ঢাকা, ৫ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

মঠবাড়িয়ায় বিএনপি নেতা দুলালের বিরুদ্ধে দখল চাঁদাবাজির অভিযোগ

পিরোজপুর প্রতিনিধি
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবারmzamin

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মঠবাড়িয়ার বিভিন্ন স্থানে আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরইমধ্যে উপজেলায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার দখল ও ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ড্রেজার ব্যবসা  নিয়ন্ত্রণ, ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসা দখল, জমি দখল, চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ডে উপজেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের নাম এসেছে। একাধিক ভুক্তভোগী জানান, ৫ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক রুহুল আমীন দুলাল ও পৌর বিএনপি’র আহ্বায়ক কে এম হুমায়ুন কবিরের নির্দেশে দলটির নেতাকর্মীরা অনেক কিছু দখলে নিয়েছে। মধ্যরাতে মোটা অঙ্কের আর্থিক সমঝোতায় কিছু প্রতিষ্ঠান ফেরত দিয়েছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র লুটপাট করেছে। দুলালের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন এক ভুক্তভোগী। দুলালের এসব লুটপাট দখলের ভিডিও চিত্র দলের হাইকমান্ডের কাছে পাঠিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। 
ডায়াগনস্টিক সেন্টার দখল: মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে শিকদার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং যমুনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গত ৬ই আগস্ট সকালে হামলা এবং ভাঙচুর, লুটপাট চালায় দুলালের অনুসারীরা। সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক অধ্যাপক আজিমুল হক জানান, সরকার পতনের পরদিন বিএনপি নেতা দুলাল ও কবিরের অনুসারী জাকির মল্লিক, আবু মাস্টার, কাওসার মল্লিক, আরিফ মল্লিক, মাসুদ মল্লিক, তারেক মিয়া, রুবেল আহসান, বেল্লালসহ প্রায় ১০০-১৫০ জনের একটি গ্রুপ আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর এবং লুট করেন। আরেকজন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক জানান, রুহুল আমিন দুলালের নির্দেশে তার প্রতিষ্ঠানের সকল মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনীর তৎপরতায় আংশিক মালামাল ফিরিয়ে দিলেও ডায়াগনস্টিক মেশিনটি পিটিয়ে ভেঙে ফেলেছে। 
ড্রেজার, ডিশ এবং ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ: ৫ই আগস্টের পর থেকে দুলালের অনুসারী পৌর যুবদলের সদস্য সচিব আবুল কালাম (আবু মাস্টার) ও উপজেলা যুবদল নেতা মো. শাহীন রেজা এবং মো. বেল্লাল ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ড্রেজার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। আমড়াগাছিয়া দক্ষিণ সোনাখালীতে পল্লী বিদ্যুৎ প্রকল্পের বালু ভরাটের কাজ বন্ধ করে দিয়ে বলপ্রয়োগ করে কাজ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন। পরে স্থানীয়রা ঘিরে ধরলে রিয়াজ জানায়, রুহুল আমিন দুলালের নির্দেশেই সে কাজ বন্ধ করতে এসেছেন। ওদিকে ডিশ এবং ইন্টারনেট ব্যবসা দখলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে দুলালের অনুসারী হিসেবে পরিচিত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা পিন্টু দফাদার ও ছাত্রদল নেতা খোকন মল্লিকের বিরুদ্ধে। 
চাঁদা দাবি ও ভাঙচুর: উপজেলার বড় মাছুয়া ইউনিয়নের সাধারণ নাগরিক স্বপন বেপারী অভিযোগ করেন, বড় মাছুয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক নবী হোসেন পহলান তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় বড় মাছুয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মীর মনির উদ্দীন ছগির ও সাবেক ছাত্রদল নেতা রিমন মীরের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৫০ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে হামলা চালায়। এরা সকলেই উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক রুহুল আমীন দুলালের অনুসারী। মঠবাড়িয়া উপজেলার পূর্ব সাপলেজা গ্রামের বাসিন্দা আল-আমীন অভিযোগ করেন, গত ৫ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক রুহুল আমীন দুলাল ও মঠবাড়িয়া পৌরসভা বিএনপি’র আহ্বায়ক কেএম হুমায়ুন কবিরের অনুসারী নাসির খান, মাহবুব মেম্বার, হেমায়েত আলমগীরসহ স্থানীয় বিএনপি’র একাধিক নেতাকর্মীরা সাপলেজা বাজারের একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর এবং লুটপাট করেন। মঠবাড়িয়া দুলাল ও  হুমায়ুনের অনুসারীদের দখল লুটপাটের বিষয়ে জেলা বিএনপি’র কাছে ১৫টির বেশি লিখিত অভিযোগ জমা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রুহুল আমিন দুলালকে কেন্দ্র থেকে শোকজ করা হয়। কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ওই শোকজ নোটিশের বিরুদ্ধে ২৫শে আগস্ট সন্ধ্যায় মঠবাড়িয়া উপজেলায় মিছিল করেন দুলালের অনুসারীরা। এদিকে ২৯শে আগস্ট বিএনপি মহাসচিব বরাবর দুলালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন পূর্ব সাপলেজার বাসিন্দা আল আমিন। ওদিকে গত মঙ্গলবার বিকালে নিজ গ্রুপের নেতাকর্মীদের নিয়ে পিরোজপুর জেলায় তৃণমূল প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত হন রুহুল আমিন দুলাল। এ সময় জেলার যুবদল ও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা তাকে আওয়ামী লীগের ‘দালাল’ বলে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে দুলালের সঙ্গে থাকা মজিবর রহমান ঘরামীকে মারধর করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এ সময় কৌশলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন দুলাল। ওদিকে গতকাল দুলালের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ইসমাইল নামে এক ভুক্তভোগী। তিনি অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ নেতারা জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ শুরু করেছিল। পটপরিবর্তনের পর সেই বাড়ির কাজের দায়িত্ব নেন দুলাল। এসব অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রুহুল আমীন দুলাল বলেন, আমি কোন ধরনের দখলবাজির সঙ্গে জড়িত নই। কেউ এমন প্রমাণ দিতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব। আমাকে হেয় করার জন্য একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। 
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status