অনলাইন
এক্সিলেন্স ইন রিসার্চ পদকে ভূষিত মালয়েশিয়া প্রবাসি প্রফেসর ড. মাঈন খন্দকার
আরিফুল ইসলাম, মালয়েশিয়া
(৯ মাস আগে) ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবার, ৯:৩৯ অপরাহ্ন

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের পাশাপাশি স্ব-মহিমায় বাংলাদেশকে অন্যান্য উচ্চতায় নিয়ে চলেছেন আমাদের পেশাজীবী প্রবাসিরাও। কর্ম, মেধা, যোগ্যতায় এবং শিষ্টাচার ও প্রজ্ঞায় দিনকে দিন নিজেদেরকে ছাড়িয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। এদের মধ্যে অনেকেই পাচ্ছেন তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মের স্বীকৃতিও। তাদেরই একজন মালয়েশিয়ায় সানওয়ে ইউনিভার্সিটির অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স এন্ড রেডিয়েশন টেকনোলোজির প্রফেসর ড. মাঈন উদ্দিন খন্দকার।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার সানওয়ে ইউনিভার্সিটি তাকে 'এক্সিলেন্স ইন রিসার্চ-২০২৪' পদকে ভূষিত করেছেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার হাতে পদকটি তুলে দেন সানওয়ে ইউনিভার্সিটির এডুকেশন গ্রুপের (এসইজি) সি.ই.ও. প্রফেসর দাতো' এলিজাবেথ লি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সানওয়ে ইউনিভার্সিটির প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর (গবেষণা ও স্থায়িত্ব) অধ্যাপক মাহেন্দ্রিরণ নায়ার, প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর (শিক্ষা) প্রফেসর চাই লে চিং ও প্রভোস্ট, অধ্যাপক আভিমন্যু বীরাকুমারাশিবাম।
দেশটির স্বনামধন্য এ ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, তিনি ২০০৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নিউক্লিয়ার সাইয়েন্সে পিএইচডি, ১৯৯৬-৯৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিক্সে এমএসসি (প্রথম শ্রেণীতে প্রথম) এবং বিএসসি (প্রথম শ্রেণীতে প্রথম) ডিগ্রি নিয়ে, বর্তমানে রেডিয়েশন ও নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন। তাঁর কর্মজীবন ইউনিভার্সিটি মালায়া, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সী (অস্ট্রিয়া), মার্কিন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ এবং কোরিয়া অ্যাটমিক এনার্জি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতো মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে বিস্তৃত।
সম্প্রতি গবেষণা এবং উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য অধ্যাপক খন্দকার, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির এক্সপ্যাট্রিয়েট ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ২০১৮ সাল থেকে সানওয়ে ইউনিভার্সিটির সিনেট সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও ২০১২ সাল থেকে মর্যাদাপূর্ণ 'ফিজিক্যাল অ্যান্ড কেমিক্যাল সায়েন্সেস (রিকেন, জাপান)' এবং 'ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব রেডিওলজিকাল সায়েন্সেস (জাপান)'-এ ভিজিটিং সাইন্টিস্ট হিসেবে গবেষণা রত আছেন।
আজ পর্যন্ত তার সর্বমোট ৬৫৪ টি আর্টিকেল স্কুপাস-ইনডেক্সড জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এ সকল আর্টিকেলগুলি সর্বমোট ১৪৪২০ সাইটেশন হয়েছে। উনার বর্তমান এইচ-ইনডেক্স ৫৮, এবং আই-১০ ইনডেক্স ৩৬৫, যা তাকে 'অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স এন্ড রেডিয়েশন টেকনোলোজি' বিভাগে সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মধ্যে শীর্ষ ১% অবস্থানে রাখছে।
এলসভিআর দ্বারা প্রকাশিত মর্যাদাপূর্ণ 'রেডিয়েশন ফিজিক্স এবং কেমিস্ট্রি' জার্নাল, 'সায়েন্টিফিক রিপোর্টস' (নেচার পাবলিশার) জার্নাল, ইত্যাদি সহ বিভিন্ন জার্নালের সম্পাদক হিসাবে তাঁর ভূমিকা এবং ১৫ জনেরও অধিক পিএইচডি প্রার্থীদের সফল তত্ত্বাবধান অধ্যাপক খন্দকারের একাডেমিক নেতৃত্বের স্পষ্ট প্রমাণ করে।
তিনি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সী কর্তৃক প্রণীত গবেষণা প্রজেক্ট 'থেরানোস্টিক রেডিওনিউক্লাইড উৎপাদন এবং ব্যবহার' এর প্রধান বৈজ্ঞানিক তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ওয়ার্ল্ড সাইন্টিফিক কমিউনিটিতে প্রফেসর ড. খন্দকারের তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ, এলসভিআর পাবলিশার পরপর চার বছরের জন্যে তাকে ওয়ান অব দ্যা মোস্ট ভেলুয়েবল রিভিউআর হিসেবে পুরস্কৃত করেছেন। প্রফেসর ড. খন্দকারের কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার 'এক্সিলেন্স ইন রিসার্চ-২০২৪' এবং 'এক্সিলেন্স ইন রিসার্চ-২০২২ (কমেন্ডেশন)' পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও এ প্রফেসর ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৩ সালের জন্য এলসেভিয়ার-স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক যৌথভাবে বিশ্বের প্রভাবশালী ২% শীর্ষ গবেষকদের একজন হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
গত শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মানবজমিনের মালয়েশিয়া প্রতিনিধির সাথে এক সাক্ষাতে ড. মাঈন উদ্দিন খন্দকার বলেন, সানওয়ে ইউনিভার্সিটকে মালয়েশিয়ার এক নম্বর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি হিসেবে ধরা হয়। বর্তমানে এই ইউনিভার্সিটিতে ওয়ার্ল্ড ক্লাস, ফুল ফান্ডেড পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু আছে। যদিও এটি একটি কম্পিটিটিভ প্রক্রিয়া। অনেক বাংলাদেশি স্টুডেন্ট এই স্কিমের মধ্য দিয়ে এখানে পিএইচডি গবেষণা রত আছেন। আমার তত্ত্বাবধানে বর্তমানে তিনজন বাংলাদেশি স্টুডেন্ট পিএইচডি করছেন। যেহেতু আমরা কমপক্ষে ১০ জন বাংলাদেশি ফ্যাকাল্টি মেম্বার এই ইউনিভার্সিটিতে আছি, সেহেতু আমাদের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদেরকে এখানে পিএইচডি প্রোগ্রামে নেওয়া। এটা বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের জন্যে খুবই ভালো সুযোগ।
ড. মঈন বলেন, একটা সময় ছিল দরিদ্রপীড়িত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সারা বিশ্ব চিনত। এরপর কঠর পরিশ্রম করা কর্মীদের দেখছে আজকের বিশ্ব। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে যে মেধার ও কৃতীত্বের বিস্ফোরণ দেখাচ্ছে বাংলার মেধাবী সন্তানরা, সেসব প্রমাণ এখন ক্রমান্বয়ে প্রকাশ পাচ্ছে বিদেশ ভুঁইয়ে। যার যা আছে তাই নিয়ে লড়াই করে বিশ্বের বুকে কৃতীত্বের স্বাক্ষর রাখতে পিছপা হচ্ছে না তারা
ছাত্র জনতার অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে এখন সুবর্ণ সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বিশ্ব মানে উন্নীত করার। মূলত, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমি বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে শিক্ষা এবং গবেষণায় অনগ্রসর এবং দারিদ্র পীড়িত দেশ হিসেবে আর দেখতে চাই না। এই অবস্থার উন্নতিকল্পে প্রশাসন এবং দেশের মানুষ যদি আমার সহযোগিতা কামনা করে, তবে সেটি আমি সানন্দে গ্রহণ করব এবং শুধু দেশকে ভালোবেসে, একটা সেটেলড এবং ঝামেলা মুক্ত জীবন ছেড়ে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার প্রত্যয় নিয়ে দেশে ফিরবো।
পাঠকের মতামত
কংগ্রাচুলেশনস প্রফেসর ড. মাঈন উদ্দিন খন্দকার। এসব স্কলারদের দেশে ফিরিয়ে এনে দেশের শিক্ষার মান প্রসারে কাজে লাগানো যায়। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে শিক্ষা এবং গবেষণায় অনগ্রসর এবং দারিদ্র পীড়িত দেশ হিসেবে আর দেখতে চাই না। পরিবর্তিত পরিস্হিতিতে বর্তমান সরকার এই ধরনের কাজ করতে পারে। দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
আমারও স্বপ্ন আছে একদিন মালয়েশিয়া গিয়ে পিএইচডি করার।