ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

ত্বকে এজিং প্রসেস ও এর প্রভাব

ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল
২১ জুলাই ২০২২, বৃহস্পতিবার
mzamin

ত্বকে কেন এজিং প্রসেস হয়ে থাকে:

 সত্যিকার অর্থে এজিং প্রসেস একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। দেখা যায় শরীরের স্বাভাবিক গঠন যেহেতু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় ঠিক এজিং প্রসেসটা একইভাবে হয়ে থাকে। সাধারণত ২৫ বছর বয়স থেকেই ত্বকের ভেতরে ভেতরে এজিংয়ের পরিবর্তনটা দেখা দেয়। তবে ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সে ত্বকের পরিবর্তনটা তেমন লক্ষণীয় হয় না, কারণ এ সময়ে পরিবতর্নটা ধীর লয়ে হয়। তবে ৩০ বছর বয়সের পর থেকে পরিবর্তনটা আরও বেশি লক্ষণীয় হয় এবং বয়সের ছাপ চলে আসে।  মানবদেহে এজিং প্রক্রিয়াটা কতিপয় কারণে হয়ে থাকে। যেমন পরিবেশগত, জেরিয়েট্রিক বা বয়সজনিত কারণ, জীবন ধারা, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি। আবার সূর্যালোকও দায়ী। বিশেষ করে সূর্যালোকে আলট্রাবায়োলেট অ এবং ই থাকে। যেটি দেহের ত্বকের মধ্যে প্রবেশ করে এজিং প্রসেস বা প্রক্রিয়া শুরু করে।

বিজ্ঞাপন
দেহে এজিং প্রসেস শুরু হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় রিসোর্স হলো খাদ্যাভ্যাস। যা থেকে ত্বকে ইলাস্ট্রিক, হাইড্রোলিক এসিড এসব প্রয়োজনীয় উপাদান পায় এবং ত্বকে তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। আবার সূর্যালোক থেকে ত্বকে গ্রহণ করা আলট্রা ভায়োলেট রেডিয়েশন আমাদের দেহের  খাদ্যাভ্যাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রমকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এজন্য যে ব্যক্তি বেশি সূর্যালোকে থাকে এবং সূর্যালোক থেকে বাঁচতে কোনো প্রটেক্সশন বা প্রতিরোধী ব্যবহার করে না তাদের এজিং প্রক্রিয়াটাও দ্রুত হয়ে থাকে। পরিবেশগত ভাবেও বায়ুদূষণ যেমন ত্বকের জন্য দায়ী আবার চর্মে অ্যালার্জি এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বিভিন্ন কসমেটিক্সের ব্যবহার ও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ত্বকের এজিং প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। যারা বিভিন্ন কারণে ত্বকে মেকাপ ব্যবহার করে থাকেন তাদের ত্বকের এজিং প্রতিরোধে বাড়তি যত্ন নিতেই হবে। 

এজিংয়ের জন্য শরীরে যে প্রভাব পড়ে 

এজিংয়ের জন্য আমাদের শরীরে জেরিয়েটিকেলি যেটি হয় তা হলো ২৫ বছর বয়সের পর থেকে আমাদের ত্বকের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আমাদের শরীরে অস্টিও প্লাস নামে এক ধরনের সেল থেকে শরীরের বোন গঠন করে। সেই অস্টিও প্লাসের কার্যক্ষমতাও একটু একটু করে বাড়তে থাকে এবং যার জন্য আমাদের শরীরের বোন বা হাড় ক্ষয় হতে থাকে। ফলত: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চিপের হাড়গুলো ধীরে ধীরে ডিপেস্ট হয়, ফ্যাট কমে গিয়ে একটু ঝুলে যায়। যা অনেক ক্ষেত্রে বয়সের ছাপ পরিলক্ষিত হতে সহায়তা করে। আবার এটি অনেক সময় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণেও হয়ে থাকে। সাধারণত পুরুষ ও মহিলাদের উভয়ক্ষেত্রে একই বয়সে এজিং প্রক্রিয়াটা শুরু হয়। কিন্তু লক্ষণীয় মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষ হরমোনাল ইস্ট্রোজেন সব সময় মহিলাদের নিয়ন্ত্রণ করে এবং ফ্যাটের স্ট্রাকচারকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যা ফ্যাটের স্বাভাবিক গঠনকেও নিয়ন্ত্রণ করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের ইস্ট্রোজেন কমতে থাকে বিশেষ করে যখন মনোপোজ আসে তখন ইস্ট্রোজেন কমে যায়। সেজন্য মহিলাদের বয়স ৪০ এর পরপরই পুরুষের তুলনায় বয়সের আধিক্য লক্ষ্য করা যায় এবং ইস্ট্রোজেন হরমোন এর জন্য দায়ী। আমরা এক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন থেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করে থাকি। যাতে শরীরে ফ্যাট কম হয়। প্রতিদিন আমাদের শরীরে শারীরবৃত্তীয় কর্ম হচ্ছে সেজন্য ত্বকের স্বাভাবিক কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া আরও কিছু কারণ আছে যার জন্য এজিং প্রসেসটা দ্রুত হচ্ছে। যেমন- বিভিন্ন রোগ-বালাই, দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিস বা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কোনো ধরনের কানেকটিভ ডিস অর্ডার আছে তাদের শরীরে কোলাজেন ক্ষতিগ্রস্ত থাকার কারণে অন্যদের তুলনায় এসব ব্যক্তিদের বয়সের ছাপটা দ্রুত চলে আসে।  

প্রতিরোধের পদ্ধতিগুলো

 ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার জন্য ও এজিং প্রসেস মুছে দেয়ার জন্য সৌন্দর্য্য সচেতন নারী-পুরুষ উভয়েই বিভিন্ন সৌন্দর্য চর্চা করে থাকেন। দেখা যায় বর্তমানে ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য বা বয়সের ছাপ ধরে রাখতে বা মুছে দিতে অ্যায়েসথেটিকস বা ডার্মাটোলজি চিকিৎসকরা বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যবহার ও চিকিৎসা করে থাকেন। যেমন- বিভিন্ন ধরনের থেরাপি প্রয়োগ, লেজারের ব্যবহার, সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, বিউটি বা কেমিক্যাল পিলিং, মাইক্রোনিডলিং, পিআরপি, ফেস পিআরপি, বোটক্স, ফিলার প্রয়োগ করে থাকেন। কোনো ক্ষেত্রে সুঁচ বা শল্য চিকিৎসার মাধ্যমেও ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখা ও বয়সের ছাপ ধরে রাখার জন্য কিছু সার্জারিও করতে হয়। আশার কথা হলো বর্তমানে সৌন্দর্য বর্ধনে এসব অ্যায়েসথেটিকস চিকিৎসা সম্পর্কে অনেকেই সচেতন ও আগ্রহী হচ্ছেন। সাধারণত বয়স বাড়তে থাকলে বলিরেখা পড়াটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান অনেকেই। তাই চেহারায়  টান টান লাবণ্য ধরে রাখতে চাইলে যত্ন নিতে হয় এবং এন্টি এজিং ট্রিটমেন্ট নিলে ত্বকে বয়সের ছাপ মুছে দিয়ে তারুণ্যতা নিয়ে আসে। তাই এখন এন্টি এজিং ট্রিটমেন্ট খুবই জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি। শুধু নারীরা নয়, তরুণ-তরুণীরাও তাদের লুকটাকে মনের মতো তৈরি করে নিচ্ছে এসব চিকিৎসার মাধ্যমে। এই চিকিৎসাগুলো একটু ব্যয়বহুল হলেও অনেক সৌন্দর্য পিপাসু নারী-পুরুষরা চিকিৎসা নিতে কার্পণ্য করছেন না। তবে এ ধরনের চিকিৎসা নেয়ার আগে সঠিক চিকিৎসক ও সঠিক প্রতিষ্ঠান খুঁজে নিতে হবে। 

 

লেখক: সহকারী অধ্যাপক (সাবেক) চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার, ফার্মগেট, ঢাকা। প্রয়োজনে-০১৭১১-৪৪০৫৫৮

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status