শরীর ও মন
স্লিপ এপনিয়া: ঘুমের মাঝে নীরব ঘাতক
ডা. ম. মঈনুল হাফিজ
১৮ এপ্রিল ২০২২, সোমবারঘুমের মাঝে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়াকে স্লিপ এপনিয়া বলা হয়। স্লিপ এপনিয়া সারা বিশ্বের একটি অবহেলিত ঘাতক ব্যাধি। যা ঘুমের সময় মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। সম্প্রতি ভারতীয় বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ও মিউজিশিয়ান বাপ্পী লাহিড়ীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে স্লিপ এপনিয়াকে দায়ী করা হয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ২ শতাংশ নারী ও ৪ শতাংশ পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশেও নারীদের তুলনায় পুরুষদের এ রোগে আক্রান্তের হার বেশি। সাধারণত গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহুরে জনসংখ্যার ৬ শতাংশ এই ব্যাধির শিকার। এর মধ্যে পুরুষ ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে এই রোগের হার ২ দশমিক ১৪ শতাংশ।
যাদের নাক ডাকার সমস্যা, ঠিকমতো ঘুম হয় না, শরীর স্থূলাকার, তারা এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। এ রোগের চিকিৎসা রয়েছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে কোনো কোনো রোগীর সার্জারিরও প্রয়োজন হয়। কিন্তু হতাশার কথা হলো বেশির ভাগ লোকই স্লিপ এপনিয়া রোগ সম্পর্কে মানুষ জানে না এবং বাংলাদেশে স্লিপ এপনিয়ায় ৯০ শতাংশ রোগী চিকিৎসার আওতার বাইরে।
যে কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়:
ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস হওয়ার ফলে যে বাতাস বের হয় তাতে শরীর থেকে মূলত কার্বন ডাই অক্সাইড বেরিয়ে যায়। কার্বন ডাই অক্সাইডের লেভেল কমে গেলে একজন মানুষের শরীরে থাকা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর কিছুক্ষণ দম বন্ধ থাকার কারণে শরীরের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে আবার কার্বন ডাই অক্সাইডের লেভেল বেড়ে গেলে তখন নার্ভাস সিস্টেম আবার উজ্জীবিত হয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস ফিরে আসে। ঘুমের মাঝে এই যে শারীরবৃত্তীয় পরিস্থিতি এটা বেশ জটিল এবং অনেক সময় এই কারণে একজন মানুষের মৃত্যুও ঘটতে পারে।
চিকিৎসা:
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, শ্বাসনালীকে কেন্দ্র করে কোন জায়গাগুলোতে বাধা আছেÑ পরে সেগুলো চিহ্নিত করে তা অপসারণ করতে হয়। এমন ক্ষেত্রে অল্প সময়ে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
কিন্তু জটিল স্লিপ এপনিয়া যেহেতু শরীরের অন্যান্য অনেক গুরুতর সমস্যা থেকে হয়, তাই এর চিকিৎসা আজীবন চালাতে হতে পারে। তবে সতর্ক থাকলে এবং যথাযথ চিকিৎসা নিলে এই রোগ এড়ানো সম্ভব। বিশেষ করে শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং সুষম খাদ্যাভাস করতে হবে। এ ছাড়া ঘুমের মধ্যে বার বার দম বন্ধ হয়ে এলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভালো থাকা সম্ভব।
লেখক: নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ও হেড-নেক সার্জন
চেম্বার: ENT Care Center
রোড-৩৫, হাউজ-৩৮/এ (সানমার টাওয়ার-২, ল্যাবএইডের পাশে),
লেভেল-১৩, গুলশান-২, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল-০১৭২৭-০৪৬৭১৫, ০১৭১১৫৪২৮০০।