ঢাকা, ২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

দুই পুত্রকে নিয়ে লুটপাটের সাম্রাজ্য গড়েন মকবুল

রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা ও মো. মনিরুজ্জামান ফারুক, ভাঙ্গুড়া থেকে
৩ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার
mzamin

পাবনা-৩ আসনের চার বারের সংসদ সদস্য মো. মকবুল হোসেন। নিজ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। হামলা-মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে করেছিলেন নাস্তানাবুদ। অস্বস্তিকর পরিবেশে ফেলে দখল বাণিজ্য ও অনৈতিকভাবে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেন। তার এই অনৈতিক কাজের সহযোগী ছিলেন দুই পুত্র সাবেক ভাঙ্গুড়া পৌর ও উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হাসনাইন রাসেল এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইবনুল হাসান শাকিল। গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর মকবুলের দুই পুত্র লাপাত্তা।

একসময় জাতীয় পার্টির নেতা ছিলেন মকবুল। সুযোগ বুঝে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। জাপা থেকে পরপর দু’বার উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। সুবিধাবাদী এই নেতা দল বদল করে এমপি হয়েই চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুরে গড়ে তোলেন ত্রাসের রাজত্ব। এলাকায় কায়েম করেন নিজের আইন। চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুরে মানুষের কাছে ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। জাতীয় নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, দোকান দখল ও বাড়ি ভাঙচুরসহ পুলিশ দিয়ে নানা হয়রানি করেন। নির্বাচন এলে তিন উপজেলায় তার আশীর্বাদপুষ্ট নেতারাই নির্বাচিত হতেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ালে তাকে চরম মূল্য দিতে হতো। 

সূত্র মতে, এক সময় বিদেশে শ্রমিকের কাজ করতেন এমপি পুত্র রাসেল। পরে নৌকার মনোনয়নে পিতা মকবুল হোসেন এমপি নির্বাচিত হলে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বনে যান তিনি। এরপর আর  পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পিতার আশীর্বাদে ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন। এদিকে বড় ভাইয়ের এমন উত্থানে বসে থাকেনি ছোট ভাই শাকিল। তিনিও এক লাফে হয়ে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সামনে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করার কথা ছিল তার। 

স্থানীয়রা জানান, গত ১৬ বছর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল রাসেল-শাকিল ও তাদের কিছু আত্মীয়স্বজন। তাদের ক্ষমতার দাপটে এলাকার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ছিল অসহায়। এমনকি নিজ দলের একটি অংশকে আওয়ামী লীগ থেকে বিতাড়িত করার মিশন চালায় তারা। আর বিরোধী শিবিরের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে তাদের জেলে ভরার মূলহোতা ছিলেন তারা। তিনটি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। 

এ ছাড়া পশুরহাট, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, পৌর শহরের সিএনজি স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আদায় করতেন লাখ লাখ টাকা। দরবার-সালিশের নামে অসহায় মানুষের কাছ থেকে আদায় করা হতো মোটা অঙ্কের টাকা। আর তাদের এসব কাজের বুদ্ধিদাতা ও প্রধান সহযোগী হিসেবে সহযোগী কাজ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান আরিফ। সাইদুল ও আরিফ দু’জনেই এমপি মকবুলের আস্থাভাজন হওয়ায় কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন তারা।   আরিফ এখনো আত্মগোপনে থাকলেও সমপ্রতি এলাকায় ফিরেছেন সাইদুল ইসলাম। এমপি’র খুব আস্থাভাজন হওয়ায় তিনি স্থানীয় বিবি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ পদে চাকরি বাগিয়ে নেন। এদিকে এমপিপুত্র রাসেল-শাকিল ও আওয়ামী লীগ নেতা আরিফসহ ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ, চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। 
চরভাঙ্গুড়া গ্রামের আব্দুল আলীম ও ভবানীপুরের আবুল কাশেম জানান, তিন উপজেলার ঠিকাদারি কাজ থেকে শুরু করে দখল আর বিরোধীদের হয়রানি ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা ছিল তাদের নিত্যদিনের কাজ। এসব কাজের সহযোগী ছিলেন বিবি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম এবং ভাঙ্গুড়া ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহসান আরিফ। ছাত্রলীগের পাশাপাশি আরিফ পৌরসভায় উচ্চমান সহকারী হিসেবেও চাকরি করেন। এই আরিফের মাধ্যমে ঠিকাদারি সহ সকল অপকর্ম করতেন এমপি মকবুল এবং তার ছেলেরা।  

চড় ভাঙ্গুড়ার আলতাফ হোসেন খান জানান, ভাঙ্গুড়া থানার সামনে রেলের জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছেন এমপি ছেলের নামে ইবনুল অ্যান্ড বিশ্বাস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভাঙ্গুড়া বাসস্ট্যাণ্ডের জায়গা দখল করে বানিয়েছেন দোকান। শরৎনগর বাজারে রেলের জায়গা দখল করে বানিয়েছেন মার্কেট। সেখানে শতাধিক দোকান পজিশন বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শরৎনগর বাজারে খাসজমি দখল করে নির্মাণ করেছিলেন বহুতল ভবন। যার এখন নির্মাণকাজ বন্ধ।

ভবানীপুর এলাকার জাহিদ হাসান জয় ও নৌবাড়িয়ার আঁখিরুজ্জামান মাসুম জানান, ভাঙ্গুড়া স্টেশন বাজারে মহিলা মাদ্রাসার জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলেন রাসেল শিশুপার্ক। যা এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

চৌবাড়িয়া বাংলাদেশ জুট বেলিং করপোরেশনের জায়গা দখল করে প্লট আকারে বিক্রি করে দিয়েছেন এই দখলবাজরা। সেখান থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। মকবুল ও তার ছেলেরা পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 
 

পাঠকের মতামত

যত তড়াতাড়ি সম্ভব বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে এদের বিচার করে এদের কে রাজনৈতিক ভাবে অযোগ্য ঘোষনা করা উচিত ।

zakiul Islam
৪ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ৩:০৯ অপরাহ্ন

পুরো বাংলাদেশকে এরা জয় বাংলা করে দিছে।

Md Abdus Salam
৩ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৫:৩১ অপরাহ্ন

সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগাররা মায়ের পেট থেকেই ইবলিশে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়ে আসে!আওয়ামী লীগার ১০০ এর মধ্যে ১০১ টাই বেজন্মা!

Shihab Rahman
৩ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৫:৩১ অপরাহ্ন

এরা তো সর্ব গ্রাসি।

Shahadat
৩ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৪:০১ অপরাহ্ন

কাকে বাদ দিয়ে কার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করবেন এটাই তো বুঝতে পারছি না। আওয়ামী লীগের মধ্যে কি ভালো মানুষ আদৌ কি নেই? যতই নিজেকে ধোঁয়া তুলসী পাতা মনে করুক না কেন, কেউ দায় এড়াতে পারে না। এদের পলিসি ছিলো “দুনিয়াটা মস্ত বড়, খাও-দাও ফুর্তি করো, আগামীকাল বাঁচবে কি-না বলতে পারো।”

শওকত আলী
৩ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:৫৬ অপরাহ্ন

থামুন থামুন প্লিজ । মাথা ব্যাথা করছে। এরা এত পারে।

Anwarul Azam
৩ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১:২৬ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status