ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

রপ্তানি-রেমিট্যান্সে উন্নতি, ইতিবাচক রিজার্ভ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১১ নভেম্বর ২০২৪, সোমবারmzamin

গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অর্থাৎ টানা তিন মাস ধরে ইতিবাচক ধারায় রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। পাশাপাশি বেড়েছে রপ্তানি  আয়। মূলত এই দুই সূচক উন্নতির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। এতে আবারো ২০ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে রিজার্ভ। অক্টোবর শেষে যা ছিল ১৯.৮৪ বিলিয়ন ডলারে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ১৩৭ কোটি ডলার পরিশোধের পর গত ৯ই সেপ্টেম্বর ১৯.৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। এর আগে যা ২০.৫৫ বিলিয়ন ছিল। এ ছাড়া টাকার বিপরীতে ডলারের দর স্থিতিশীল রয়েছে। 

অর্থনীতিবিদরা বলেন, গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তারা সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। এতে প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স আসা বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে রপ্তানি আয় বেড়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর তদারকির কারণে অযৌক্তিক আমদানি বন্ধ হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে নতুন করে ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিলেছে। সব মিলিয়ে রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণও বাড়ছে। 

রপ্তানি আয় বেড়েছে: গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২০.৬৫ শতাংশ বেড়ে ৪.১৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে এটি ছিল ৩.৪২ বিলিয়ন ডলার। রোববার বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এই তথ্য প্রকাশ করেছে। ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরের মধ্যে রপ্তানি ১০.৮০ শতাংশ বেড়ে ১৫.৭৮ বিলিয়ন হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৪.২৪ বিলিয়ন ডলার।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় ১১.৩৮ শতাংশ বেড়ে ১২.৮১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ১১.৫০ বিলিয়ন ডলার। ওভেন পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ১০.৪৮ শতাংশ বেড়ে ৫.৬০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যেখানে নিট পণ্যের রপ্তানি আয় ১২.০৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.২০ বিলিয়ন ডলারে। অক্টোবর মাসে পোশাক খাত ৩.২৯ বিলিয়ন আয় করেছে, যা গত বছরের চেয়ে ২২.৮০ শতাংশ বেশি। পোশাক খাত আয়ের প্রবৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কারণ এ খাতটি জাতীয় রপ্তানিতে সর্বোচ্চ অবদান রাখে।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির জন্য খাতটির নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্থায়ী হওয়া উচিত। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আমাদের আন্তরিক আহ্বান।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, অক্টোবরে আটকে থাকা পণ্য পাঠানো হয়েছিল, যা রপ্তানি আয়কে তীব্রভাবে বাড়িয়েছে। তবে প্রবৃদ্ধির প্রবণতা সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য আমাদের আগামী কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। কারণ সেক্টরে অস্থিরতা ছিল এবং ক্রেতারা কাজের অর্ডার দিতে ধীরগতিতে চলছিলেন বলে জানান তিনি। 

বাড়ছে রেমিট্যান্স: 
গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশ জুড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রেক্ষাপটে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাবে না বলে হুমকি দেন প্রবাসীরা। আন্দোলনে ছাত্রদের গুলি করে হত্যার প্রতিবাদ হিসেবে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইনও করেন অনেক প্রবাসী। যার প্রভাব পড়েছিল প্রবাসী আয়ে। 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। যা ছিল এর আগের ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এরপর নতুন সরকার গঠনের পর আবার দেশ গঠনে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন শুরু করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর ফলে প্রবাসী আয় বাড়তে শুরু করে। আগস্ট মাসে প্রবাসী আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২২২ কোটি ডলারে (২.২২ বিলিয়ন)। সেপ্টেম্বর মাসে আসে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার, যা ছিল ৪ বছরের মধ্যে একক মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এরপর সবশেষ অক্টোবর মাসে আসে ২৪০ কোটি (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, এটা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিক। আশা করছি, রেমিট্যান্স বাড়ার এ প্রবাহ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। 

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের প্রথম ৯ দিনে ৬৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে বৈদেশিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, অক্টোবরের একই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ৭৩ কোটি ৯৮ লাখ ডলার, যা চলতি নভেম্বরের রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমার ইঙ্গিত দেয়।

ইতিবাচক রিজার্ভ: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। তবে নিয়ন্ত্রণ দুর্বলতা ও দুর্নীতির কারণে অর্থ পাচার ব্যাপক বেড়ে যায়। বাড়তি চাহিদা মেটাতে ওই সময় থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি শুরু করে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমে যায়। তবে গত ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করছে না। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ৬ই নভেম্বর পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ২ হাজার ৫৭৩ কোটি ডলার বা ২৫.৭৩ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২ হাজার কোটি ডলার (২০ বিলিয়ন)। গত মাসের শুরুর দিকে অর্থাৎ ২রা অক্টোবর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪.৭৪ বিলিয়ন এবং বিপিএম-৬ ছিল ১৯.৭৬ বিলিয়ন। 
বাংলাদেশের বর্তমানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় চার মাসের আমদানি দায়ের সমান। একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তিন মাসের আমদানি দায় মেটানোর খরচের নিচে নামলে তা ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। আর ৬ মাসের বেশি রিজার্ভ থাকলে তা স্বস্তিদায়ক হিসেবে গণ্য করা হয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, এখন আর ডলারের কোনো সংকট নেই। যে কেউ যেকোনো ব্যাংকে গিয়ে এলসি খুলতে পারবেন। টাকা না পেলেও এখন ব্যাংকে ডলার পাওয়া যাবে।

পাঠকের মতামত

আলহামদুলিল্লাহ।

মোঃ রেজোয়ান হোসেন।
১১ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৬:২১ অপরাহ্ন

Everything is going OK. We need to wait for getting benefit of 2nd independence

Md. Anisur Rahman
১১ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৩:৪০ অপরাহ্ন

উপদেষ্টাগন উন্নয়ন প্রকল্প গুলোর তদারকি করছে না । অতীত দুর্নীতি অনুসন্ধান, ভবিষ্যত দুর্নীতি রোধ নিয়ে কোন কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না । তারা ব্যস্ত ট্রেনের টিকিট, সেন্টমার্টিনের পাশ নিয়ে । কাজের লোক কি নাই ?

Monir
১১ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

দেশ পরিচালনাকারীরা সৎ নাহলে দেশের মানুষের ভোগান্তি বাড়ে।

লিটন
১১ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status