শেষের পাতা
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
মানবজমিন ডেস্ক
৭ আগস্ট ২০২৪, বুধবারবাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সকল পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে তারা। নিয়মিত ব্রিফিংয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, আমরা সামনের দিনগুলোতে সবাইকে শান্ত ও সংযমের আহ্বান জানাই। মিলার বলেছেন, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যেকোনো পরিবর্তনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে।
৫ই আগস্ট স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন মুখপাত্র মিলার। তার কাছে স্টেট ডিপার্টমেন্টের সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা জানতে চান। এক প্রশ্নে তিনি জানতে চান, বাংলাদেশে স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কয়েক শ’ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। যার বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এখনো অস্পষ্ট।
জবাবে মিলার বলেন, এখানে কয়েকটি বিষয় জড়িত। প্রথমত, যারা গত কয়েক সপ্তাহে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা। আমরা এখন সহিংসতার অবসান এবং জবাবদিহিতাকে সমর্থন করার দিকে মনোযোগী হয়েছি। গণতান্ত্রিক নীতি, আইনের শাসন এবং বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।
মুশফিক আরও জানতে চান, আপনি জবাবদিহিতার কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন এবং তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর কোনো একটিতে আশ্রয় পেতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র কি হাসিনাকে প্রবেশের অনুমতি দেবে? যেহেতু তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। এই প্রশ্নের জবাবে মিলার বলেছেন তিনি এ বিষয়ে অবগত নন।
অন্য একজন সাংবাদিক মিলারের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশে সরকারের সাম্প্রতিক পতন সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি। সেখানে ব্যাপক সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু এবং সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে যে নৃশংসতার খবর পাওয়া যায় তা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র বা এর পররাষ্ট্র দপ্তর কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?
জবাবে মিলার বলেন, এক্ষেত্রে আমি যা বলছি, প্রথমত আমরা আজকে যা বলছি তা হলো- সহিংসতার অবসান এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এখন জবাবদিহিতা কীভাবে নেয়া হবে এটি বাংলাদেশের আইনের অধীনে নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতার জন্য যিনিই দায়ী হোন তাকে আইনের আওতায় আনা উচিত।
একজন সাংবাদিক আরও জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্র কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করে? জবাবে মিলার বলেন, আমরা বলতে চাই- জনগণই বাংলাদেশ সরকারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। মিলারের কাছে আরেক সাংবাদিক জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সেনাবাহিনী বা সাবেক সরকারের সঙ্গে কি যোগাযোগ করেছে? মিলার এ বিষয়ে বলেন, আমার কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। দূতাবাস থেকে যোগাযোগ হতে পারে, কিন্তু আমি এর কোনো বিষয় সম্পর্কেই অবগত নই।
ওই সাংবাদিক আরও জানতে চান, বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন সরকার বেশ কিছু ইস্যুতে কাজ করছিল যা বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আপনার কী মনে হয় সাম্প্রতিক ইস্যু কী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আবাসনকে প্রভাবিত করবে? জবাবে মিলার বলেন, বাংলাদেশে শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পরবর্তীতে কী হবে এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য নেই। সরকারের সঙ্গে এই কর্মসূচিগুলো প্রভাবিত হোক এটি আমি চাই না। আমরা মনে করি যে, বাংলাদেশের এই শরণার্থীদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবো।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের আরেক সংবাদদাতা মিলারের কাছে বাংলাদেশ ইস্যুতে প্রশ্ন করেন। তিনি জানতে চান, আমি অনুমান করছি বাংলাদেশে একটি নতুন অভ্যুত্থান হয়েছে যদিও ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। আমি জানতে চাই বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সহায়তা কী অব্যাহত থাকবে? বিশেষ করে সামরিক সহায়তা? জবাবে মিলার বলেন, আমরা জানি যে, সেখানকার সরকার পদত্যাগ করেছে। তবে কীভাবে পদত্যাগ হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য নেই আমাদের কাছে। এটি স্পষ্টতই আর্থিক প্রশ্নে ২০২৩ সালের অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র ২১২ মিলিয়নেরও বেশি সহায়তা প্রদান করেছে। এসব কর্মসূচির বিষয়ে আমাদের কোনো বাধা নেই আমরা সেগুলো অব্যাহত রাখতে চাই। এ ছাড়া ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে আমরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে ২ বিলিয়নের বেশি মানবিক সহায়তা প্রদান করেছি।