে দখলের মহোৎসব চলছে। এদিকে বাগানের জমি দখলের কথা জানিয়ে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পাঠানটুলা এলাকার মুহিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। পাঠানটুলা এলাকার সালেক আহমদ জানিয়েছেন- বর্তমানে তারাপুর চা বাগানের ভূমি বাগানের ম্যানেজার বাগানের প্যাডে লিখিত করে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এই বিক্রির বৈধতা কতোটুকু প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন- বাগানে ভূমি বেচা-বিক্রির বিষয়টি এখন এলাকায় ওপেন সিক্রেট। ঘোষণা দিয়ে দোকানপাট বিক্রি করা হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকায় অসন্তোষ বিরাজ করছে। তার বাসার গলির উল্টো দিকে এক ব্যক্তির কাছে বালু ব্যবসার জন্য টাকার বিনিময়ে জমি লিজ দেয়া হয়েছে। বাগান ম্যানেজার রিংকু জানিয়েছেন- তিনি কোনো লিজ দিচ্ছেন না। লোকসানে থাকা বাগানের ঘাটতি পূরণে সংশ্লিষ্ট সবার অনুমতি নিয়ে সেটি করা হচ্ছে। এ টাকার একাংশ মন্দিরের উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status