মত-মতান্তর
ঢাকার সড়কে গতি আনিবার উপায় আছে
ফখরুল মুনীর
(৬ মাস আগে) ১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৯:০৭ অপরাহ্ন

গণপরিবহন ব্যবস্থার ক্রমাবনতি ঘটাইবার নজির হইলো প্রায় স্থবির শহর এই ঢাকা। আমাদিগের যুগ-যুগান্তরের পরিকল্পনাহীনতা, অবহেলা আর নির্লিপ্ততা ঢাকা মহানগরীকে মহাঅভিশপ্ত নগরীর পানে ঠেলিয়া দিতেছে। এইখানে বাহনের পিছনে বাহন লাগিয়া থাকে, যাইবার পথ পায় না। স্টপেজ এবং পথে যানবাহনের ভিড়। ইহাদের ভিতরেও (গণপরিবহনে) যাত্রীর ভিড়। কাহারও নড়িবার জায়গা নাই। সব যেন জট পাকানো স্থবির পদার্থ বিশেষ। পথে যানবাহন যতক্ষণ চলিতে পারে, তাহারও অধিক সময় থামিয়া থাকে। চলিয়া এবং থামিয়া উভয় অবস্থাতেই বাহনগুলো বায়ু এবং শব্দ দূষণ ঘটায়, আর বাহনের ভিতরে, বিশেষত গণপরিবহনের যাত্রী-সাধারণ দাঁড়াইয়া-বসিয়া ঘামে ভিজিয়া কাহিল হয়। দেহের রোগ বাড়ায়।
ঢাকার সড়কে পথিক যাহারা, তাহারা গণবাহনের ভিতরে থাকিলে ক্লান্ত হইয়া নির্জীব ও নিস্তেজ; আর এই অবস্থা হইতে মুক্তি পাইতে বাহন হইতে নামিয়া দিশাহারা ও উদভ্রান্ত। কারণ হাঁটিবার মতো ফুটপাত নাই। মানুষ তাহার সকল কর্মশক্তি আর উদ্যম চলিবার পথে হারাইয়া যখন অফিসে যায় কিংবা ঘরে ফিরে, তখন কোথাও সে স্বাভাবিক নহে। তখন সে অন্য মানুষ।
মানুষের এই যে চরম দশা, ইহার প্রতিকার কি খুব কঠিন? আমার মতে, কঠিন নহে মোটেই। পথে যাতায়াত করিয়া আমার যেই অভিজ্ঞতা হইয়াছে, তাহাতে নিশ্চিত করিয়া কহিতে পারি, যানজটের আসল কারণ পরিকল্পনাহীনতা। বিশেষ করিয়া যানবাহনের সংখ্যা এবং রুট পরিকল্পনার ত্রুটি। ইহা ছাড়া আরও কারণ আছে, কিন্তু মূল কারণ এই দুইটা।
সড়কের ধারণ ক্ষমতা এবং যাত্রীসংখ্যা বিবেচনা করিলে ঢাকায় এত অধিক সংখ্যক যানবাহন থাকা উচিত নহে। ' অধিক সংখ্যক যাত্রীর জন্য অধিক সংখ্যক বাহন' থাকা মোটেই জরুরি নহে। দরকার এমন সংখ্যক যানবাহন, যেগুলো পথে ভিড় না বাড়াইয়া কাঙ্ক্ষিত গতিবেগে চলিবে এবং অন্যের চলিবার উপায় রাখিবে। এক্ষণে প্রশ্ন, তাহা হইলে নির্দিষ্ট দূরত্বের রাস্তায় কত আসনের, কত সংখ্যক গণপরিবহন থাকিবে এবং স্টপেজ থাকিবে? একটা সহজ মডেল দিয়া বুঝিবার চেষ্টা করা যাইতে পারে। ইহাকে মডেল না বলিয়া মডেলের প্রাথমিক ধারণাও বলা যাইতে পারে।
প্রস্তাবিত মডেল :
ধরা যাক একটা বাসরুটের দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার। যদি গড়ে ৭৫০ মিটার অন্তর স্টপেজ থাকে তাহা হইলে স্টপেজ ১৫ সংখ্যক হইবে (শুরু এবং শেষ স্টেশনসহ)। যদি প্রতি স্টপেজ হইতে মিনিটে গড়ে ৫ জন যাত্রী উঠে এবং ৫ জন নামে, তাহা হইলে দুই মিনিট অন্তর একটা বাস আসিয়া এক মিনিট থামিয়া (মোট ৩ মিনিটে) অন্তত ১০ জন যাত্রী উঠাইতে এবং নামাইতে পারিবে। ৩০ আসন বিশিষ্ট একটা বাস যাত্রারম্ভে ২০ জন যাত্রী লইলে ৪৫ মিনিট সময়ে ( স্টেশন হইতে যাত্রা শুরুকে ০ মিনিট ধরিলে ৪২ মিনিট ) ১৬০ জন যাত্রীকে সেবা দিতে পারিবে। এই ক্ষেত্রে বাসের গতিবেগ থাকিবে ঘণ্টায় ১৪.২৯ কি.মি। ( স্টপেজ বিরতি যদি কমাইয়া আনা যায়, তাহা হইলে গড় গতিবেগ আরও বাড়িবে)।
এইবার আসল প্রশ্ন, ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রুটে কয়টা বাস থাকিবে? যাওয়া এবং আসায় রুটের যানবাহন বিরামহীন রাখিতে মাত্র ৩০ (ত্রিশ) খানা বাস হইলেই যথেষ্ট। প্রতিটি বাস ঘণ্টায় ২২৯ জন যাত্রীকে সেবা দিলে ৩০টা বাস ঘণ্টায় ৬৮৫৭ জনকে সেবা দিতে সক্ষম হইবে। অর্থাৎ, দিনে (১২ ঘণ্টায়) ৮২,২৮৬ জন সেবা পাইবে। পুরো ঢাকা শহরে ৪০ টি রুট নির্ধারণ করিয়া যদি গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়িয়া তোলা যায় তাহা হইলে এই মডেল অনুযায়ী মাত্র ১২০০ বাস দিয়া ঘন্টায় ২,৭৪,৮০০ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব। দিনের (১২ ঘন্টায়) হিসাবে যাহা ৩২,৯৭,৬০০ (বত্রিশ লক্ষ সাতানব্বই হাজার ছয়শত)।
১২ ঘণ্টায় কেবলমাত্র বাসেই যদি প্রায় তেত্রিশ লক্ষ যাত্রী বহন সম্ভব হয়, তাহা হইলে অন্যান্য বাহনের সমর্থন লইয়া ঢাকায় পথচলা আরও নির্বিঘ্ন করা সম্ভব। তবে সবই একটা সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় করিতে হইবে।
সমস্যা চিহ্নিত করিয়া নিতে হইবে আরও পদক্ষেপ :
ঢাকার কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থাই নহে, অপরাপর নাগরিক সুবিধা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট করিয়া পুরো নগরীর জনজীবনকেই দুর্বিষহ করিয়া তোলা হইয়াছে। ইহার নিরসনকল্পে কিছু জরুরি কাজ করা দরকার। যেমন, ভরাট করা সকল খাল ফিরাইয়া আনিতে হইবে। খাল সম্প্রসারণের প্রয়োজনে ভূমি অধিগ্রহণ করিয়া নতুন খাল নির্মাণ করিতে হইবে। খালসমূহ নদীর সহিত যুক্ত করিয়া যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা রাখিতে হইবে। এই ক্ষেত্রে নদী উদ্ধার ও খনন করা জরুরি। খাল ও সকল প্রধান সড়কপ্রান্ত ছায়াদায়ী বৃক্ষ রোপণের দ্বারা পথচারীবান্ধব করিয়া তুলিতে হইবে। ইহাতে নদীপাড় ও সড়কপ্রান্ত উভয়ই রক্ষা পাইবে।
নদী-খাল ও সড়কের মেলবন্ধনের দ্বারা ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়িয়া তুলিতে হইবে। কেবল ঢাকা নহে, সারা বাংলাদেশে এই ধারণার প্রয়োগ হইতে পারে। ইহা ছাড়াও ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার ট্রাম লাইন নির্মাণ করা যাইতে পারে। বিশেষ প্রয়োজনের নিরিখে শ্রমিকঘনপথেও ট্রাম লাইন থাকিতে পারে। এই বাহনগুলো হইতে হইবে সস্তা ও সাশ্রয়ী। মনে রাখিতে হইবে, চলাচল সহজ ও সাশ্রয়ী হইলে উৎপাদনশীলতা অনেক বৃদ্ধি পায়।
সড়কের ধরন এবং ব্যবহার কিরূপ হইবে:
(১) প্রত্যেক স্টপেজে বাস থামাইতে থাকিবে 'বাস বে'। চলার পথ আটকাইয়া কোনো অবস্থাতেই বাস থামিতে পারিবে না।
(২) প্রতি রুটের শুরু এবং শেষে বাসের সহজ ইউ-টার্নের ব্যবস্থা থাকিবে; ইহার জন্য প্রয়োজনে সড়কের ডিভাইডার এবং আইল্যান্ড নতুন করিয়া বানাইতে হইবে।
(৩) প্রয়োজন অনুযায়ী রুটের দৈর্ঘ্য নির্ধারিত হইবে;
(৪) সড়কের প্রশস্ততা সর্বত্র প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ষিত হইতে হইবে। যেইখানে স্টপেজ, ইউলুপ, ইউ-টার্ন, ওভারপাস এবং ফ্লাইওভার থাকিবে সেইখানেও কোনোক্রমে সড়কের সংকোচন ঘটানো যাইবে না।
(৫) সড়কের প্রতিটি মোড়ের বাম লেইন সচল রাখিতে কঠিন ব্যবস্থা নিতে হইবে।
(৬) গম্যতা এবং যাত্রী সংখ্যার বিবেচনায় বাহনের আকার ও সিট সংখ্যা নির্ধারিত হইবে। বড় সড়কে দ্বিতল বাস চলিবে।
(৭) এক রুটের বাহন অন্য রুটে প্রবেশ করিবে না এবং একাধিক রুটের বাহন এক স্টপেজ ব্যবহার করিবে না। প্রয়োজন হইলে অনতিদূরে পৃথক স্টপেজ থাকিতে পারিবে (উদাহরণ: গাবতলী হইতে ফার্মগেট অবধি যদি একটা রুট হয় এবং ফার্মগেট হইতে যাত্রাবাড়ী যদি আরেকটা রুট হয়, তাহা হইলে একজন যাত্রী গাবতলী হইতে যাত্রাবাড়ী যাইতে ফার্মগেট আসিয়া বাস বদল করিবেন। ফার্মগেট যেহেতু একটা ব্যস্ত সংযোগস্থল বা নোডাল পয়েন্ট, সেহেতু এইখানে অন্যান্য রুটের অন্তর্চ্ছেদ ঘটিতে পারিবে। যেমন, শাহবাগ হইতে উত্তরা আবদুল্লাহপুর রুটের বাস ফার্মগেটকেও যাত্রীসেবার আওতায় রাখিবে। তবে ইহা অন্য রুটের কোনো স্টপেজ দ্বারা নহে। এইভাবে সকল ব্যস্ত এলাকা একাধিক রুটের সেবার আওতায় রাখা যাইবে)।
(৮) অপেক্ষাকৃত অপ্রশস্ত এবং মহল্লার ভিতরের সরু পথ দিয়া নির্দিষ্ট রুটে নির্দিষ্ট আসনের ব্যাটারিচালিত বাহন চলিবে। সেইখানে ঐ সকল বাহন ছোট ছোট সার্কুলার রুটে চালাইলে সরু রাস্তায় ইউ-টার্ন লইবার প্রয়োজন হইবে না। বৃত্তের কেন্দ্রের পরিবেশ নীরব থাকিবে। মহল্লার বাতাস ও শব্দদূষণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখিবার চেষ্টা থাকিতে হইবে।
রুট-দৈর্ঘ্যের সুবিধা-অসুবিধা :
দীর্ঘ রুটের অসুবিধা হইল, কোনো এক স্থানে দুর্ঘটনা কিংবা কোনো সমস্যা হইলে পুরো রুটের বাহন বন্ধ হইয়া যায়। ফলে দীর্ঘ এলাকাব্যাপী মানুষের দুর্ভোগ ছড়াইয়া পড়ে। স্বল্পদৈর্ঘ্য রুটের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা থাকিবে না। ছোট রুটে চলাচলরত পরিবহন শ্রমিকদের সহিত পথপার্শ্বে অবস্থানকারী মানুষদের চেনা-পরিচয় ও সম্পর্ক ভালো থাকে। যাহা সকলের নিরাপত্তার জন্য ভালো।
ব্যবস্থাপনা কিরূপ হইবে?
(১) একটা কোম্পানির আওতায় এক বা একাধিক রুট থাকিবে। সমগ্র ঢাকার যান চলাচল একাধিক কোম্পানির অধীনে রাখা উত্তম। ইহাতে পরিচালনার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটিবে এবং সেবা দেওয়া সহজ হইবে। আবার সকল কোম্পানি একটা কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকিবে।
(২) কোম্পানিসমূহের অন্তত ৫১+ শতাংশ শেয়ার সরকারের মালিকানায় থাকিবে। ইহাতে যাত্রী-স্বার্থ গুরুত্ব পাইবে।
(৩) যাত্রীগণও এই উদ্যোগের অংশীদার হইতে পারিবেন। কর্তৃপক্ষের অনুকূলে নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ নির্দিষ্ট মেয়াদে জমা (ফেরতযোগ্য) রাখিয়া কিংবা বিনিয়োগ করিয়া একজন যাত্রী তাহার কাঙ্ক্ষিত কিংবা সকল রুটে হ্রাসকৃত কিংবা বিনা ভাড়ায় চলাচল করিতে পারিবেন। এমনকি ব্যবসার অংশীদারও হইতে পারিবেন। ইহাতে জনসম্পৃক্ততার কারণেই যানবাহন নিরাপদ ও যত্নে থাকিবে।
(৪) ৬৫ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সীদের জন্য ফ্রি বাহন-কার্ড দেওয়া যাইতে পারে। শারীরিক প্রতিবন্ধীদেরও বিনামূল্যে ভ্রমণ সুবিধা দেওয়া উচিত। তাহা ছাড়া বিশেষ ব্যক্তি বা শ্রেণির জন্যও এই সুবিধা দেওয়া যাইতে পারে। গণপরিবহনে শিক্ষার্থীগণের জন্য অর্ধেক ভাড়া সদা কার্যকর থাকা দরকার। সরকার তাহার অংশীদারত্বের দ্বারা এই সুবিধা নিশ্চিত করিবে।
(৫) বাস এবং জলযান হইবে মানসম্পন্ন, আরামদায়ক এবং নিরাপদ। ইহাতে সড়কে ব্যক্তিগত বাহন অনেক কমিয়া যাইবে। একটা চৌকস টিম বাহনের মানরক্ষার বিষয় সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করিবে।
(৬) বিভিন্ন রুটের বাসের রঙ এবং পরিবহন কর্মীদের পোশাক বিভিন্ন হইবে। বাসের মনোগ্রাহী নামও দেওয়া যাইতে পারে। (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন রুটের বাসগুলোর চমৎকার সব নাম রহিয়াছে। যেমন, কিঞ্চিৎ, শ্রাবণ, ক্ষণিকা, আনন্দ ইত্যাদি)
এই মডেলের সম্ভাবনা ও সুবিধা :
হিসাবটা কেবল ৩০ আসনের ১২০০ বাসের যাত্রী সেবার দেওয়া হইলো। বাসের আসন সংখ্যা বেশি হইলে এবং গতি বাড়িলে বেশি সংখ্যক যাত্রী সেবা পাইবে। ইহা ছাড়া অন্যান্য পরিবহন মাধ্যম যেইগুলো রহিয়াছে, সেইগুলোর বিষয়ে হিসাবী হইলে ঢাকার রাস্তা অনেকটাই ফাঁকা এবং গতিশীল হইয়া উঠিবে। ভ্রমণ হইবে নিরাপদ, আন্তরিক এবং কার্যকর। ফুটপাত সুগম, ছায়াশীতল ও আকর্ষণীয় করিয়া তুলিতে পারিলে স্বল্পদূরত্বের গন্তব্যে মানুষ হাঁটিয়া যাইবে। মোটকথা এই ধারণা লইয়া পরিকল্পনা করিয়া আগাইতে পারিলে আরও বহু সুবিধা পাওয়া যাইবে। সেইগুলো সংক্ষেপে:
> নগরের গতি বাড়িবে;
> রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি কমিয়া যাইবে;
> পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাইবে;
> জ্বালানি ব্যয় হ্রাস পাইবে;
> যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ব্যয় কমিবে;
> উৎপাদনশীলতা বাড়িবে;
> ব্যবসায় গতি আসিবে;
> মানুষ প্রয়োজনীয় অবসর ও বিশ্রাম পাইবে;
> সুস্থতা ও কর্মশক্তি বৃদ্ধি পাইবে;
> সামাজিক যোগাযোগ বাড়িবে;
> চিকিৎসা ব্যয় কমিবে;
> পরিবহন খাতে একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান ঘটিবে;
> পরিবহন চাঁদাবাজি বন্ধ করা সহজ হইবে;
> এই ব্যবস্থার সহিত কমিউনিটি পুলিশের কর্মব্যবস্থা সহজতর হইবে;
> কর্মসংস্থান বাড়িবে;
এই কাজের কিছু সীমাবদ্ধতাও থাকিবে। যেমন :
> রুট নির্ধারণের প্রথমাবস্থায় কিছু ত্রুটি দেখা যাইবে। শোধরানোর (ট্রায়াল এন্ড এরর) মধ্য দিয়া আগাইয়া গেলে স্থিতি মিলিবে।
> 'বাস বে'র জন্য স্থান পাইতে সমস্যা হইতে পারে। জনস্বার্থ বিবেচনায় ভূমি অধিগ্রহণ করিতেই হইবে।
> একচেটিয়া পরিবহন ব্যবসায়ীদের স্বার্থহানির কারণে প্রথম দিকে সহিংসতা ঘটিতে পারে। এই ক্ষেত্রে কঠোরভাবে শৃঙ্খলা রক্ষা করিতে হইবে।
> রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের দুর্নীতিবাজ অংশ হীনস্বার্থ চরিতার্থ করিতে এই কাজে বড় বাধা হইয়া উঠিতে পারে।
কাজ কেবল পথ লইয়াই নহে :
পথ সুগম ও গতিশীল রাখিতে ভূমি ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা লইয়াও বিভিন্ন মেয়াদি কাজ করিতে হইবে। সেবা ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের স্থানিক বিন্যাস পরিকল্পিত হইতে হইবে। যেমন, পাইকারি বাজারের সংখ্যা বৃদ্ধি করিয়া যৌক্তিক অবস্থান নিশ্চিত করিতে হইবে। (যেমন মাছ, গোশত, সবজি এবং মুদিপণ্যের পাইকারি আড়ত চারটি পৃথক এলাকায় থাকিবে। কারণ, ঐ চার পণ্যের ব্যবসা চার ধরনের ব্যবসায়ীগণ করিয়া থাকেন। তাঁহাদের এক স্থানে ভিড় করিবার প্রয়োজন নাই)
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শপিংমল, প্রভৃতির অবস্থানগত প্রভাবও পর্যালোচনা করিতে হইবে। সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাহার সন্নিহিত এলাকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষার দায়িত্ব লইবে। ইহা ছাড়া বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণের আগেও যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করিতে হইবে। এইভাবে লোক সমাগম হয় এমন কর্মকাণ্ডের জন্য স্থান নির্ধারণে সতর্ক মনোযোগ দিতে হইবে।
বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে গণমানুষের যুক্ততা ও চলাচল বিবেচনায় সময়-ব্যবস্থাপনাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমন, পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজারের সমস্ত পণ্য সরবরাহকর্ম রাত ১১:০০ টা হইতে ভোর ৭:০০ এর মধ্য সম্পন্ন করা; সকাল ৭:০০ হইতে ৮:০০ টার মধ্য প্রভাতি শাখার শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাওয়া ইত্যাদি।
পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে যাঁহারা যাহা করিবেন:
> ভূগোলবিদ: প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিচার, মানুষ-পরিবেশ সম্পর্ক এবং ভূমি-ব্যবহারের স্থানিক বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনা।
> নগর পরিকল্পনাবিদ: নগরবসতি, বাণিজ্যিক ও সেবা কেন্দ্রের বিস্তরণ এবং গণ-চলাচল ইত্যাদি বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনা।
> প্রকৌশলী: কাঠামোগত নকশা অঙ্কন, কাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ।
> অর্থনীতিবিদ: আর্থনীতিক পটভূমির বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ অভিক্ষেপ, বাজেট প্রস্তুত।
> পরিবেশবিদ: পরিবেশ সংরক্ষণ, বাস্তুসংস্থানের যত্ন, এবং দুষণের ঝুঁকি হ্রাস পরিকল্পনা।
এই কাজে পথচারী, গণপরিবহন যাত্রী (পুরুষ-মহিলা), চালক-শ্রমিক, ট্রাফিক পুলিশ প্রমুখ বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করিবেন। এখন, বসবাসযোগ্য নগরী গড়িয়া তুলিতে প্রয়োজন কেবল আমাদিগের মনে ইচ্ছা জাগানো। আমরা চাহিলেই এই দরকারি কাজটা করিতে পারি।
- ঢাকা, ৯ ই অক্টোবর, ২০২৪
পাঠকের মতামত
Immediately need to stop rickshaw on all main road in Dhaka to reduce traffic jam
কাকা, খুবই ভালো ও বাস্তবসম্মত আইডিয়াটি। তবে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলোকে সমন্বয় করতে হতে পারে: ঢাকার বাস্তবতায় গণপরিবহনের গড় গতিবেগ ১৪.২৯ কিমি নির্ধারণ করা হলেও যানজটের কারণে গতি আরও কম হতে পারে। প্রতিটি স্টপেজে যাত্রী ওঠানামার জন্য ৩ মিনিট নির্ধারণ করা হলেও, বাস্তবে এটি আরও বেশি সময় নিতে পারে। ১০ কিলোমিটার রুটে ৩০টি বাস দিয়ে যথাযথ যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জ হতে পারে এবং বাসের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়োজন হতে পারে। তাছাড়া, প্রতি ২ মিনিট অন্তর বাস আসার পরিকল্পনা যানজটের কারণে কার্যকর করা কঠিন হবে। সময় এবং দিনের বিভিন্ন সময় অনুযায়ী যাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়, যা সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যক্রমে সমস্যা সৃষ্টি করে। পাশাপাশি, বিভিন্ন বাস কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতার ফলে শৃঙ্খলার অভাব দেখা দেয়। রিকশা ও অন্যান্য যানবাহনের চলাচলও বাসের সেবা ও গতিবেগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। উপরিউক্ত আইডিয়ার সাথে নিম্নলিখিত কিছু চিন্তা করা যেতে পারে: ১. ১০০ জনের ওপর যাত্রী বহনের সক্ষমতা সম্পন্ন ডাবল, ট্রিপল ট্রেকার বাস চালু করা যেতে পারে। ২. রাস্তায় অনফিট গাড়ি অপসারণ করে পাবলিক বাস বাড়ানো এবং প্রাইভেট কার কমাতে হবে। ৩. মহাসড়ক থেকে রিকশা ও ধীর গতির গাড়ি সরিয়ে দিতে হবে। ৪. ব্যবসা, অফিস ও স্কুলের সময়ের মাঝে ৩-৪ ঘণ্টা ব্যবধান রাখা উচিত। ইন্টারসিটি গাড়িগুলো শহরের বাইরে রাখা। ৫. রাত ১২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত শুধু ট্রাক চলাচল অনুমোদন করা দরকার। ৬. ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ক্যামেরা ও এআই ব্যবহারের মাধ্যমে আইন অমান্যকারী যানবাহন শনাক্ত করা যাবে। ৭. গাড়ির চালক, হেলপার ও ট্রাফিক পুলিশের সমন্বয় বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।
অবৈধভাবে বসা ফুটপাত গুলো উঠিয়ে দিলে ঢাকা শহরের অর্ধেক যানজট কমে যাবে। বিশেষ করে গুলিস্তানের মত ফুটপাতের ব্যবসা মনে হয় পৃথিবীর কোন দেশে নেই। মানুষ ফুটপাত দিয়ে হাটতে না পেরে সড়ক দিয়ে হাটে, এতে যানজট বাড়ে ও দূর্ঘটনা ঘটে। হানিফ উড়ালসড়কের পাশে যে কাপ্তান বাজার মার্কেটের পাশে পকেট গেটে যে ফুটপাত আছে, তাতে মানুষের হাটার কোন জায়গা নেই। ফুটপাতের উপর নানান ধরনের পাখি ও কবুতরের খাচা দিয়ে ফুটপাত দখল। এটা পুরো গুলিস্তানের চিএ। তারপর সুন্দরবন মার্কেটের চারপাশে গোপালগঞ্জের গাড়ির আস্তানা, যেগুলো হাসিনার আমলে গড়ে উঠেছে। জনাব আসিফ নজরুল সাহেব একটা টিভি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন পাঁচ মাস সময় দিলে উনি ঢাকার যানজট মুক্ত করতে পারবেন। তো এখন তো আপনি খমতায়। কি করছেন যানজট নিয়ে? trafic পুলিশ এখনো ভালভাবে কাজ শুরু করে নাই, যানযটের এটাও একটা কারণ। কিন্তু ফুটপাত দখল মুক্ত কেন হচ্ছে না। জনাব আসিফ নজরুল সাহেব বলতে পারেন?
ফালতু সিস্টেম |