ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ধারা সংশোধন

১০ বছর পর্যন্ত সংগঠন নিষিদ্ধের প্রস্তাব

স্টাফ রিপোর্টার
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের ধারা সংশোধনের জন্য ৮টি প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনীতে তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক মতবিনিময় সভায় এ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। খসড়া সংশোধনীতে ৪এ, ১৩এ ও ২০এ নামে ৩টি নতুন ধারা এবং ৩(৩) ও ১২(২) নামে ২টি নতুন উপধারা যুক্ত করা হয়।  এ ছাড়া ধারা ৩(২)(এ), ৪(২) ও ১৯ ধারায় সংশোধন আনার প্রস্তাব করা হয়। খসরা সংশোধনীতে গণহত্যায় নেতৃত্বের অপরাধে রাজনৈতিক দলকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করার মতো বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’ সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনী উপস্থাপন করা হয়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গত জুলাই হত্যাকাণ্ডে  জনগণ  নিজ চোখে দেখেছেন একটি বৃদ্ধ প্রজন্ম দেশের একটি তরুণ প্রজন্মকে উন্মত্তভাবে খুনের নেশায় মেতেছিল। তিনি বলেন, আমাদের বুকের ভিতর যত কষ্ট থাক, যত হতাশা থাক, যত ক্ষোভ থাক-  এই খুনের বিচারকে  অবশ্যই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। আমরা প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসার  বিচার করতে চাই না। আমরা সুবিচার নিশ্চিত করতে চাই। আসিফ নজরুল বলেন, অতীতে দেখেছি, এদেশে  বিচারের নামে কি ধরনের অবিচার হয়েছে।  আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো। ড. আসিফ নজরুল বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমকে সচল করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রসিকিউশন ও ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করা হয়েছে। এখন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বোর্ড (ট্রাইব্যুনাল)-কে পুনর্গঠন করা। আমরা এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ‘১৯৭৩’ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। যারা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তাদের সবার  মতামত নিয়ে এই আইন সংশোধন করা হবে।

৮ খসড়া সংশোধনী প্রস্তাব
১ম সংশোধনটি ধারা-৩ সংক্রান্ত। রেড কালারে মার্কড অংশটুকু সংশোধনীর মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে মানবতা বিরোধী অপরাধের সংজ্ঞায় একটি ব্যাপক ও সিস্টেমেটিক আক্রমণের অংশ হিসেবে গুম, লিঙ্গভিত্তিক সহিসংতা, যৌন দাসত্ব, জোরপূর্বক যৌনকর্ম, জোরপূর্বক গর্ভধারণ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীর কারণে জেন্ডার ও কালচারাল গ্রাউন্ডেও যদি কোনো সিভিলিয়ানের ওপর ব্যাপক ও সিস্টেমেটিক আক্রমণ করা হয় তাহলে তা মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, যা পূর্বের আইনে ছিল না।

২য় সংশোধনী ধারা-৩(৩) সংক্রান্ত। এ সংশোধনীর ফলে গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ইত্যাদি অপরাধের দায় বা লায়াবিলিটি নির্ধারণ করতে ট্রাইব্যুনাল রোম স্ট্যাটিউটের ধারা ৯ অনুযায়ী গৃহীত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এর এলিমেনটস অব ক্রাইম বিবেচনা করার সুযোগ পাবে। ৩য় সংশোধনী ধারা-৪ (২) সংক্রান্ত। এ সংশোধনীর ফলে এ আইনের অধীনে অপরাধ হতে পারে এটি জানা সত্ত্বেও যদি কোনো সংস্থা, সংগঠন, দল, সংঘবদ্ধ চক্র বা সত্ত্বার নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয় তাকেও বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে, যা বর্তমান বিধান অনুসারে সম্ভব নয়। ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যের ভিডিও স্ট্রিমিং বা ওডিও-ভিজ্যুয়াল রেকর্ডিং এর সুযোগ রাখা হয়েছে। এ সংশোধনীর বুনিয়াদে বিচার কার্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ট্রাইব্যুনাল চাইলে শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে। ৫ম সংশোধনী প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে অভিযুক্ত চাইলে তার পক্ষে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে। ৬ষ্ট সংশোধনী- বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতাকে ত্বরান্বিত করবে। এ সংশোধনীর অধীনে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক আদালতের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। ৭ম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রায় সকল রকম ডিজিটাল সাক্ষ্যকে এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ পক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দল যদি এ আইনের অধীন কোনো অপরাধ করে তাহলে সে দলকে ১০ বছর পর্যন্ত নিষিদ্ধ করার বিধান রাখা হয়েছে।

আইনটির প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে  স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, সমবায় এবং ভূমি মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ, শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বিষয়ক  উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম রব্বানী, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব (চলতি দায়িত্ব) ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. বদিউল আলম মজুমদার, সিনিয়র আইনজীবী  জেড আই খান পান্না,  সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ইকতেদার আহমেদ, সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন,  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের  অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও অধ্যাপক নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া,  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের  অধ্যাপক ড. বেগম আসমা সিদ্দিকা, রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব (ড্রাফটিং)  মো. রফিকুল হাসান, ঢাকাস্থ  জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী অফিসের কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন, সাংবাদিক  ডেভিড বার্গম্যান, আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট ড. জাহেদুর রহমান,  সাংবাদিক সাঈদ আব্দুল্লাহ, সানজিদা ইসলাম, শরিফ ভূঁইয়া প্রমুখ নিজনিজ মতামত তুলে ধরেন।  
 

পাঠকের মতামত

আওয়ামী লীগকে ১৫ থেকে ২০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হোক।

mizanur rahman
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২:৩৮ পূর্বাহ্ন

আওয়ামী লীগ সরকারকে আজীবন নিষিদ্ধ করতে হবে

আবুল বাশার
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৬:৩২ অপরাহ্ন

১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ বছর নিষিদ্ধ করা হোক

শিপন মোল্লা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৪:৩২ অপরাহ্ন

আইন তৈরি, সংশোধন ইত্যাদির জন্য সংসদের প্রয়োজন হয় ।এছাড়াও অধ্যাদেশ এর মাধ্যমেও এই ধরনের কিছু করা যায় কিন্তু কথা হল অধ্যাদেশের মাধ্যমে করার পরে ওই আইন দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলো, পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ এসে ঐ আইনটি বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বাতিল করে দিল তখন অযৌক্তিক আইন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত লোকটির কি হবে?

Amir
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৬:৫৯ অপরাহ্ন

আওয়ামী লীগ কে আজীবন নিষিদ্ধ করতে হবে।

মোঃ রাইয়ান আলম রিফা
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ২:৫১ অপরাহ্ন

দশ বছর পরে আওয়ামী লীগ আবার যখন ফিরে আসবে তখন কিন্তু এদেরকেই বট গাছে লটকাবে

Iqbal Khan
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৮:৫৮ পূর্বাহ্ন

এত লোকের মতামত না নিয়ে কেবল ডা. জাহেদুর রহমানের মতামত নিলেই যথেষ্ট। অবশ্য গণতান্ত্রিক ভাবধারায় বেশি লোকের মতামত গ্রহণ করা উচিত।

Zulfiquar Ali
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

অতিশয় উত্তম প্রস্তাব। তবে শতভাগ নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

মোঃ আজিজুল হক
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৮:২২ পূর্বাহ্ন

আশাবাদী, এখনো ভরসা আছে কিছু একটা হবে। তবে আইন বাস্তবায়িত হলে ১০ বছর পর আওয়ামী লীগ হয়তো জামাতকে নিয়ে আর কোন কথা বলতে পারবে না।

mc
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭:৫৬ পূর্বাহ্ন

Good

Abu daud
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭:২৮ পূর্বাহ্ন

গত তিনটি নির্বাচন ছিল কারচুপির নির্বাচন সুতরাং আগামী তিনটি নির্বাচন সাসপেন্ড করা হোক।

মোঃ আলমগীর চৌধুরী লি
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৩:৩৩ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status