ঢাকা, ১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

রপ্তানি রেমিট্যান্সে ইতিবাচক রিজার্ভ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১২ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার
mzamin

গত ৫ই আগস্টের শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তারা সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। এতে প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স আসা বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে শীর্ষ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের পরও গত মাসে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৬.২৭ শতাংশ। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর তদারকির কারণে অযৌক্তিক আমদানি বন্ধ হয়েছে। সব মিলিয়ে রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণও বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

বাড়ছে রেমিট্যান্স: গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশ জুড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রেক্ষাপটে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাবে না বলে হুমকি দেন প্রবাসীরা। প্রতিবাদ হিসেবে দেশে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করেছেন অনেক প্রবাসী। যার প্রভাব পড়েছিল প্রবাসী আয়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। নতুন সরকার গঠনের পর আবার দেশ গঠনে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন শুরু করেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি। ফলে আবারো প্রবাসী আয় বাড়তে শুরু করে। আগস্ট মাসে দেশে প্রবাসী আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২২২ কোটি ডলারে (২.২২ বিলিয়ন)। গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৮ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)। কোনো একক মাসে এত প্রবাসী আয় গত ৪ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গত জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৫৪ কোটি ডলার এবং তারও আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯১ কোটি ৩৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৩ কোটি ডলার।

রপ্তানি বাড়াছে: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পণ্য রপ্তানির হিসাব অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে ৩৮৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩২ কোটি ডলার। এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, গত জুলাইয়ে ৩৮২ ও আগস্টে ৪০৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তখন রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৩ ও ৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথম ৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১ হাজার ১৭৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৮৯ শতাংশ বেশি।

বাড়ছে রিজার্ভ: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ই অক্টোবর গ্রস (মোট) রিজার্ভ ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ডলার বা ২৪.৯৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ১ হাজার ৯৮২ কোটি ডলার (১৯.৮২ বিলিয়ন)। গত সপ্তাহে অর্থাৎ ২রা অক্টোবর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪.৭৪ বিলিয়ন এবং বিপিএম-৬ ছিল ১৯.৭৬ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে রিজার্ভ সামান্য বেড়েছে। গ্রস রিজার্ভ ও বিপিএম-৬ এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। দেশে চলমান সংকট কাটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করার ঘোষণা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্তু চাহিদা ঠিক রাখতে গিয়ে প্রতিশ্রুতি উপেক্ষা করে চলতি সেপ্টেম্বরেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যদিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। তবে এখন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অনেকটা বন্ধ আছে।

এ বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বৈশ্বিক আর্থিক সংকটে আমাদের সমস্যা হয়নি, আমরা ভাগ্যবান। চার-পাঁচটি পরিবার ব্যাংক থেকে ২ লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এতে অর্থনীতিতে মন্দা নেমে আসতে পারতো, সেটা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করলে ৬ মাস পর শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হয়ে যাবে। এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। এ জন্য আমাদের কিছুদিন কষ্ট করতে হবে।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করার কারণে এখন থেকে ধীরে ধীরে রিজার্ভেরও উন্নতি হচ্ছে। সিন্ডিকেট ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর অবস্থানের কারণে ডলার বাজারে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধির ফলে রিজার্ভের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে নতুন করে ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিলেছে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status