শেষের পাতা
বগুড়ায় ভয়াল দৃশ্য, গুলিতে নিহত ৪
প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে
৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবারগতকাল সকাল থেকেই সাধারণ মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসতে থাকে। সবার হাতে বাঁশের লাঠি, রড, স্টিলের পাইপ। নারী, শিশু, কিশোর এবং বয়স্করাও ঘরে বসে ছিল না। দিনব্যাপী যুদ্ধ। পুলিশের টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসে পুরো শহর জুড়ে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। থেমে থেমে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৫ শতাধিক।
শহরের বড়গোলা, টিনপট্টি, বাদুড়তলা, স্টেশনরোড, শেরপুর রোড, গোহাইল রোড, গালাট্টি, নবাববাড়ী রোড, জলেশ্বরীতলাসহ মূল সাতমাথায় দখলে দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুঞ্জুরুল আলমের ব্যক্তিগত কার্যালয়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপুর বাড়িতে আগুন, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনির কার্যালয়, জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে আগুন, ভাঙচুর, ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ ভাঙচুর, প্রধান পোস্ট অফিস, টিঅ্যান্ডটি ভবন, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, জাসদ অফিস, সদর উপজেলা ভূমি অফিস। বিআরটিসি ট্রাক ডিপোতে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। দুপচাঁচিয়া উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি অফিসেও আগুন-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
বগুড়ায় পুলিশের গুলিতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে শিবগঞ্জের সেলিম উদ্দিন (৪৫) একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক। সেলিম জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর সামনে পুলিশের গুলিতে মারা যায়। বাকি মৃতদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। দুপচাঁচিয়া উপজেলায় পুলিশের গুলিতে নিহত মনির নামের ব্যক্তি। তিনি থানা ঘেরাও করার সময় নিহত হন।
দিনের প্রথম প্রহরে সকাল ৯টার দিকে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীরা হাতে লাঠি নিয়ে সাতমাথায় অবস্থান নেয়। এ সময় কিছু আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে। তবে বেলা ১০টার দিকে বিভিন্ন সড়ক থেকে আন্দোলনকারীরা সাতমাথায় প্রবেশ করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। এরপর থেকেই আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগানে উত্তাল করে তোলে বগুড়া শহর। ওইসময় পুলিশ সার্কিট হাউজ এলাকায় অবস্থান নিয়ে থাকে। ১১টার দিকে বগুড়া জেলা ও দায়রা জর্জ আদালতের ভেতর থেকে কিছু আইনজীবী একটি মিছিল নিয়ে বের হয়ে সাতমাথায় প্রবেশ করে। এ সময় পুলিশরাও সাতমাথার দিকে এগুলে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে আন্দোলনকারীরা পিছু হটে বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয়। বর্তমানে শহরের বড়গোলা, জলেশ্বরীতলা, সাতানীবাড়ি, রেলস্টেশন এলাকা, গোহাইল রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক লাখ আন্দোলনকারী অবস্থান নিয়ে আছে ও সড়কের উপর টায়ার ও বিভিন্ন কাঠের গুঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
দুপচাঁচিয়ায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শামছুন্নাহার। এবং বগুড়ায় দু’জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ। দুপচাঁচিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সনাতন চন্দ্র বলেন, আন্দোলনকারীরা আমাদের থানায় আক্রমণ করে ভাঙচুর করেছে।