শেষের পাতা
আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার বেশির ভাগ স্বাভাবিক, ৪০টিতে ছুটি
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবারসাভারের আশুলিয়ায় গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, টিফিন বিল বৃদ্ধিসহ হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, নানা দাবিতে বিভিন্ন কারখানায় চলমান শ্রমিক আন্দোলন নিরসনে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গতকাল সকালে নির্দিষ্ট সময়ে শ্রমিকেরা কারখানায় প্রবেশ করলেও কাজ না করায় আশুলিয়ার জামগড়া, নরসিংপুর, ঘোষবাগ এলাকার ৪০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরও ১০টি কারখানায় শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেছে। অন্যসব কারখানাগুলো চালু রয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।
সরজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে যেসব এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে, সেসব এলাকায় মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সকাল থেকে বেশ কয়েকটি কারখানায় কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কারখানার সামনে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান, র্যাব, পুলিশের রায়টকার। এ সময় কারখানাগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে। দুপুর পর্যন্ত কারখানা-সংলগ্ন কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আশুলিয়ার বিভিন্ন সড়কে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা টহল দিচ্ছে। শিল্প পুলিশ জানায়, সকালে শ্রমিকরা নির্ধারিত সময়ে কারখানায় উপস্থিত হয়। কিন্তু পরে কিছু কারখানায় কাজ বন্ধ করে বসে থাকায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। আশপাশের কারখানায় ছুটি দেয়ার পর নিরাপত্তার স্বার্থে আরও কিছু কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জনরন সোয়েটার কারখানার এইচআর এডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিজিএমইএ’র নির্দেশনা মেনে আমরা কারখানা পরিচালনা করছি। এরমধ্যে হঠাৎ করে বহিরাগত কিছু লোকজন কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমাদের লিঙ্কিং এবং ট্রিমিং শাখা ছুটি ঘোষণা করা হলেও অন্যান্য শাখায় কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে কারখানায় হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেয়া হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। শিল্প রক্ষায় শ্রমিকরা সচেতন হলে কারখানা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা সম্ভব। অন্যথায় এই শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে। সময়মতো পোশাক উৎপাদন এবং রপ্তানি করতে না পারলে বায়াররা আমাদের দেশ থেকে অন্যত্র চলে গেলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা কষ্টকর হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ গামের্ন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন বলেন, সোমবার তৈরি পোশাক খাতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সন্ধ্যায় বিজিএমইএ কারখানামালিক, শ্রমিকনেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে কিছু দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর মঙ্গলবার অধিকাংশ কারখানা সচল রয়েছে। তবে কিছু কারখানা আগে থেকে বন্ধ এবং কিছু কারখানায় শ্রমিকেরা অভ্যন্তরীণ কিছু দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছে। তিনি আরও বলেন, বিজিএমইএ থেকে হাজিরা বোনাস ও টিফিন বিল বৃদ্ধি, শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত না করা, নারী-পুরুষের বৈষম্য করা হবে না এমন সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যা খুবই ইতিবাচক। পাশাপাশি শ্রমিকদের অন্য যেসব দাবি রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানার মালিকপক্ষ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। এখন এ বিষয়টির সমাধান হলে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আশুলিয়ার ফাউন্টেইন গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড কারখানার এমব্রয়ডারি অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মিজানুর রহমান সুমন বলেন, এতদিন অস্থিরতা বিরাজ করছিল, আমরাও উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। বিজিএমইএ ইতিমধ্যেই শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিয়েছে, শ্রমিকরাও ভালো সাড়া দিয়েছেন। আমাদের কারখানাসহ বেশির ভাগ কারখানা চালু রয়েছে। পোশাক শিল্প নিয়ে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র ছিল, আমার মনে হয় সেটা কেটে গিয়েছে। এখন আমরা পূর্ণোদ্যমে কাজ করতে পারবো। শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, বেশকিছু দিন ধরেই বিভিন্ন দাবি আদায়ে আন্দোলন করে আসছে শ্রমিকরা। আমরা তাদের সঙ্গে মালিকপক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করছি। কিছু কারখানায় আবার নতুন করে দাবি আদায়ে আন্দোলন শুরু করায় মঙ্গলবারও ৪০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অন্যান্য কারখানায় স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শিল্প পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের রায়টকার প্রস্তুত রয়েছে।