বাংলারজমিন
ফেনীতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে হামলা
আসামি করা হলো বিএনপি নেতাকে
ফেনী প্রতিনিধি
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবারফেনীতে যৌথবাহিনীর অভিযানে বিএনপি’র সাবেক মহিলা এমপি’র ভাইসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপি’র ওই কেন্দ্রীয় নেত্রীর গ্রেপ্তার ভাইয়ের তথ্যে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে হামলার ঘটনায় জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন দুলালসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রুহুল আমিন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, জিয়া উদ্দীন ডালিম (৪৫), তার সহযোগী জীবন কৃষ্ণ দে (৪০) ও ইয়াসিন হাসান (২৫)। গ্রেপ্তার ডালিম বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেত্রী ও সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানুর ছোট ভাই। বুধবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফেনীতে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর মেজর ফাহিম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে সদর উপজেলার কাজীরবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে যৌথবাহিনী। এ সময় ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে (গত ৪ঠা আগস্ট) সশস্ত্র হামলা চালানোর অভিযোগে সন্ত্রাসী জিয়া উদ্দীন ডালিম ও তার সহযোগী জীবন কৃষ্ণ দে’কে গ্রেপ্তার করা হয়।। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।
পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে শহরের ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম স্টেডিয়াম এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ইয়াসিন হাসানকে গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনী। এ সময় ইয়াসিনের কাছ থেকে একটি শটগান ব্যারেল, ৩৭ রাউন্ড শটগানের এ্যমোনিশন, একটি এয়ারগান, একটি হাতকড়াসহ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে অস্ত্রসহ তাদের ফেনী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। মেজর ফাহিম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জেলায় নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণকারীদের আটক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের আটক না করা পর্যন্ত যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে জিয়াউদ্দীন ডালিমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলার ঘটনায় দুই মাস পর ফেনী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আবদুল হান্নান নামে এক ব্যক্তি (হামলায় আহত) বাদী হয়ে বুধবার রাতে মামলাটি দায়ের করেন বলে থানার ওসি মো. রুহুল আমিন জানিয়েছেন।
মামলায় জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন দুলালকেও আসামি (৬৬ নং) করা হয়েছে। মামলায় ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে প্রধান করে ৮৪ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ২০০-২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারের বরাতে পুলিশ জানায়, গত ১৯শে জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের বড় মসজিদের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্র-জনতা। এতে অংশ নেন- কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের সেরাজুল হকের ছেলে ওয়ার্কশপ কর্মচারী মো. আবদুল হান্নান (৩২)। এ সময় আসামিরা সংঘবদ্ধ হয়ে কর্মসূচিতে হত্যা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। তাদের ছোড়া নির্বিচারে গুলি ও ককটেলের শব্দে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হলে প্রাণভয়ে মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে মামলার বাদী তাকিয়া রোডের মুখে এলে মনোয়ার হোসেন দুলালসহ অন্য আসামিরা তার বুক, মাথায় ও দুই চোখে উপর্যুপরি গুলি করতে থাকে। এতে দুই চোখে গুলির স্প্লিন্টার লেগে হান্নান গুরুতর আহত হন। পরে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামিরা তাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যান। আসামিদের গুলির আঘাতে তার বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে গেছে ও অন্য চোখের দৃষ্টিশক্তি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন বাদী। মামলার আসামি হওয়ার বিষয়ে জানতে মনোয়ার হোসেন দুলালের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফেনী মডেল থানার ওসি মো. রুহুল আমিন আরও বলেন, মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তৎপর রয়েছে।