ঢাকা, ১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে বছরে ক্ষতি ৪৫ হাজার কোটি টাকা: সিপিডি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৯ আগস্ট ২০২৪, সোমবার

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে, উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনার কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) 
বছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং বেসরকারি কোম্পানির কাছে বকেয়া বিল রয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সেই সঙ্গে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের সঙ্গে চুক্তির আওতায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে প্রতিবছর ৩৭ হাজার ৯৩ কোটি টাকার বাড়তি বোঝা টানতে হচ্ছে বিপিডিবিকে। গতকাল ধানমণ্ডির সিপিডি কার্যালয়ে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কার সিপিডি’র প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসব তথ্য তুলে ধরেন। 

এতে দ্রুত বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিশেষ আইন বাতিলসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংস্কারে ১৭টি প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি। যেগুলো বাস্তবায়ন জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকারকে এগুলো বাস্তবায়নের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ১০০ দিনের বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। সংবাদ সম্মেলনে কুইক ইনহ্যান্সমেন্ট অব ইলেক্ট্রিসিটি অ্যান্ড পাওয়ার সাপ্লাই অ্যাক্ট, ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইএমপি), ন্যাশনাল এনার্জি পলিসি ও রিনিওয়েবল এনার্জি পলিসি সংস্কারের জোর দাবি জানায় সিপিডি।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রথমে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় ধরনের সংস্কারে মনোনিবেশ করতে হবে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে জবাবদিহিতা বাড়াতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)কে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। বৈষম্য দূরীকরণ এবং ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে এই সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রথমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইন ২০১০ বাতিল করতে হবে। তৃতীয় পদক্ষেপ হতে হবে, যেসব কোম্পানি বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির জন্য অযাচিতভাবে নির্বাচিত হয়েছে, তাদের সঙ্গে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বাতিল করতে হবে। এ খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার কথাও জানান তিনি। টেকসই জ্বালানি রূপান্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে জোর দিতে হবে।

তিনি বলেন, ২০৪১ সালে বিদ্যুতের চাহিদা হতে পারে ২৭ হাজার মেগাওয়াট, রিজার্ভ মার্জিনসহ ৩৫ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় ৫৮ হাজার মেগাওয়াট ধরা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা, যা অযৌক্তিক। এই অতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রার সুযোগ নিয়ে বেসরকারি খাত এলএনজি, কয়লা আমদানির মতো অবকাঠামো তৈরির চাপ দিতে পারে। তাই এটার সংশোধন দরকার বলে আমরা মনে করছি।

নিবন্ধে বলা হয়, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সংস্কার করা দরকার। এর মধ্যে আছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা), বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বিইআরসি’র ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে ধীরে ধীরে। আইন সংশোধন করে কমিশনকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এটিকে যুগোপযোগী করে ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা দরকার। বিপিসি ও পিডিবি থেকে নিয়মিত তথ্য পাওয়া যায় না। তথ্য নিয়মিত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। বিপিসি’র স্বয়ংক্রিয় দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়া ত্রুটিযুক্ত। এখানে মুনাফা দেখা হয়েছে, ভোক্তাস্বার্থ দেখা হয়নি। গত পাঁচ বছরে বিপিসি ও পিডিবি’র বার্ষিক প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক সংস্থা দিয়ে পুনর্মূল্যায়ন করা জরুরি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গত কয়েক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করা জরুরি। তবে এর দায়িত্ব দেশের কোনো অডিট ফার্মকে না দিয়ে আন্তর্জাতিক অডিট ফার্মকে দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি হলে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে বলে মনে করে সংস্থাটি।

সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনটি ধাপে ছয় মাস, এক বছর ও তিন বছরের রূপরেখা তৈরি করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। দ্রুত সংস্কারের বিষয়গুলো এ সময়ের মধ্যে রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া স্বাধীন কমিটি গঠন করে বিদ্যুৎ খাতে ভুতুড়ে বিল তদন্ত করতে হবে প্রথম ছয় মাসেই। ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পে অনুযায়ী, চুক্তি সংশোধন করলে, ভর্তুকির চাপ কমবে। গ্রাহককে বাড়তি দাম দিতে হবে না বলেও আমরা মনে করছি। তিনি বলেন, দুর্নীতির চেয়েও বেশি ক্ষতি করেছে বিভিন্ন নীতি। দেড় থেকে দুই গুণ বেশি চাহিদা হিসাব করে প্রক্ষেপণ তৈরি করা হয়েছে। এমন নীতি তৈরিই করা হয়েছে একটা গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে। 

সিপিডি বলছে, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে। কোনো আন্তর্জাতিক চাপে যেন আবার দেশি কয়লা উত্তোলনে জোর দেয়া না হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে। তবে এটা যেন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিভিত্তিক না হয়। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে তারা আসতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত সূচনা হতে পারে। ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। রাশিয়ার সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলমান থাকবে। চীনের সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা তৈরি হবে না। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এএফবি’র মতো বৈশ্বিক আর্থিক সংস্থার সঙ্গে ব্যাপক অংশীদারিত্ব তৈরি হতে পারে।

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের দাবি জানিয়েছে সিপিডি। একই সঙ্গে নতুন করে রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমাদেরকে এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বের হয়ে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হতে হবে। এডিপিতে এলএনজি সংশ্লিষ্ট যেসব প্রকল্প রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।’
 

পাঠকের মতামত

খুবই সুন্দর ও মোটামুটি পূর্ণাঙ্গ একটি গাইড লাইন যা সরকারের অনেক টাইম ও খরচ বাঁচিয়ে দিয়েছেবলে মনে করছি! এখন শুধু সরকারের সদিচ্ছা দেখার প্রত্যাশা!!

Rahim
১৯ আগস্ট ২০২৪, সোমবার, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ধারা সংশোধন/ ১০ বছর পর্যন্ত সংগঠন নিষিদ্ধের প্রস্তাব

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status