ঢাকা, ১০ মে ২০২৫, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

শীতে পা ফাটা প্রতিরোধে

অধ্যাপক ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল
২৬ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার

পা ফাটা প্রতিরোধে  পাথর দিয়ে ও সিমেন্টে ঘষলেই ভালো হয় না। প্রতিরোধে প্রয়োজন পায়ের বিশেষ যত্ন। দেখা যায়, পায়ের পাতা ফেটে যাওয়ায় অনেকেই কষ্ট পান। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পা ফাটা এতটাই মারাত্মক যে ফাটল তৈরি হয়েছে, হাত-পায়ের চামড়া ফেটে গিয়ে রক্ত বেরোনোর ঘটনাও ঘটে থাকে। মনে রাখতে হবে এক্ষেত্রে ত্বকের অন্য কোনো বড় সমস্যা রয়েছে, যা শীতকালে বেড়ে গিয়েছে। তাই পা ফাটাকে একটি রোগ বলেই ধরে নিতে হবে।
পা ফাটার  বিভিন্ন ধরন
হেরিডিটারি পামোপ্লান্টার কেরাটোডার্মা
এটি এক ধরনের জিনবাহিত রোগ। এ ক্ষেত্রে রোগীর ত্বক  অনেক মোটা হয়। এতটাই মোটা  যা, স্বাভাবিক বলে গণ্য হয় না। দেখা যায়, রোগীর চামড়া স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি মোটা হয়।  যা অনেকটা কাঠের মতো মনে হয়। এই ধরনের রোগীদের সাধারণত  হাত-পা খুব বেশি ফাটে।  এমনকি দৈনন্দিন কাজকর্ম পর্যন্ত ব্যাহত হয়। এর কোনো দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা হয় না। 
সোরিয়াসিস
সোরিয়াসিস পুরোপুরি জিনবাহিত রোগ  নয়। এই রোগটিকে বলা হয়, জেনেটিক্যালি মিডিয়েটেড ডিজিজ। হাত-পায়ে লাল চাকা চাকা দাগ হয়ে যাওয়া, চুলকানি, ছাল ওঠা... এগুলো এ রোগের লক্ষণ। এ রোগের আরও একটি উপসর্গ, হাত-পা ফেটে যাওয়া। বিশেষত, পা ফেটে লম্বা লম্বা ফিশার তৈরি হয়, যেখান দিয়ে রক্তও বেরোতে পারে। শীতকালে এই ফাটা বেশি বাড়ে। জ্বালা-যন্ত্রণাও বাড়বে এই ধরনের সমস্যায়। এই রোগ  পরিত্রাণ বা সারতে সময় লাগে। খাওয়ার ওষুধের পাশাপাশি ফাটা জায়গায় লাগানোর জন্য অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল ক্রিম, ফুসিডিক অ্যাসিড ক্রিম দেয়া হয়। পেট্রোলিয়াম জেলি বা ভালোমানের ময়শ্চারাইজারও এই সোরিয়াসিস নিরাময়ে ভালো কাজ দেয়।
একজিমা  বা অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস
এই রোগের ক্ষেত্রে পা ফাটার পার্থক্য অনেক সময়েই বোঝা যায় না। তখন আলাদা করে ত্বকের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। একে বলা হয়, হিস্টোপ্যাথোলজি।  সোরিয়াসিসের চেয়ে এই রোগ সারতে কিন্তু কম সময় লাগে। ওষুধের প্রয়োগও কম করতে হয়। ত্বকে লাগানোর ক্রিম দু’টি ক্ষেত্রেই মূলত এক। তবে খাওয়ার ওষুধের মধ্যে অবশ্যই বিশেষ তফাৎ রয়েছে।
পিটরিয়াসিস রুবরা পাইলারিস (পিআরপি)
এটিও একটি জিনবাহিত রোগ। এই রোগ যাদের আছে, শীতকালে তাদের হাত-পা প্রচণ্ড শুষ্ক হয়ে যায়। এবং সোরিয়াসিসের মতোই পা ফেটে যায়। সাধারণত এ রোগ পরিত্রাণে খাওয়ার ওষুধ এবং পায়ে লাগানোর ওষুধ দেয়া হয়।
পরিত্রাণ যেভাবে-
পা ফাটা অনেকের সারা বছর থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে  শীতে এই রোগের প্রকোপ বাড়ে। তাই পরিত্রাণ পেতে পায়ের যত্ন নেয়া দরকার।
মোজা পরে থাকা বা ব্যবহার 
শীত অল্প পড়লেই মোজা পরার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। কারণ এতে ঠাণ্ডা, দূষণ, ধুলোবালি সবকিছুর হাত থেকেই পা বাঁচিয়ে রাখা যায়।
লবণ পানিতে পা ভেজানো
আধ বালতি পানিতে এক চিমটে লবণ দিয়ে পা আধ ঘণ্টা চুবিয়ে রাখলে আরাম পাওয়া যায়। এটি অবশ্য যাদের পা ফাটার সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্যই নয়, পা ভালো রাখতে যে কেউ করতে পারেন। কারণ শীতকালে, যাদের অল্প পা ফাটে বা পা না ফাটলেও শুষ্ক হয়ে যায়, তাদেরও পা ভালো রাখতে এটি খুব কার্যকর একটি ঘরোয়া উপায়।
স্ক্রাবিং 
পিউমিস স্টোন বা পাথর  দিয়ে নিয়মিত পা স্ক্রাব করা সকলের জন্যই জরুরি। এতে পায়ে ময়লা জমে না।
তেল ও ময়শ্চারাইজারের ব্যবহার
গোসলের আগে ভালো করে নারকেল তেল মাখলেও উপকার পাওয়া যায়।  তবে গোসলের পরে ভালো ময়শ্চারাইজার বা বডি বাটার পায়ে লাগানো উচিত।
স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার 
যদি  উপরোক্ত  যত্নের পরেও পা ফাটা না কমে স্টেরয়েড  ব্যবহার করার জন্য সাধারণত চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে লিখে থাকেন। টানা এক বা দেড় মাস ওই ক্রিম লাগালে অনেকটাই উপকার পান রোগী। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনো এ ধরনের ক্রিম ব্যবহার করা উচিত নয়।
পা ফাটা প্রতিরোধে  আগেভাগে সতর্ক হলে তা এড়ানো সম্ভব। খেয়াল রাখবেন পা ফাটা এটি আদৌ চর্মরোগ না কি শীতের ফাটা, সে সম্পর্কে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জেনে নেয়া প্রয়োজন।

লেখক: চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ, চেম্বার: কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার, ফার্মগেট, গ্রীন রোড, ঢাকা। যোগাযোগ: ০১৭১১-৪৪০৫৫৮

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status