শেষের পাতা
হাসিনাকে আশ্রয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে না
কূটনৈতিক রিপোর্টার
১৩ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবারছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া শেখ হাসিনাকে ভারত দীর্ঘদিন আশ্রয় দিলে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে- এমন আশঙ্কা নাকচ করলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাকে হাইপোথিক্যাল (অনুমানমূলক) উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, একজন যদি কোনো এক দেশে গিয়ে থাকেন, তাহলে ওই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে কেন? এর কোনো কারণ নেই। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্যানভাসটি ‘অনেক বড়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেকোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কেও স্বার্থ মুখ্য। বন্ধুত্বটাও স্বার্থ বিবেচনায় হয়ে থাকে। তিনি বলেন, এখানে দুই পক্ষের স্বার্থ আছে, ভারতের স্বার্থ আছে; ভারতে আমাদেরও (বাংলাদেশের) স্বার্থ আছে। কাজেই আমরা সেই স্বার্থকে অনুসরণ করবো। আমরা বিদ্যমান সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবো। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিং শেষে একাধিক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। নতুন সরকারের প্রথম কূটনৈতিক ব্রিফিং ছিল এটি। ব্রিফিং শেষে উপদেষ্টা উপস্থিত গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়।
অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সহায়তা চেয়েছি। তারা এগিয়ে এসেছে। আমরা বলেছি, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় যুক্ত হতে চাই। সবক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ সবার সঙ্গে। রোহিঙ্গা ইস্যু, বিনিয়োগের ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন এসেছে। আমরা বলেছি তারা যেন হতাশ না হন। এত বড় একটা পরিবর্তন হয়েছে, সব কিছু স্বাভাবিক হতে খানিকটা সময় লাগবে। ব্রিফিংয়ে কূটনীতিকরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। তবে কূটনীতিকদের কেউ আক্রান্ত হয়নি। তাদের চ্যান্সারি, রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে সিকিউরিটি নেই। এটা আমি তাদের নিশ্চয়তা দিয়েছি যে, এক থেকে দুই দিনের মধ্যে অনেক কিছু ঠিক হয়ে যাবে, যেহেতু পুলিশ রাস্তায় নামা শুরু করেছে। তৌহিদ হোসেন বলেন, একজন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, যুবকরা এত বড় একটা কাজ করলো। আগামীতে যেন যুবকদের মধ্যে যেন একটা নেতৃত্ব আসে। আমি বলেছি, দু’জন ছাত্র কাউন্সিলে আছে। দূতদের অনেকে মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরাও বলেছি, মানবাধিকার নিয়ে সরকার খুবই সিরিয়াস।
উপদেষ্টা কূটনৈতিকদের জানিয়েছেন, এ সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এ নিয়ে কারও কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকার কথা নয়। উপদেষ্টা বলেন, আমরা সময়ের ব্যাপারে বলছি না। ছাত্ররা কি পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার জন্য জীবন দিয়েছে? তাদের কিছু চাওয়া আছে। কিছু রিফর্মের প্রয়োজন পড়বে। আমরা যেটুকু সময়ের প্রয়োজন পড়বে ঠিক সেই সময়টুকু, বেশি থাকবো না, কমও থাকবো না। রিফর্মগুলো অন্তত পথে এনে দিয়ে যেতে হবে। সবকিছু কেউ করে দিয়ে যেতে পারবে না ছাত্রদের যে চাওয়া সেটা যেন পথে এনে দিয়ে যাওয়া যায়।
বিদায়ী সরকারের পরিকল্পনায় থাকা বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন এনগেজমেন্ট আটকে যাওয়া প্রশ্নে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ঠিক এই মুহূর্তে আমরা কোনো কিছু থেকে সরে যাবো এমন না। যার সঙ্গে যে চুক্তি আছে বা কমিটমেন্ট আছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বা দ্বিপক্ষীয় ব্যাপারে সেগুলো কিন্তু যে কমিটমেন্ট বাংলাদেশ করেছে অবশ্যই আমাদের রক্ষা করতে হবে। যেখানে আমাদের মনে হবে স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে সেখানে আমাদের স্বার্থটা সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিবো।
হিন্দুদের ওপর আক্রমণ নিয়ে প্রোপাগান্ডা চলছে, এটা কাউন্টার করতে হবে: উপদেষ্টা
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর হিন্দুদের ওপর হামলার বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে নেতিবাচকভাবে প্রচারণার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘যে ইস্যুগুলো এসেছে, প্রোপাগান্ডাগুলো এসেছে সেটার কাউন্টার প্রোপাগান্ডা করতে হবে।’ গণমাধ্যমকর্মীদের এ বিষয়ে মিডিয়াতে গ্রাউন্ড রিয়েলিটি তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা গ্রাউন্ডে না থেকে একটা পজিশন নিয়েছে। এখান থেকে কিছু ভুল তথ্য অনেক ক্ষেত্রে দেয়া হয়েছে।’ কোনো ধরনের সহিংসতা, মানুষের ক্ষতি করা, আগুন দেয়া, অত্যাচার করা কোনো ভাবেই টলারেট করা হবে না বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। বলেন, ‘প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই তদন্ত করা হবে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
আমরা অন্য কোনো দেশের আদেশে চলছি না: উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণ বিদেশি কোনো দেশের হাতে কিনা? এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাফ জবাব, বাইরের কারও নিয়ন্ত্রণে সরকার নেই। যে কাউন্সিল এখন দায়িত্বে আছে আমি কিন্তু এটাকে ‘ক্ষমতার সরকার’ একেবারে ব্যবহার করতে চাই না। এটা একটা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব পালন করে আমরা সরে যাবো, এই হলো কথা। পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, যে উপদেষ্টা কাউন্সিল আছে আমি নিশ্চিত করতে পারি এরমধ্যে কেউ অন্য কারও জন্য বিড করছেন না। সবাই বাংলাদেশের জন্য বিড করছেন। কেউ অন্য কোনো দেশের জন্য বিড করছেন না। কূটনীতিক ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ভারত, চীন রাশিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারসহ প্রায় ৬৪ জন কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন।
You ask India to hand Hasina over to Bangladesh immediately for facing justice.