মত-মতান্তর
গণঅভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর অবিস্মরণীয় ভূমিকা
ডাঃ ওয়াজেদ খান
(৪ মাস আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৭ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশে পাঁচ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে ইতিহাসে। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেনাবাহিনী। অবধারিত গণহত্যা ও গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করেছে দেশ ও জাতিকে। জন আকাঙ্খার প্রতি সমর্থন ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে কবর রচনা করেছে ফ্যাসিবাদের। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিতাড়িত করে গণভবন উন্মুক্ত করেছে গণমানুষের জন্য।
ছাত্র জনতার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন দেশ প্রেমিক সিপাহীরা। ফলে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে স্বাধীনতার সুফল আস্বাদনের সুযোগ। দীর্ঘদিন ধরেই সেনাবাহিনীর নির্লিপ্ততা মানুষের অন্তরে এক ধরণের ক্ষোভের সঞ্চার করে। সেনাবাহিনীকে জনগণ ভাবতে শুরু করে ভিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা হিসেবে। বিশেষ করে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানার ৫৭ জন চৌকষ সেনা অফিসার হত্যাকাণ্ডের পর আরো বেড়ে যায় দুর্ভাবনার মাত্রা। বিগত দেড় দশকে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার রাজনীতিকরণের মধ্য দিয়ে ষোলকলা পূর্ণ করে ফ্যাসিষ্ট সরকার।
সবকিছু মিলিয়ে সেনাবাহিনী সম্পর্কে হতাশা ও সন্দেহ তীব্রতর হয় জনমনে। ফ্যাসিবাদ ঘনিষ্ঠ গুটিকয়েক সেনাসদস্যের কারণে পুরো বাহিনীর উপর সৃষ্টি হয় ভ্রান্ত ধারণা। জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের নির্বিচার হত্যাকাণ্ড বাড়তে থাকে। অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে সংঘাতের ভয়াবহতা। দেশ ও জাতির এই ক্রান্তিকালে মানুষ সেনাবাহিনীকে দেখতে চায় ত্রাতার ভূমিকায়। এ সময়টায় সেনাবাহিনীই হয়ে উঠে শেষ আস্থা ও ভরসার স্থল। দেশবাসী গভীর আগ্রহ ও উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্তের উপর। আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে কারফিউ দিয়ে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামায় সরকার। পরিকল্পনা ছিলো সেনাবাহিনীর মাধ্যেমে গণহত্যা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকা। কিন্তু সেনাবাহিনী সে ফাঁদে পা না দিয়ে ঘুরিয়ে ফেলে বন্দুকের নল। ফ্যাসিস্ট সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়ে শামিল হয় জনতার কাতারে। সেনাবাহিনী চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয় ৫ আগস্ট। পতন ঘটে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের। পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যান দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে দাঁপিয়ে বেড়ানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান সেনানিবাস থেকে ঘোষণা দেন বিজয়ের। বীর সেনানীর নজিরবিহীন ভূমিকা পালন করেন জেনারেল ওয়াকার। গোটা দেশ জুড়ে সিপাহী জনতা একাকার হয়ে যায় মিলেমিশে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অভূতপূর্ব এ দৃশ্য দেখার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিলো দেশবাসী। এমন একটি ক্রান্তিকালে জেনারেল ওয়াকার ও তার বাহিনীর অনন্য অবদান ইতিহাস হয়ে থাকবে।
সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। কোন ব্যক্তি, পরিবার বা দলের স্বার্থ হাসিলের জন্য কাজ করতে পারে না সেনাবাহিনী । আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে তার প্রমাণ রেখেছে রাষ্ট্রীয় এই বাহিনী। শুধু নিজ দেশ নয়, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সুনামের সাথে বিশ্বের প্রায় অর্ধশত সংঘাতপূর্ণ দেশে ১৯৮৮ সাল থেকে কাজ করছে তারা। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে উচ্চ বেতনে চাকুরির পাশাপাশি তারা নিজ দেশকে যোগান দিচ্ছ বিরাট অংকের বৈদেশিক মুদ্রা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। মুগল বাদশাহদের আমলে বেঙ্গল আর্মি, ব্রিটিশ ভারতে আর্মি অব বেঙ্গল এবং পাকিস্তান শাসনামলে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অত্যন্ত দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতার সাথে কাজ করেছে বাঙালি সেনারা। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর নৃশংস আক্রমণক্ষণে রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন দিশেহারা, পলায়ণপর তখন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনারাই ইপিআর ও পুলিশ নিয়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে অবতীর্ন হন সম্মুখ সমরে। তৎকালীন মেজর জিয়া চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেন মহান স্বাধীনতার। মুক্তিযুদ্ধের মূল পরিচালকও ছিলো সেনাবাহিনী। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর দেশের বিভিন্ন সেনা ছাউনি থেকে সৈন্যরা বেড়িয়ে এসে স্বতঃ:স্ফূর্তভাবে যোগ দেয় জনতার সাথে। সফল করে সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান।স্বাধীনতার পর তৎকালীন সরকার সেনাবাহিনীর প্রতি নজর না দিয়ে দলীয় অনুগত হিসেবে গড়ে তুলে রক্ষীবাহিনী। পঁচাত্তরে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নিষিদ্ধ করা হয় রক্ষীবাহিনী। নূতন আঙ্গিকে গড়ে উঠে সেনাবাহিনী। প্রতিষ্ঠিত করা হয় চেইন অব কমান্ড। আর এভাবেই আজকে সেনাবাহিনী পরিণত হয়েছে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
বার্হিশত্রুর হাত থেকে দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি রক্ষার দায়িত্ব যেমন সেনাবাহিনীর উপর বর্তায়, তেমনি জাতির দুর্দিনে বেসামরিক প্রশাসন তথা জনগণের জানমালের চূড়ান্ত নিরাপত্তা বিধানের দায়ও সাংবিধানিকভাবে সেনাবাহিনীর। এজন্য রাষ্ট্রও সেনাবাহিনীকে প্রদান করে আসছে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছে সেনাবাহিনী। বিলম্বে হলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেনাবাহিনীকে প্রদান করেছে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা। ফ্যাসিবাদের দোসর সেনা কর্মকর্তাদেরকে অবশ্যই বিচারের আওতায় এনে বাহিনীকে করতে হবে কলঙ্কমুক্ত। এছাড়া সেনা সদস্যদেরকে র্যাবে অন্তর্ভূক্তি নিষিদ্ধের বিষয়টিও রাখতে হবে সক্রিয়া বিবেচনায়। গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ধরে রেখে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ছাত্র-জনতা ও সেনাবাহিনীকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই পাঁচ আগস্টের পূর্বাবস্থায় ফিরতে দেয়া যাবে না দেশকে।
ডা: ওয়াজেদ খান
সম্পাদক
সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, নিউইয়র্ক।
email:[email protected]
আমেরিকার দালাল।
৬২৬ জনকে ছেড়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী আজ পর্যন্ত এদের নামও প্রকাশ করেনি আইএসপিআর।
সঠিক কথা এবং ভালো উপস্থাপন করেছে।
please write the real facts, bacground and real history of Bangladesh liberation war
অসাধারণ লেখায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষ হইতে ফুলেল শুভেচছা দোয়া ও শুভকামনা রইল লেখকের প্রতি।।