শেষের পাতা
আজবাহার বদলি সিলেটে পুলিশকে গোছানো হচ্ছে
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১২ আগস্ট ২০২৪, সোমবারআন্দোলনকালীন সময়ে নেতৃত্ব দেয়া সিলেট নগর পুলিশের ডিসি (উত্তর) আজবাহার আলী শেখকে তার কর্মস্থল থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ডিসি উত্তরের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দক্ষিণের ডিসি সোহেল রেজাকে। এ ছাড়া কোতোয়ালি থানার ওসি মঈন উদ্দিন শিপনকে সরিয়ে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই রদবদলের মধ্যে সিলেটে পুলিশের কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে কাজ শুরু করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নগরে ভাঙচুর ও জ্বালিয়ে দেয়া থানা ও ফঁাঁড়ি পরিদর্শন করেছেন তারা। সিলেটের আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা ডিসি আজবাহার আলী শেখ। দীর্ঘদিন সিলেট নগর পুলিশের এই পদে আসীন ছিলেন। অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত আজবাহার শেখের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। ছাত্রদের কাছে তিনি ছিলেন আতঙ্কের নাম। নগরের কোর্ট পয়েন্ট, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তার নেতৃত্বেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হয়। তার সঙ্গে বারবার মুখোমুখি হতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। শনিবার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়েছে; আজবাহার আলী শেখকে সিলেট পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের উপ-কমিশনার হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে। উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) হিসেবে কর্মরত মোহা. সোহেল রেজাকে উপ-কমিশনার (উত্তর) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অপর এক আদেশে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহম্মদ মঈন উদ্দিনকে বদলি করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। আর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এয়ারপোর্ট থানার ওসি হিসেবে দায়িত্বরত মোহাম্মদ নুনু মিয়াকে। এদিকে- স্বল্প পরিসরে সিলেট নগরের ৬টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন। গতকাল সকালে সিলেটের ক্ষতিগ্রস্ত লামাবাজার, বন্দরবাজার ও সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ি পরিদর্শন করেছেন কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান। এ সময় পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, দুর্বৃত্তরা ও পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দিয়েছে, গাড়ি পুড়িয়েছে। নগর পুলিশের সবক’টি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লুট হওয়া অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধারে কাজ করছে পুলিশ। পাশাপাশি পুড়ে যাওয়া নথিপত্র পুনরুদ্ধারে আদালতের সহায়তা নেয়া হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের পাশাপাশি কার্যক্রম স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে অনেক পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন। অন্যদের কাজে যোগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক। তবে ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
পরিষ্কার করা হচ্ছে এসপি অফিস: সিলেটে ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল পুলিশ সুপারের কার্যালয়। বলতে গেলে কোনোকিছুই অবশিষ্ট নেই। ধ্বংসস্তূপে পরিণত পুরো কার্যালয়। গতকাল দেখা গেছে; অফিস প্রাঙ্গণে থাকা পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। প্রাঙ্গণে পড়ে রয়েছে ৩-৪টি গাড়ির পোড়া কঙ্কাল। নেই ৪ তলা ভবনের বেশিরভাগ কক্ষের দরজা-জানালা। কোনো আসবাবপত্র অক্ষত নেই। ফাইলপত্র ভষ্ম। ৫ই আগস্ট বিকালে আগুন লাগানো হয়েছিল এ অফিসে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যালয়টির বিভিন্ন কক্ষ থেকে আগুনের ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পরদিন দুপুর ১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম এসে ধোঁয়া ওঠা কক্ষগুলোতে পানি নিক্ষেপ করে। এদিকে গতকাল থেকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সিনিয়র কর্মকর্তারা অফিসে এসে এ কার্যক্রম শুরু করেন। পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অফিসে কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। সব পুড়ে গেছে। বিশেষ করে দু’তলা ও তিন তলা পুরোটাই পুড়ে গেছে। এখন পুড়ে যাওয়া অংশ পরিস্কার করতে হচ্ছে। কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে কেমন সময় লাগবে- কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে যত দ্রুত সম্ভব কার্যক্রম শুরু করার চেষ্টা রয়েছে বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে থানায়সহ সবক’টি অফিসের ফোর্সকে কাজে ফেরাতে হচ্ছে। অনেকেই এখনো আসেননি। তারা দ্রুত চলে আসবেন বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।
ভয়ংকর দলবাজ,তার নেতৃত্বে ২০১৮ সালের নির্বাচনে সিলেটে কারচুপির নৈশ ভোট হয়েছিল ।