শেষের পাতা
বুলবুলের সঙ্গে থাকা ছাত্রীকে ঘিরে তদন্ত
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট ও শাবি প্রতিনিধি
২৭ জুলাই ২০২২, বুধবার
ধস্তাধস্তিতে আহত হয়েছিলেন নিহত শাবি ছাত্র বুলবুল আহমদের সঙ্গে থাকা ছাত্রী মার্জিয়া আক্তার ঊর্মি। ঘটনার পর শাবি প্রশাসন তাকে পার্শ্ববর্তী মাউন্ড এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে। গতকাল বিকাল ৪টায় ওই ছাত্রী হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান বলে খবর আসে। এ নিয়ে দেখা দেয় রহস্য। পালানোর পর হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বিকাল ৪টা ৬ মিনিটে মোটরসাইকেল যোগে এক যুবকের সঙ্গে মার্জিয়া আক্তার ঊর্মি সুনামগঞ্জ রোড দিয়ে চলে যাচ্ছেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীকে খোঁজে বের করে। তাকে নেয়া হয় প্রক্টর অফিসে। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এদিকে ছুরিকাঘাতে নিহত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেন্দ্রীয় মাঠে জানাযা শেষে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমিনা পারভীন, প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল, সাবেক প্রক্টর আলমগীর কবির, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করেন লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বুলবুল হত্যায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার দাবি জানান। সেইসঙ্গে তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। এদিকে বুলবুল হত্যার বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিসমূহ হলো- অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদেরকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, ক্যাম্পাসে সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা এবং কাম্পাসের নিরাপত্তা প্রদানে অবহেলার দায়ভার গ্রহণ করে প্রশাসনকে সুস্পষ্ট জবাবদিহিতা করতে হবে। বুলবুলের জানাযা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান বলেন, বুলবুল আহমেদ এর খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা প্রদান এবং ক্যাম্পাসে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। খুনিদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মারফত জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা দিয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানায় একটা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং-২৮। ৩০২ ধারায় এ মামলা করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন সর্বক্ষণ তৎপর আছে। যতদ্রুত সম্ভব অপরাধীদের যাতে খুঁজে বের করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা যায়। দায়েরকৃত মামলায় বহিরাগত তিনজনকে সন্দেহজনক ভাবে আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় সোমবার রাতে মামলাটি করেন। বুলবুলের বুকের বামপাশে ছুরিকাঘাতে প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয় বলে মামলায় বলা হয়েছে। এদিকে অপরাধীদের শনাক্ত করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটিতে রয়েছেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমিনা পারভীন, শাহপরাণ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান খান, লোক প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম ও সহকারী প্রক্টর আবু হেনা পহিল। সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে গাজীকালুর টিলায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন বুলবুল আহমেদ নামের ওই শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বুলবুল আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শাহপরাণ হলের ২১৮নং কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি নরসিংদী সদরের নন্দীপাড়া গ্রামে।