প্রথম পাতা
প্রেসিডেন্টের বক্তব্য মিথ্যাচার, শপথ লঙ্ঘনের শামিল
স্টাফ রিপোর্টার
২২ অক্টোবর ২০২৪, মঙ্গলবার
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তার কাছে নেই বলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে বক্তব্য দিয়েছেন তা মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তার এ বক্তব্য শপথ ভঙ্গের শামিল এবং তার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কিনা- সেটা নিয়ে সরকার আলোচনা করবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি। এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং উনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। কারণ, উনি নিজেই ৫ই আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী উনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এরপর সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপদেশমূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে উনার (রাষ্ট্রপতি) কাছ থেকে আপিল বিভাগের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়- এই পরিস্থিতিতে করণীয় কি আছে? এটার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের যিনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবং অন্য সব বিচারপতিরা মিলে ১০৬-এর অধীনে একটা মতামত প্রদান করেন রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের ভিত্তিতে। সেটার প্রথম লাইনটি হচ্ছে, দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন...। তারপর অন্যান্য কথা।’
‘এই রেফারেন্সটিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতির স্বাক্ষর আছে’ বলেন আসিফ নজরুল।
‘এই যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে যে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এই মতামতের ভিত্তিতে একটা নোট আমরা মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে প্রেরণ করি। ?রাষ্ট্রপতি এই অভিমতটা দেখেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। এরপর তিনি নিজেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন।’
আসিফ নজরুল বলেন, একের পর এক কার্যাবলীর মধ্যদিয়ে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত উনি পুরো জাতির কাছে বিভিন্নভাবে এটা নিশ্চিত এবং পুনর্বার নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। এখন প্রায় আড়াই মাস পরে যদি উনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দেননি, এটা এক ধরনের স্ববিরোধিতা হয়, ওনার শপথ লঙ্ঘন হয়। এ পদে থাকার আর ওনার যোগ্যতা আছে কিনা, সে সম্পর্কে প্রশ্ন আসে।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে- আপনার যদি শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা না থাকে বা আপনি গুরুতর অসদাচরণ করেন, তখন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আপনি থাকতে পারেন কিনা সেটা নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আমাদের সংবিধানে রয়েছে।’
তিনি বলেন, একজন সর্বোচ্চ পদে থাকা মানুষ পুরো জাতির সামনে ভাষণ দিয়ে বলেছেন-প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এবং উনি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। এটা বলার পর, এর আলোকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে অভিমত চাওয়ার পর, সেই অভিমতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের নিয়োজিত প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অন্য বিচারকরা মিলে যে চিঠির প্রথম লাইলে লিখেছেন যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। যেটা উনি গ্রহণ করেছেন। উনি সিন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এত কিছুর পর উনি (রাষ্ট্রপতি) এটা কীভাবে বলতে পারেন, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। আমাদের বক্তব্যে অত্যন্ত পরিষ্কার। উনি স্পষ্টভাবে বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ জমা দিয়েছেন, এটা উনি গ্রহণ করেছেন। এখন তার স্ববিরোধী কথা বলার সুযোগ নেই। উনি যদি ওনার বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে তার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কিনা সেটা, আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, পদত্যাগ করলে উনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির দপ্তরে থাকার কথা। এবং বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এটা নিয়ে কোনো আদালতের প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। এটা উনার কাছে। উনি নিজে বলেছেন- এটা উনার কাছে জমা দেয়া হয়েছে। উনি এটা গ্রহণ করেছেন। এখন উনি যদি বলেন নাই। তাহলে উনি কী করেছেন পদত্যাগপত্র। তাহলে আপনারা উনাকে জিজ্ঞাসা করবেন। উনি যদি বক্তব্যে অটল থাকেন বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টামণ্ডলীতে আলোচনা হতে পারে। তবে উপদেষ্টামণ্ডলীতে কি সিদ্ধান্ত নেয়, আমি এখন বলতে পারি না। জাতির সামনে বলা কথা নিয়ে যদি বিতর্ক সৃষ্টি করেন, সেটা তো অসদাচরণের পর্যায়ে পড়ে। তখন এই প্রশ্ন আসে আপনার মানসিক সক্ষমতা আছে কিনা রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে। এ প্রশ্নগুলো আসার সুযোগ তিনি তৈরি করে দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেছেন, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ-সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারটি রোববার পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়।
পাঠকের মতামত
নিজ থেকে পদত্যাগ না করলে অপসারনের ব্যবস্থা করুন।
রাষ্ট্রপতি মিথ্যা বলেছেন, ঠিক আছে। ৫ আগস্ট তো রাষ্ট্রপতি গণভবনে যাননি। প্রধানমন্ত্রীও বঙ্গভবনে আসেননি। তাহলে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে এসেছে কে? বর্তমান সরকার সেটা প্রমাণ করে জাতিকে সত্যটা জানালে অসুবিধা কোথায়?
Chuppu must be held responsible for lying, and hiding, losing, or destroying the resignation letter of fascist Hasina, which is an extremely important official document.
রাস্ট্রপতি মিথ্যাচার করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।
৫ই জুলাই প্রেসিডেন্ট ভাযনে বললেন প্রধানমনএী উনার কাছে পদত্যাগ করেছেন এখন বললেন প্রমান নেই কোনটা সত্য!!
আমরা সব করতে জানি চুপ্পুকে টেনে নামাতে ও জানি।যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করে।
Chuppu must be held responsible for lying, and hiding, losing, or destroying the resignation letter of fascist Hasina, which is an extremely important official difficult.
নিজ থেকে পদত্যাগ না করলে অপসারনের ব্যবস্থা করুন।