মত-মতান্তর
রাষ্ট্রের সংস্কার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ইতিহাসের শিক্ষা
শরীফ আস্-সাবের
(৫ মাস আগে) ১৩ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার, ১:৩৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৭:০৬ অপরাহ্ন
রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ একটি সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। এই অস্থির সময়ের নানা ঘাত-প্রতিঘাত, প্রজ্ঞা ও ধৈর্যের সাথে সামলে নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যার ফলশ্রুতিতে ধীরে ধীরে দৈনন্দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে, জনজীবনে ফিরে আসছে শান্তি, স্বস্তি ও আস্থা।
ইতোমধ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে বিচারবিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারের মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানেও ইতিবাচক পরিবর্তন শুরু হয়েছে। তবে এখনও দেশ পুরোপুরি সংকটমুক্ত হয়নি। এখনো জানা-অজানা কিছু অশুভ শক্তি ছাত্র -জনতার স্বতঃস্ফুর্ত আন্দোলনকে নস্যাৎ করার ষডযন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাই ড. ইউনূস এবং সংগ্রামী ছাত্র-জনতাকে রাষ্ট্রের পরিচালনা ও সংস্কারে বেশ সাবধানী এবং কুশলী হতে হবে।
দেশ পূনর্গঠন ও সংস্কারের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ সঠিক ও লাগসই নীতিনির্ধারণের প্রথম ও প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে ইতিহাসভিত্তিক তথ্য, উপাত্ত ও তত্ত্ব সংগ্রহ করে তা অভিনিবেশ সহকারে আত্মস্থ করা, যা নতুন সরকারকে মূল সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে তার সঠিক সমাধানে সহায়তা করবে।
তবে, দু:খজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের অনেকের কাছেই ইতিহাস কমবেশি বিরস এবং গোলমেলে একটি বিষয়। আর্য-অনার্য ইতিহাস পর্যন্ত যাওয়া তো দূরের কথা, এদের অধিকাংশই দেশের স্বাধীনতা এবং তৎপূর্ববর্তী শতবর্ষের ঐতিহাসিক প্রেক্ষপট সম্পর্কে খুব একটা অবহিত কিংবা সচেতন নন। জটিল আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি সম্পর্কেও তাদের কোনো সম্যক ধারণা নেই। উপমহাদেশে অতীতের অসংখ্য সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন দল, নেতা এবং জনগণের প্রকৃত ভূমিকা সম্পর্কেও তারা পুরোপুরি অবগত নন।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, বঙ্গভঙ্গ ও বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৪৭ এর দেশভাগের সময় পূণরায় বঙ্গভঙ্গ কেন হয়েছিল তা জানা যেমন জরুরি, একই সাথে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের কারণ ও নির্ঘন্টের সত্যিকারের স্বরূপ উদঘাটন এবং অনুধাবন করাও প্রয়োজন।
মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের সঠিক সংখ্যা ও তালিকা আজো চূড়ান্ত হয়নি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ও তালিকা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ ও বিতর্ক। এছাড়া, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে উপর্যুপরি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণসহ সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষপট ও বাস্তবতা সম্পর্কেও জানা দরকার। স্বাধীনতা উত্তর সময়ে সরকারের প্রকৃতি এবং ধরণ নিয়ে সামরিক ও বেসামরিক পর্যায়ে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে যা গণতন্ত্রের সংস্কৃতি এবং অবাধ ও সুষ্ঠ রাজনৈতিক পরিবেশ ও চর্চাকে ব্যপকভাবে ব্যহত করেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ভিনদেশী সরকার, সংস্কৃতি ও ব্যক্তির ভূমিকা নিয়েও রয়েছে ব্যপক সমালোচনা ও বিতর্ক। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বিতর্ক আরো জোরদার হয়েছে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এই আপাতঃ স্পর্শকাতর বিষয়টি ড. ইউনূসের সরকারকে অত্যন্ত সাবধানতা ও বিচক্ষণতার সাথে বিবেচনা করতে হবে।
যে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য এবং দেশ ও জনতার সত্যিকারের শত্রু-মিত্র চিহ্নিত করার জন্য ঘটমান এবং ঘটে যাওয়া বিষয়াদি ও বিবর্তনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত ও কারণ অনুসন্ধান ও অনুধাবনের কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে চলমান সংকট থেকে উত্তরণের যথাযথ পথ খুঁজে পাওয়া দুরূহ হয়ে উঠতে পারে, রাষ্ট্র সংস্কারের সকল আয়োজন ভুল পথে পরিচালিত হতে পারে, ব্যর্থ হতে পারে সাঈদসহ অগনিত শহীদের রক্ত এবং মুখ থুবরে পড়তে পারে দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতার হার্দিক প্রচেষ্টা।
মোদ্দা কথায়, রাষ্ট্রের সংস্কার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ইতিহাসকে অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই। সত্যিকারের ইতিহাস না জানলে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে না পারলে, অনাকাঙ্খিত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে। এই মহাসত্য এবং চলমান অস্থির সময়ের আলোকে আমি সরকার এবং আমাদের সবার প্রিয় ছাত্র-জনতাকে এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করবো।
—
লেখক ড. শরীফ আস্-সাবের শিক্ষক, কলামিস্ট, কবি ও সাবেক আমলা
আমাদের তরুনরাই আমাদের ভবিষ্যত তাদেরকে এদেশের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে বিশেষকরে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, বাংলাভাগ,পাকিস্তান সৃষ্টি থেকে বাংলাদেশের অভ্যুদয়