মত-মতান্তর
সংকটকালে আমাদের ডিজিটাল লেনদেনের বিড়ম্বনা
নাসিমুল কবির
(৫ মাস আগে) ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৫ পূর্বাহ্ন

আমরা কতট ডিজিটাল,কতটা স্মার্ট-এই প্রশ্ন এখন সবার মনে। দেশের সাম্প্রতিক বিরাজমান পরিস্থিতি ও সংকটকালে ডিজিটাল-স্মার্ট নেটওয়ার্ক চালু থাকলে হয়ত আজ এই প্রশ্ন আসতো না। পত্রিকার রিপোর্ট মোতাবেক দশ দিনের সংকটকালে ই-কমার্সের ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এই ক্ষতির দায় কার? দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশী ব্যবস্থা ছাড়াও কারফিউয়ের মতো সকল কঠিন হাতিয়ার ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। এই সময় তাই সবাই বাধ্য হয়ে অনলাইান বা ডিজিটাল লেনদেনের উপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। শুধু কি তাই? দেশের ব্যাংকগুলো দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকায় এক পর্যায়ে মানুষের হাতে নগদ টাকা সংকট দেখা দেয়। তাই নগদ টাকার জন্য পুরোপুরি নির্ভর করতে হয়েছে ব্যাংকের এটিএম বুথের উপর। লোকজনের চলাফেরাসহ দোকান-পাট যখন প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে, তখন ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে দেশের ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ায়। এরইমধ্যে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠে ব্যাংকগুলোর এটিএম-এর লেনদেন করার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করার কারণে। স্বাভাবিক অবস্থায় যেখানে এটিএম থেকে ব্যাংক ভেদে ক্ষেত্র বিশেষে বিশ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত একটি লেনদেনে নগদ উত্তোলন করা যেতো, সেখানে কী এমন ভুমিকম্প হয়ে গেল যে, টাকা উত্তোলনের নিয়মই পাল্টে গেছে। এই যদি আমাদের স্মার্ট-ডিজিটাল হয়ে থাকে, তবে বলতে হয় অ্যানালগ পদ্ধতিই ভালো ছিল। অন্তত নানা রকম বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হতো না।
বিগত জুলাই-আগস্ট মাসে হাতের নগদ টাকা প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতার সম্মুীন হতে হয়েছে তা রীতিমতো বিস্ময়কর নয়, ভয়ঙ্করও বটে। এমনিতে যে নিয়ম তাতে নিজ ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে কোনো রকম ফি কর্তন করা হয় না। কিন্তু অন্য ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করার ক্ষেত্রে প্রতি লেনদেনের জন্য ফি বাবদ ভ্যাটসহ এগার টাকা পঞ্চাশ পয়সা কর্তন করা হতো। দেশের সকল এলাকায় সকল ব্যাংকের বুথ থাকবে না এটা যেমন বাস্তব ও সত্য। তাই ফি দিয়ে হলেও প্রয়োজনে অন্য ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে হবে এটাও বাস্তব বলে ধরে নিতে পারি। কিন্তু অজানা কারণে এখানেও ঘটে গেছে এক লঙ্কা কাণ্ড। বিরাজমান পরিস্থিতিতে কারফিউ জারির পর নিয়ম হয়ে গেছে একটি লেনদেনে সবোর্চ্চ পাঁচ হাজার টাকার বেশি উত্তোলন করা যাবে না। তা হলে বুঝতে পারেন আপনার যদি বিশ হাজার টাকা দরকার হয়, তখন আপনাকে চারটি লেনদেন করতে হবে। কিন্তু নিজ ব্যাংকের এটিএম বুথ থাকলে ভাগ্য ভালো। তা না হলে অন্য ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করার জন্য চারটি লেনদেন করার কারণে ফি বাবদ কর্তন করা হবে ছেচল্লিশ টাকা। যেখানে একটি লেনদেনে ফি বাবদ কর্তনের পরিমাণ হতো এগার টাকা পঞ্চাশ পয়সা। এর সাথে মাঝে মধ্যে আরো একটি ঝামেলারও মুখোমুখি হতে হয়। সেটি হলো দুই-একটি ব্যাংক নিজ ব্যাংকের কার্ড ছাড়া অন্য ব্যাংকের কার্ডের ক্ষেত্রে অন্য রকম আচরণের কারণে টাকা পাওয়া যায় না।
দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে যখন ব্যাংকগুলো টানা দীর্ঘ সময় বন্ধ হয়ে যায় তখন বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের নিয়ম-কানুন সহজ হওয়াই ছিল বাঞ্ছনীয়। অথচ সংকটকালীন সময়ে ভিন্ন পদ্ধতি চালু করার রহস্য কী তা আমাদের দেশের ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তা-ব্যক্তিরাই ভালো বলতে পারবেন। লেখার শেষে আমার কর্ম অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু তথ্য তুলে ধরছি। সেটি হলো আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো দুই ধরনের ব্র্যান্ডের এটিএম ব্যবহার করে থাকে। এরমধ্যে একটি হলো কিউ-ক্যাশ কার্ড ব্র্যান্ডের বুথ, অন্যটি হচ্ছে ভিসা-মাস্টার কার্ড বুথ। যদিও ফি কর্তনের শর্ত সাপেক্ষ দুই ব্র্যান্ডের বুথ থেকেই সকলেই টাকা উত্তোলন করতে পারেন। আমার জানা মতে, দেশের এটিএমগুলোর কোনোটাই এককভাবে কোনো একক ব্যাংকের মালিকানায় থাকে না-এই মেশিনগুলোর অধিক মূল্যের কারণে। প্রকৃতপক্ষে এই মেশিনগুলোর মালিক হচ্ছে নিজ নিজ ব্র্যান্ডের কোম্পানিই-যা দুইটি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। কনসোর্টিয়ামভুক্ত ব্যাংকগুলো প্রতিটি মেশিনের বিপরীতে নির্ধারিত হারে মাসিক ভাড়া পরিশোধ করে থাকে ঐ ব্র্যান্ড কোম্পানিকে। তা হলেই বুঝতে পারেন এই কনসোর্টিয়াম আর সিন্ডিকেটের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি?