মত-মতান্তর
শেখ হাসিনা, একজন গণতন্ত্রের মানসকন্যার নাকি ডিক্টেটরের পতন ?
ব্যারিস্টার আব্দুস শহীদ
(৫ মাস আগে) ১০ আগস্ট ২০২৪, শনিবার, ৯:৪৮ পূর্বাহ্ন
একজন সাবেক ছাত্রলীগারের সংক্ষিপ্ত অ্যাসেসমেন্ট:
এমসি কলেজে যখন ইন্টারমেডিয়েট পড়ি তখন ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলাম। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতেও ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য ছিলাম। ইংল্যান্ডে যখন পড়াশোনা করতে আসি সেই ১৯৯৮ থেকে আর কোনো পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশি পলিটিক্স করার কোনো সু-যুক্তি খুঁজে পাইনি বিধায় আর বাংলাদেশি কোনো পলিটিক্সের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত হইনি। কিন্তু বিদেশ থেকেও লেখালেখি অব্যাহত রাখি। এক পর্যায়ে কথা বলার স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলি, অথবা বলতে পারি এরকমই কোনো কারণে লেখালেখি করার ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলি । সদ্য অতীত হওয়া সরকার সমালোচনা বরদাস্ত করা বন্ধ, কিছু চাটুকার স্বল্প বুদ্ধির লোক দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠন, অনেকগুলো গুম, খুনের ঘটনা, প্রহসনের বিচার ব্যবস্থার প্রচলন ইত্যাদি কারণে স্বাধীনভাবে লিখতে অনীহা চলে আসে।
চলে আসি মূল প্রসঙ্গে-
যদি কিছু ভালো শব্দ চয়ন করতে চাই শেখ হাসিনার শাসন এবং ব্যক্তি শেখ হাসিনা সম্পর্কে তাহলে জেনেরিকভাবে বলতে পারি যেমন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি তার নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়নে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন । তিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা । শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন যা অবশেষে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দেয়। তার পিতার দূরদৃষ্টি, সংকল্প এবং আত্মত্যাগ বাংলাদেশিদের একটি প্রজন্মকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য সংগ্রাম করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। শেখ হাসিনা তার পিতার উত্তরাধিকার বহন এবং বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি, বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সক্রিয়করণে কিছুটা হলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তার সম্মান ও প্রশংসা অর্জন করেছেন। এতটুকুই যথেষ্ট এবং সাহস করে বলা যায়।
শেখ হাসিনার অতিমাত্রায় ভারতপ্রীতি, ভারতের প্রতি নিজের জীবনের নিরাপত্তা ও ক্ষমতার নিরাপত্তা চাওয়া ছাড়া যে আর কোনো বিকল্প ছিল না তা শেখ হাসিনা নিজে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন শেষ পর্যন্ত ।
শেখ হাসিনা যখন ২০০৯ সাল ক্ষমতায় আসেন ধীরে ধীরে তিনি স্বৈরশাসক হিসেবে আবির্ভূত হতে থাকেন। কথিত আছে তিনি প্রকৃত ভোটারবিহীন গত ৩টি পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন নেতাদের অন্যতম । যদিও তাকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন উদ্যোগের জন্য কৃতিত্ব দেওয়া যেতে পারে (এবং অনেকেই নির্দ্বিধায় তা মেনে নেবেন), কিন্তু তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম স্বৈরাচারী সরকার হিসেবে সমালোচনা কখনো এড়াতে পারবেন বলে মনে হয় না। অন্যতম স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের মধ্যে - মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া, খুন, গুম, ফাঁসিরকাষ্ঠে ঝোলানো, বিচারব্যবস্থায় নিজের পার্টির অযোগ্য কর্মীদের বসানো, জোরপূর্বক সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি অপসারণ, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, পার্লামেন্টের আসন বিক্রয়, ভিন্নমতের দমন, শিশুসুলভ আচরণ, দেশটাকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর বিধিনিষেধসহ বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বের একটি প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য হল তার প্রশাসনের মধ্যে কর্তৃত্বের কেন্দ্রীকরণ। বছরের পর বছর ধরে তার সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিরোধীদের বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং অন্যান্য ভিন্নমতের কণ্ঠকে প্রান্তিক করার অভিযোগ আনা হয়েছে। অনেক বিরোধী নেতা বিনা দোষে কারাবাস বা নির্বাসনের সম্মুখীন হয়েছেন, যা কার্যকরভাবে দেশে রাজনৈতিক বহুত্ববাদকে দুর্বল করে দিয়েছে। ক্ষমতার এই কেন্দ্রীভবন গণতান্ত্রিক নীতিগুলো নিয়ে উদ্বেগের বিষয় ছিল যা বহুদলীয় গণতন্ত্রের অন্তরায়।
শেখ হাসিনার শাসনে বাংলাদেশের মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপ ক্রমশ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল । সরকারের সমালোচনাকারী সাংবাদিক এবং সংবাদ আউটলেটগুলো প্রায়শই ভয়, হয়রানি, প্রতিহিংসা বা আইনি প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়। ২০১৮ সালে প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বিশেষভাবে বিতর্কিত হয়েছে। কারণ এটি ভিন্নমতকে নীরব করতে এবং সরকারের ক্রিয়াকলাপের সমালোচনা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হয়েছে। শেখ মুজিবের পরিবারের সমালোচনা অপরাধ আইন প্রণয়ন এবং এই ধরনের জঘন্য পদক্ষেপগুলো এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে বাকস্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে অপহরণ করা হয়েছিলো নিরাপদে বলা চলে। দেশের সাংবাদিক, লেখক এবং সাধারণ নাগরিকরা তাদের মতামত প্রকাশে নিরুৎসাহিত বোধ করতে শুরু করেন ।
২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচন ভোটারদের ভয়ভীতি, সহিংসতা এবং কারচুপির অভিযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যা অনেকেই নির্বাচনী ফলাফলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন । সমালোচকরা যুক্তি দেন যে সরকার ক্ষমতায় তার অব্যাহত দখল নিশ্চিত করার জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে দুর্বল করেছে। এই ক্রিয়াকলাপগুলো তার শাসনামলকে একটি স্বৈরাচারী শাসনের দিকে ধাবিত করতে থাকে । কারণ এগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মতো গণতন্ত্রের মূল উপাদানগুলোকে একেবারেই নষ্ট করে দেয়।
যদিও শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক অগ্রগতির মতো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছেন, যেমন মেট্রোরেল চালু , পদ্মাসেতু ছিল সাহসী পদক্ষেপ। কিন্তু তার ভালো ভালো কর্মকাণ্ডগুলো দমনপীড়ন নীতি ছাত্র আন্দোলন হত্যার মাধ্যমে প্রতিহত এবং সর্বোপরি দেশ ছেড়ে পলায়ন তার শাসনকে ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়ে রূপান্তরিত করে তুলেছে। তার শিশুসুলভ এবং তিনি প্রায়ই স্বৈরাচারী শাসনের সাথে যুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোকে তার কর্মকাণ্ডে প্রস্ফুটিত করে তোলেন। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা যখন তার শাসনামল দেশ এবং বিদেশে স্বৈরাচারী হিসাবে চিহ্নিত, নাগরিক স্বাধীনতা অপহরণকারী, গণতন্ত্রের হত্যাকারী হিসেবে আবির্ভূত হতে থাকেন , তখন শেখ হাসিনার সরকারের পতন ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র । এই নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটাবিরোধী আন্দোলনগুলো ছিল গণবিস্ফোরণের উপসর্গ মাত্র। ইতিহাসে পার্টিকুলারলি মডার্ন ইতিহাসে কোনো স্বৈরশাসক দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে দেখা যায় না। উদাহরণস্বরূপ গাদ্দাফি, সাদ্দাম, হোসনে মোবারাকদের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে ।
(ফেসবুক থেকে)
খুব সুন্দর একটা article পড়লাম।ধন্যবাদ আপনাকে
হাসিনা বাংলাদেশে তার দেড় দশকব্যাপী স্বৈরশাসনের ভিত্তি গড়েছিলেন ব্যক্তিপূজা, বিকৃত ইতিহাস ও কল্পনাশ্রয়ী রূপকথা মিশ্রিত কাল্ট রচনার মাধ্যমে। জনগণকে গৌণ করে এবং ব্যক্তিপূজার পৌত্তলিকতাকে মহিমামণ্ডিত করে হাসিনা সব ভিন্নমত দমিয়ে দিয়ে একক মত প্রতিষ্ঠার এক নিষ্ঠুর শাসন প্রবর্তন করেছিলেন
লেখার ক্যাপশন টা সঠিক হয়নি ক্যাপশন টা এই ভাবে হলে ভালো হতে " দাম্ভিক নিষ্ঠুর স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন"।
শেখ হাসিনা ভালো কি খারাপ সে টা সাদ্দামের মুরাল আর জাতির জনকের মুরাল দিয়েই বলা যায়। তবে সাদ্দাম নিজে ভূপতিত হয়েছিল আর হাসিনার কর্মকাণ্ডের জন্য তার বাবার মুরাল ফেলে দিয়েছে এইটাই ডিক্টেটরের সর্বোচ্চ শাস্তি।