ঢাকা, ১৮ জুন ২০২৫, বুধবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

আলেমদের ৯ দফা দাবি

স্টাফ রিপোর্টার
৬ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার
mzamin

তাবলীগ জামাতের মারকাজ কাকরাইল মসজিদ, বিশ্ব ইজতেমার ময়দান নিয়ন্ত্রণসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন ওলামা-মাশায়েখরা। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে এ দাবি জানান তারা। ‘ওলামা-মাশায়েখ বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে আয়োজিত সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও তাবলীগ জামাতের বিপুলসংখ্যক কর্মী অংশ নেন। সম্মেলনে অংশ নিতে ভোর থেকেই তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে শুরু করেন। সমাবেশ শুরুর আগেই উদ্যান ও আশপাশের সড়কে জনস্রোত ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। সমাবেশে সারা দেশ থেকে আসা ৬৫ জন আলেম বক্তব্য রাখেন। 
সম্মেলন থেকে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের যাবতীয় কার্যক্রম ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে করাসহ ৯ দফা দাবি জানান ওলামা-মাশায়েখরা। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা। সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মাওলানা মাহফুজুল হক।
৯ দফা দাবির মধ্যে বলা হয়, দেশে কওমি মাদ্রাসাগুলো দারুল উলুম দেওবন্দের অনুকরণে শতাব্দীকাল ধরে দ্বীনি শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশাসন এবং সরকারদলীয় লোকজন নানাভাবে হয়রানি ও হস্তক্ষেপ করেছিল। আমরা লক্ষ্য করেছি ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরও কওমি মাদ্রাসাগুলোর ওপর ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘাপটি মেরে থাকা একটি বিশেষ মহল সুকৌশলে হস্তক্ষেপের পাঁয়তারা করে চলছে। আজকের মহাসম্মেলন থেকে আমরা এ জাতীয় সকল হয়রানি ও হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জোর দাবি জানাচ্ছি। 
সাধারণ শিক্ষা সিলেবাসের সর্বস্তরে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। 
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মজলুম আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। 
২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে রাতের আঁধারে সারা দেশ থেকে আগত নবীপ্রেমিক নিরীহ ছাত্র-জনতা ও মুসল্লিদের ওপর বর্বরোচিত ও নৃশংস গণহত্যায় দোষীদেরকে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় এনে বিচার কার্যকর করতে হবে। 
সারা দেশের আলেম, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার ওপর দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
এ ছাড়া ২০১৮ সালের পহেলা ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দানের জোড়ের প্রস্তুতিমূলক কাজে অংশগ্রহণকারী মাদ্রাসার নিরীহ ছাত্র-শিক্ষক এবং সাধারণ তাবলীগ সাথীদের ওপর সাদপন্থিরা পুলিশ প্রশাসনের গুটিকয়েক অফিসারের সহযোগিতায় নৃশংস হামলা চালায়, আজকের এ মহাসম্মেলন থেকে উক্ত হামলাকারী ও তাদের সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানানো হচ্ছে। স্বঘোষিত আমীর মাওলানা সাদ কোরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা, নবী-রাসুল ও সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদা-বিশ্বাসবিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। কোনো অবস্থাতেই মাওলানা সাদ সাহেবকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া যাবে না। 
ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ি নেযামে পরিচালিত বিশ্ব ইজতেমা এক পর্বে আয়োজন করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার, তাই আগামী বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বেই অর্থাৎ প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি, ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭, ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি আজকের এ মহাসম্মেলন থেকে ঘোষণা করা হলো। এ ব্যাপারে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের যাবতীয় কার্যক্রম ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ি নেযামে পরিচালিত হবে, উক্ত স্থানে সাদপন্থিদের কোনো কার্যক্রম চালাতে দেয়া হবে না। 
কাদিয়ানীদের অবিলম্বে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং সে সঙ্গে কাদিয়ানীদের ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার নিষিদ্ধ করারও জোর দাবি জানাচ্ছে আজকের এ মহাসম্মেলন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি খলিল আহমদ কাসেমী বলেন, টঙ্গী ময়দান ওলামায়ে কেরামদের হাতে থাকবে। কাকরাইল মসজিদ ওলামায়ে কেরামদের তত্ত্বাবধানে চলবে। যারা ওলামায়ে কেরামদের কথা মানে, তাদেরকেই এখানে আসতে দেয়া হবে। যারা বিরোধিতা করবে তাদের এখানে আসতে দেয়া হবে না। বরদাস্ত করা হবে না।
সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ্‌ মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। তিনি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বও করেন। 
মহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের বর্তমান মুরব্বি মাওলানা সাদ বিভিন্ন সময় কোরআন, হাদিস, ইসলাম, নবী-রাসুল, নবুয়ত, সাহাবায়ে কেরাম এবং শরয়ী মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। তার বক্তব্যগুলো কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী, যা মেনে নেয়া যায় না।
তিনি বলেন, দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে তার চিন্তাগত বিচ্যুতি ও বিচ্ছিন্নতা এবং অনেক বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও জুমহুরের মুত্তাফাকা তথা ঐক্যমত সমর্থিত মাশাআল্লাহ ও মাযহাবের খেলাফ করার কারণে শরিয়ত মতে তার এতায়াত জায়েজ নেই। তার এসব আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য দারুল উলুম দেওবন্দসহ বিশ্ব আলেমদের কাছে তিনি চরম বিতর্কিত হয়েছেন। আলেমরা দায়িত্ব নিয়ে তাকে সংশোধন করার চেষ্টা করেছেন। তিনি আলেমদের পরামর্শ গ্রহণ করে নিজের বক্তব্য সংশোধন করতে রাজি হননি।
মহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, সরকারের প্রতি আমার দাবি হলো, যতদিন মাওলানা সাদ তার গোমরাহী বক্তব্য থেকে তাওবা না করবে, ততদিন তাকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া যাবে না। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা আলেমদের তত্ত্বাবধানে শুরায়ী নেজামে পরিচালিত হবে। কাকরাইল মারকাজের কার্যক্রম ওলামায়ে কেরামে জিম্মাদারিতে চালু রাখতে হবে। ব্যক্তি মাওলানা সাদের কারণে ছাত্র-জনতা ও আলেম-ওলামাদের কোরবানির বদৌলতে অর্জিত স্বাধীন নতুন এই বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হোক এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেকায়দায় পড়ুক আমরা চাই না। আমি আশা করি সার্বিক বিবেচনায় সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
সকাল ৯টা থেকে সম্মেলন শুরু হয়। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশে বিপুলসংখ্যক  নেতাকর্মী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী জমায়েত হন। এতে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। 
সম্মেলনে, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আজহারীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন আল্লামা খলিল আহমাদ কাসেমী, আল্লামা আব্দুল হামিদ, মাওলানা শেখ আহমাদ, মাওলানা রশিদুর রহমান ফারুক, আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান, আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা আবু তাহের নদভী, মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মুফতি জসিম উদ্দিন, মুফতি ফয়জুল্লাহ মাদানী নগর, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ হাটহাজারী, মাওলানা মুস্তাক আহমাদ, মাওলানা আনোয়ারুল করীম, মাওলানা দিদার, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মাদপুর, মুফতি মুহাম্মাদ আলী, মাওলানা খোবাইব যিরি, মাওলানা জাফর আহমাদ, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী, মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুব, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সা’দী, মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, মাওলানা শাব্বির আহমাদ রশীদ, মাওলানা হবিবুর রহমান কাসেমী, মুফতি বশিরুল্লাহ, মুফতি মুনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা ইউনুস, মাওলানা আব্দুল হালিম, মাওলানা আনাস, মাওলানা হেলাল উদ্দিন, মাওলানা শওকত হোসাইন সরকার, মাওলানা জালালুদ্দিন, মাওলানা হাসান জামিল, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ ফরিদী,  মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মাওলানা লোকমান মাজহারী, মাওলানা আব্দুল বছীর, মাওলানা আব্দুল্লাহ, মাওলানা সাইদ নূর, মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, মুফতি জাবের কাসেমী, মাওলানা জহুরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল হক আজাদ, মাওলানা মাহবুব এলাহী উজানী, মাওলানা বশির আহমাদ, মাওলানা আকরাম আলী, মাওলানা নাসিরুল্লাহ, মাওলানা হামেদ জাহেরী, মাওলানা লেহাজ উদ্দিন, মাওলানা মাকবুল হোসাইন, মাওলানা আলী আকবার প্রমুখ।

 

পাঠকের মতামত

সকল ধরনের জনসভা সরকারী ছুটির দিন এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করা উচিত।

মোঃ আনোয়ার হোসেন।
৬ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন

এখন সরকারের সংস্কার কার্যক্রম পরিকল্পিত সময়ে সম্পন্ন করতে স্থিতিশীলতা বেশি বেশি দরকার । অথচ সবাই দাবী নিয়ে হট্টগোল করছে। শেখ হাসিনার সময় দাবি উত্থাপন করতে পারল না ? সংস্কার সম্পন্ন হলে অনেক দাবি এই সংস্কারে পূর্ণ হবে । আলাদা দাবি জানানোর দরকার হবে না ।

Kazi
৬ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৭:৫৯ পূর্বাহ্ন

আঙুল নাড়িয়ে কথা বলার দিন শেষ। সচিবালয়ে হুমকি ধমকি দিয়ে কথা বলে জাতীয় বেয়াদব পরিনত কালো পাগড়ি ওয়ালার সন্ত্রাসী ইতি পুর্বে টংগী ময়দানে ২০১৮ তে সবাই দেখেছেন।তখন ফ্যাসিবাদের সাহায্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল এই সাদ ইতায়াতিরা। এবার আস বাবুরা তোমাদের বুবুজানের সাথে ইন্ডিয়া প্যাকেট করে পাঠিয়ে দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ।

Mahmud Habib
৬ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৬:৩৪ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status