শেষের পাতা
বিশ্বকাপে ১০ বছর পর জয় বাংলাদেশের
স্পোর্টস রিপোর্টার
৪ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার‘কাউন্টেবল এবং মেমোরেবল’- এবারের বিশ্বকাপে এটাই বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের লক্ষ্য। আসরে তারা শুরুটা করলো তেমনই। অপেক্ষার ইতি টানলো এক দশকের, ম্যাচের হিসাবে ১৬ আর টুর্নামেন্টের হিসাবে ৪টি। ২০১৪ সালের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবার জয়ের স্বাদ পেলো টাইগ্রেসরা। গতকাল নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডকে ১৬ রানে হারায় বাংলাদেশ। এতে স্কটিশদের বিপক্ষে ৫ বারের দেখায় শতভাগ জয়ের রেকর্ডও অক্ষত থাকলো বাংলাদেশের। সোবহানা মোস্তারি, সাথী রানী শুরু এনে দেয়ার পর জ্যোতি-স্বর্ণাদের ফিনিশে লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। এরপর বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ঐতিহাসিক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ্ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে ১১৯ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ১০৩ রানে থামে স্কটল্যান্ডের ইনিংস। ৪ ওভারে ১৫ রান খরচায় ২ উইকেট নেয়া রিতু মনির হাতে ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। এরপর গত এক দশকে টানা ৪ বিশ্বকাপে কোনো জয় পায়নি টাইগ্রেসরা। আর এই দলে জাহানারা আলম বাদে বাকি সবার এটাই প্রথম বিশ্বকাপের ম্যাচ জয়। যদিও জাহানারা গতকাল একাদশে ছিলেন না।
এদিন লক্ষ্য তাড়ায় ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায় স্কটল্যান্ড। ওপেনার সাসকিয়া হোরলেকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন ফাহিমা খাতুন। তবে ক্যাথরিন ব্রাইস একপাশ থেকে রানের গতি সচল রাখেন। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ফাহিমাকে হাঁকান দুই চার। পরের ওভারে তাকে ফিরিয়ে দেন মারুফা আক্তার। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে স্কটল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেট হারিয়ে ৩১ রান।
এরপরের দুই ওভারে মাত্র ৭ রান খরচ করেন রাবেয়া আক্তার ও ফাহিমা। ইনিংসের ১০ম ওভারে আলিসা লিস্টারকে ফেরান রিতু মনি। ১০ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৯ রান ছিল স্কটিশদের।
শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশকে আটকাতে হতো ৬১ রান। এ সময় স্বর্ণা-রিতুরা দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ক্রমাগত চাপে রাখেন স্কটল্যান্ড। ১২তম ওভারে রানআউট হয়ে ফেরেন প্রিয়ানাজ চ্যাটার্জি। পরের ওভারে সেট ব্যাটার সারাহ ব্রাইসকে ফেরানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন জ্যোতি। নিশ্চিত স্টাম্পিং মিস করেন তিনি। তবে বোলাররা ঠিকই স্কটিশদের খোলসে আটকে রাখেন। ১৫তম ওভারে ড্যারসি কার্টারকে ফিরিয়ে দ্বিতীয় শিকার ধরেন রিতু। তার বিপক্ষে কখনোই স্বস্তিতে ছিলেন না স্কটল্যান্ডের ব্যাটাররা। শেষ ৫ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ৪৮ রান।
১৬ ও ১৭তম ওভারে ফাহিমা ও রিতু মাত্র ১০ রান দিলে আরও চাপে পড়ে স্কটল্যান্ড। ১৮তম ওভারে লর্না জ্যাককে ফেরান রাবেয়া। এরপর যত সময় ঘনিয়েছে তত বাংলাদেশের দিকে জয়ের পাল্লা ভারী হয়েছে। স্কটিশ অধিনায়ক সারাহ একপ্রান্তে ৪৯ রানে অপরাজিত থাকলেও দলকে জেতাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ১০৩ রানে শেষ হয় স্কটিশদের ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে ২ উইকেট নেন রিতু মনি। আর মারুফা, নাহিদা, ফাহিমা ও রাবেয়া নেন ১টি করে উইকেট।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের ইঙ্গিত দেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাথী রানী ও ফাহিমা আক্তার। তবে প্রতিবলে আক্রমণ করতে চাইলেও রানের গতি খুব বেশি ছিল না। উদ্বোধনী জুটি থেকে আসে ২৬ রান। একবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া মুরশিদা ১৪ বলে ১২ রান করে আউট হন পঞ্চম ওভারে। এরপর উইকেট আগলে রাখার চেষ্টায় প্রথম ১০ ওভারে আর উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ।
১২তম ওভারে সাথীর আউটে ভাঙে ৪২ রানের জুটি। তার ব্যাট থেকে আসে ৩২ বলে ৩ চারে ২৯ রান। পরের ওভারে তাজ নেহার নিজের ভুলে রানআউট হন। ১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ৮৬ রান। সেখান থেকে বড় সংগ্রহের দিকে আগানোর কথা বাংলাদেশের। কিন্তু সোবহানা মোস্তারি তখন আউট হলে কিছুটা ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ৩৮ বলের ইনিংসে ২ চারে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করে যান তিনি। শততম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা নিগার ১৮ বলে তোলেন ১৮ রান। এরপর রানের গতি বাড়াতে পারেননি অন্য কেউই। শেষ দুই ওভারে ১৬ রান নিলেও বাংলাদেশের মোট সংগ্রহ ১১৯ রানে থেমে যায়।