মত-মতান্তর
একটি অকাল মৃত্যু ও চাকরিতে প্রবেশের বয়স প্রসঙ্গে
রাকিব হাসান সেলিম
(১ সপ্তাহ আগে) ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৯:১৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন
(১)
সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসে জনগুরুত্বপূর্ণ দাবী নিয়ে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলমান আন্দোলনের নাম "চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নূন্যতম ৩৫ চাই"। আন্দোলনটি ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের ব্যানারে শাহাবাগ ও জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয় । এই আন্দোলনটি যারা শুরু করেছিল আমি তাদেরই একজন। ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমি এই আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলাম/ প্রত্যক্ষ করেছি। অত্যন্ত মানবিক ও যৌক্তিক এ দাবীটির সেই সময়ের একটি নির্মম বাস্তবতা আমি শুরুতেই তুলে ধরছি।
শহিদুজ্জামান রতন, বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষার্থী, ২০০৭-২০০৮ শিক্ষা বছরে ব্যানিজ্য অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। সার্টিফিকেট অনুযায়ী তখন তার বয়স ছিলো ২৬ বছর। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকেই রতন উদ্যোক্তা হওয়া আশা লালন করে এবং সে লক্ষ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয়বর্ষ থেকে পরিচিত এক বড় ভাইয়ের গার্মেন্টস এক্সেসোরিজ ব্যাবসায় পার্ট টাইম জব করে কিছু উপার্জনের পাশাপাশি অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করে। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে রতন ২০০৯ সালে নিজের জমানো টাকা এবং পরিবারের সহায়তায় গার্মেন্টস এক্সেসোরিজ তৈরির একটি ছোট ফ্যাক্টরি দিয়ে ব্যবসা শুরু করে এবং মাত্র ১৫ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। রতন পূর্বের অভিজ্ঞতা থাকার কারণে মাত্র ১ বছর সময়ের মধ্যে ব্যবসা থেকে আরো ১৫ লাখ টাকা প্রোফিট করতে সক্ষন হয়। ২০১০ সালের শুরুতে সে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হয় এবং ২০১১ সালের মাঝামাঝি সে সন্তানের বাবা হয়। ব্যবসায় সুনাম বৃদ্ধির কারণে এবং তার পূর্বের পরিচিতি থাকায় একটি গার্মেন্টসের মাধ্যমে ২০১২ সালে তার কাছে ১ কোটি টাকার একটি বিদেশি বায়ারের অর্ডার আসে। কাজটি সম্পন্ন করতে সে কিছু ব্যাংক লোন এবং বাবার কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থের যোগান নিশ্চিত করে। অর্ডারের কাজ সম্পন্ন করে অর্ডার প্রদানকারী গার্মেন্টসকে সে মালামাল প্রদান করে। এক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানিটির শর্তছিলো মালামাল হাতে পাবার পর গার্মেন্টসকে সে পেমেন্ট করবে এবং এরপর গার্মেন্টস রতনের ফ্যাক্টরিকে টাকা প্রদান করবে। গার্মেন্টস মালামালগুলো বিদেশি কোম্পানিকে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য রতনের! বিদেশি কোম্পাটি অভিযোগ করে তারা যে মালামাল হাতে পেয়েছে সেখানে কোয়ালিটি কন্ট্রোল ঠিক মত হয়নি, অর্থাৎ মালামালগুলো তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হয়। পরে দেখা যায় রতনের কোয়ালিটি কন্ট্রোলারের অনভিজ্ঞতার কারণেই এ ভুলটি হয়ে যায়। রতনের তখন মাথায় হাত! একদিকে ব্যাংক লোন অন্যদিকে ফ্যাক্টরি ভাড়া, স্টাফদের বেতন, এছাড়া সাংসারিক খরচ তো আছেই! গার্মেন্টস মালিকের হাতে পায়ে ধরে রতন কিছু টাকা ম্যানেজ করে দুমাসের ফ্যাক্টরি ভাড়া ও কর্মচারির বেতন মিটিয়ে ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এর প্রধান কারণ তার হাতে টাকা ছিলনা, আর দ্বিতীয়ত ডিফেক্ট প্রোডাক্ট ডেলিভারি দেওয়ার কারণে মার্কেটে তার শুনাম নষ্ট হয় এতে করে তিনি পুনরায় তিনি ব্যাংক লোন পেতেও ব্যর্থ হন। পারিবারিক ভাবে পর্যাপ্ত আর্থিক সাপোর্ট না থাকায় তার পক্ষে আর ব্যবসা চালিয়ে যাওয় সম্ভব হয়নি। ফলে ফ্যাক্টরির যন্ত্রপাতি বিক্রি করতে তিনি বাধ্য হন, আর তা দিয়ে পূর্বের ব্যাংক লোন পরিশোধ করেন। এভাবেই ভঙ্গ হয় একজন তরুণ উদ্যোক্তার স্বপ্ন!
২০১৩ সাল, রতনের সার্টিফিকেট বয়স ৩০ বছর ২ মাস, সরকারি চাকরি কিংবা প্রাইভেট ব্যাংক/বীমায় আবেদন করার বয়স তার ৩০ বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। অন্তত একটি প্রাইভেট চাকরির জন্য সে হন্নে হয়ে ছুটেছে চাকরির দরখাস্ত করছে কিন্তু ইনর্টাভির ডাক পাচ্ছে না ! কারণ তার ৩০ বছর অতিক্রম হয়ে গেছে এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে চাকরির অভিজ্ঞতার অভাব!
হতাশা রতন কোন এক মারফত চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির আন্দোলনের কথা জানতে পেরে এ আন্দোলনে সাথে যুক্ত হয়। আন্দোলনের একটি ককর্মসূচিতে তার সাথে আমার পরিচয় হয় এবং তার সাথে আমার একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। এরপর কয়েকটি কর্মসূচি আমরা একসাথে করি। এসময় রতন তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও হতাশা আমার সঙ্গে শেয়ার করে।
প্রায় বছর খানেক তার সঙ্গে আমার আর কোন যোগাযোগ ছিলনা। ২০১৫ সালে আমি তার নাম্বারে ফোন করি; ফোনের ওপাশ থেকে একজন মহিলা বলেন " ভাই, রতন আর বেঁচে নেই, গত ছয়মাস আগে হার্ট এট্যাকে ওর মৃত্যু হয়!" বুঝলাম কন্ঠটি তার স্ত্রীর। ফোনটি রেখে দিলাম, তখন আমার আর কথা বলার কোন ভাষা ছিলনা! অশ্রুসিক্ত চোখে শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম! পরে জানতে পারি অনেক চেষ্টা করে একজনের সুপারিশে সে একটি প্রাইভেট চাকরি করা শুরু করেছিলো কিন্তু তিন মাসের মাথায় কোন কারনে তার চাকরিটি চলে যায়। উদ্যোক্তা হতে না পারার ব্যর্থতা, চাকরির আবেদনের বয়সসীমা শেষ হয়ে যাওয়া এমনকি শেষমেশ পাওয়া প্রাইভেটটি চাকরিটি চলে যাওয়ার পর পারিবারিক, আর্থিক ও সামাজিক চাপে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে, যার পরিণতি একসময় তাকে অকালমৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায় রতনের মত এমন করুণ পরিণতি অনেকেরই বরণ করতে হয়েছে! বেকারত্বের অভিশাপ সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে!
(২)
বয়সসীমা বৃদ্ধির এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ছিলো ২০১১ সালে যখন সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছরে উন্নীত করা হয় তখন থেকে। এবং সেই সাথে চাকরি শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া বহাল থাকায় স্বাভাবিক চাকরি প্রক্রিয়ায় বেকার তরুণ সমাজ অনেকটাই ব্যর্থ হয়। যে কারণে ২০১২ সালে তৎকালীন স্পীকার এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি এডভোকেট মো: আবদুল হামিদ মহান জাতীয় সংসদে অবসরের বয়স বাড়ার কারনে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরেছিলেন।
আমি এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হই ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাশ করে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে আমি চাকরি শুরু করি, দু'বছর অভিজ্ঞতা অর্জন করে আরো দুজন পার্টানারের সহযোগিতায় আমি এই সেক্টরে উদ্যোক্তা হওয়া তথা ব্যবসা করার উদ্যোগ নেই। কিন্তু কিছু প্রতিকূলতা তৈরি হওয়ার কারনে আমাদের পক্ষে ব্যবসাটি নিয়ে আর অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর আমি একটি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি শুরু করি এবং পাশাপাশি এমবিএ সম্পন্ন করি। কিন্তু সে সময় যে চাকরিটি করছিলাম তা আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যাশা পূরণ না করায় আমি কিছুটা হতাশ ছিলাম। অপেক্ষাকৃত ভালো চাকরির আশায় চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রনের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি গ্রহন শুরু করি। অনেকেই বলেছিলো চাকরি না ছেড়ে এর পাশাপাশি প্রস্তুতি নিতে; কিন্তু আমার মনে হচ্ছিলো প্রাইভেট ব্যাংকে সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম কাজ করে, রাত আট/নয়টায় বাসায় ফিরে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি আমার পক্ষে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। আমার হাতে তখন আবেদন করার মত আর বয়স ছিলো মাত্র দুই বছর; বেসরকারি সেক্টরে যেহেতু চার বছর চাকরি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সেক্ষেত্রে দু'বছর পরেও আমি এ ধরনের চাকরিতে পুনরায় যোগদান করতে পারব।
ইতিপূর্বে একবছর চাকরির পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলো দিয়ে আমার মনে হয়েছে এসব পরীক্ষাগুলো অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ন। কারন একটি চাকরির জন্য যার বয়স ২৫ বছর সেও যেমন আবেদন করছে আবার একই সাথে যার বয়স ২৯ বছর ১১ মাস সেও আবেদন করছে; মাঝে মাঝে আমার মনে হত পরীক্ষা গুলোর নাম নিয়োগ পরীক্ষা না হয়ে বাদ দেওয়ার পরীক্ষা হলে অনেক ভালো হত। কারন সরকারি একটি ব্যাংকে প্রথম শ্রেণির চাকরির পরীক্ষায় পদসংখ্যা পাঁচশত হলে সেখানে আবেদন করছে দেড়লাখ! তার মানে সিংহভাগ আবেদনকারিকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। বিসিএস বা পিএসসির অন্যান্য পরীক্ষায় আবেদন করতো আরো দুইগুন বেশি, তাই চাকরি ছেডে প্রস্তুতি নেওয়াই আমার কাছে শ্রেয় মনে হয়েছিলো। এখানে একটি বিষয় অবশ্যই উল্লেক করতে হচ্ছে, আমি যখন বিবিএ - র ছাত্র ছিলাম তখন আমার ধারণা ছিলো বিবিএ-তে যে ৩৪/৩৫ বিষয়ে আমাকে পড়ানো হচ্ছে চাকরির ক্ষেত্রেও সেসব বিষয়ের উপরেই আমাকে মূল্যায়ন করা হবে। কিন্তু চাকরির পরীক্ষায় আমাকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত আমি যা পড়েছি তার উপর পুনরায় বিশদভাবে জ্ঞান নেওয়া বা পড়াশুনার উপর। সে সময় চাকরির প্রস্তুতি গ্রহন ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি সরাসরি বয়স বৃদ্ধির আন্দোলনে যুক্ত হই, দু'বছরে অনেক গুলো চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি এবং শেষের দিকের পরীক্ষাগুলোতে প্রায় সবগুলোতেই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই এবং ভাইভা দিতে থাকি। একটা সময় পর আমার চাকরিতে আবেদনের বয়স পার হয়ে যায় এবং আমি বেশ হতাশা হয়ে পড়ি। তবে পূর্বে আবেদনকৃত চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে থাকি। এরমধ্যে সৌভাগ্যক্রমে প্রত্যাশার কাছাকাছি একটি চাকরি পেতে সক্ষম হই।
চাকরি হওয়ার পরেও পরোক্ষভাবে এই আন্দোলনে আমি যুক্ত ছিলাম মূলতো দুটো কারনে : এক, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়লে আমার আরো ভালো চাকরিতে প্রবেশ করার সুযোগ তৈরি হবে; দুই, এ আন্দোলনটি আমার কাছে মনে হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ট ও বঞ্চিত শিক্ষার্থী বা চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন এবং বিষয়টি অত্যন্ত যৌক্তিক, মানবিক ও ন্যায়সঙ্গগত। এসব অনুধাবন থেকেই এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা জাতির সামনে তুলে ধরতে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নূন্যতম ৩৫ বছরে উন্নীত করার বিষয় নিয়ে আমি তিনটি আর্টিকেল লিখি যা জাতীয় পত্রিকায় তখন প্রকাশিত হয়।
(৩)
এ আন্দোলকে আমি সংখ্যাগরিষ্ট ও সুবিধাবঞ্চিতদের আন্দোলন বলছি কারন চাকরিতে প্রবেশের বয়েসের এই মারপ্যাঁচে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরিসংখ্যানে দেখা যায় বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ থেকে ৪২ লক্ষ, এ শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স সম্পন্ন করতে ২৬/২৭ বছর সময় লাগে। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ, এখানে সেশনজট না থাকলে ২৪/২৫ বছর বয়েসে শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স সম্পন্ন করতে পারে। অন্যদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ যারা ২৩/২৪ বছরে তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করতে পারে। তাহলে চাকরিতে প্রবেশের জন্য সবচেয়ে কম সময় পাচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা এবং এ আন্দোলনের সংগে সম্পৃক্ত অধিকাংশ শিক্ষার্থীই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-র হিসাবে দেখা যায় বর্তমানে দেশে শিক্ষিত বেকার আছেন প্রায় ২৬ লাখ কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি। এদের সিংহভাগ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করেছে। এখন এই বেকারত্বের এই দায় কার?
আমাদের দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনস্ত অধিকাংশ কলেজ মফস্বল কিংবা গ্রামে অবস্থিত। আর পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শহরে, শহরে অবস্থান করে একজন শিক্ষার্থী যত সহজে নিজেকে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবে অন্যদিকে মফস্বলের বা গ্রামের একজন শিক্ষার্থী সেভাবে পারবে না। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করা গ্রামের একজন শিক্ষার্থীর চাকরির প্রতিযোগিতা বুঝতে বুঝতেই আবেদনের বয়স শেষ হয়ে যায়, এর পেছনে আরেকটি বড় কারণ হলো আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় ক্যারিয়ার গাইডলাইন সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা দেওয়া হয় না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে, ছাত্র অবস্থায় ইউভার্সিটির হলের বড় ভাইদের চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি অনুসরন করে।
এভাবে সংখ্যা গরিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার দায় কার? এখানে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সবচেয়ে অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত হলো ১৯৯২ সালে গঠিত হওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হাজার হাজার কলেজ প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার নামে বেকার তৈরির কারখানা তৈরি করা হয়েছে; যার মাশুল আজ দিচ্ছে তরুন শিক্ষার্থীরা। অথচ তখন থেকে যদি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে তোলা হত তাহলে আমরা টেকনিক্যালি স্কিলড একটি বড় জনশক্তি পেতাম যারা আজ দেশের বোঝা না হয়ে দেশের সম্পদ হত; তবে অনেক দেরিতে হলেও রাষ্ট্রের এই বিষয়ে বোধোদয় হয়েছে।
লেখক: যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক
প্রবীণবান্ধব বাংলাদেশ চাই (প্রবা)
যৌক্তিক দাবি কমপক্ষে ৩৫ বা বয়স বৃদ্ধি।, কিন্তু সরকারের কিছু লোকজনের জন্য বাস্তবায়ন হচ্ছে না।