শেষের পাতা
১৫ দিন লড়াইয়ের পর থেমে গেল সেলিমের জীবন
স্টাফ রিপোর্টার
২ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবার
জীবন প্রদীপ নিভে গেল সেলিম তালুকদার রমজানের। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। ১৫ দিন গুলির ক্ষত নিয়ে হাসপাতালের বেডে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন সেলিম। কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে ১৮ই জুলাই মাথায়, বুকে ও পিঠে তার গুলি লাগে। ফুসফুসেও লাগে গুলি। চার হাসপাতাল ঘুরে শেষে ভর্তি হন ধানমণ্ডির পপুলারে। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন গুলিবিদ্ধ ৩১ বছর বয়সী সেলিম। গতকাল সকাল ৮টায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে গতকাল কথা হয় উপস্থিত নিহতের স্বজন ও সহপাঠী বন্ধুদের সঙ্গে। স্বজনরা জানান, ঘটনার দিন তিনি বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। ১৮ই জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন সেলিম। কে বা কারা প্রথমে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নেন তাকে। সেখানে গুলিবিদ্ধ রোগীর মোবাইল থেকে সেলিম তালুকদারের মায়ের সেভ করা মোবাইল নম্বরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফোন দেন। এরপর ওই ফোনটি আর পাওয়া যায়নি। ফোন পেয়েই স্বজনরা দ্রুত ওই হাসপাতালে ছুটে যান। রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে স্বজনরা ঢাকার গ্রীন রোডের ৩টি বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরেন। কোথাও আইসিইউতে সিট খালি পাননি। একই সঙ্গে প্রশাসনিক হয়রানির ভয়ে গুলিবিদ্ধ রোগীকে ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানান বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। রোগীর স্বজনরা পরের দিন ধানমণ্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করান সেলিমকে।
নিহতের স্বজন ও সহপাঠী বন্ধুরা আরও জানান, ১৮ই জুলাই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ সেলিম তালুকদার নারায়ণগঞ্জ বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মার্চচেন্ডাইজার পদে চাকরি করতেন। তারা তিন বোন, এক ভাই। তিনি ছিলেন মেজ। তাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামে। ঢাকায় কুমিল্লা পাড়া বাড্ডা লিংক রোডে তাদের বাসা। ৮ মাস আগে বিয়ে করেন সেলিম। বিজিএমই ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে দুই বছর আগে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করে সহকারী মার্চচেন্ডাইজার পদে চাকরি শুরু করেন তিনি।
হাসপাতালে নিহতের এক আত্মীয় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গতকাল আমরা হাসপাতালে দেনা-পাওনা সম্পূর্ণ পরিশোধ করার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিহতের ডেথ সার্টিফিকেট দেন। ৯টার দিকে লাশ নিয়ে রওনা দেয়ার প্রস্তুতিও চলছিল পরিবারের। এমন সময় হাসপাতাল থেকে পুলিশকে ইনফর্ম করা হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পরে পুলিশ এসে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে নেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ময়না তদন্তের চাপ দেন। কিন্তু নিহতের পরিবার জটিলতা এড়াতে চেয়েছিলেন। তারা লাশের ময়নাতদন্ত করতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফায় হাসপাতালে পরিবারের সদস্যের কথা হয়। এক পর্যায়ে নিহতের বৃদ্ধ বাবা মো. সুলতান তালুকদারসহ ৪ থেকে ৫ জন থানায় যান। পরে সেখানে সাদা কাগজে একটি মুচলেকা নেয়া হয় বলে নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন। মামলা করার চিন্তা নেই বলেও এক স্বজন জানান এই প্রতিবেদককে।
সূত্র জানায়, ৭ ঘণ্টা লাশের ফ্রিজিং গাড়ি হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার পর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে লাশ নেয়া হয় বাড্ডা লিংক রোডের বাসায়। সেখানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সেলিমের লাশ দাফন করার কথা রয়েছে।
পাঠকের মতামত
প্রত্যেক হত্যার বিচার হবে ইনশাআল্লাহ।
প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না। আমরা মানুষ না হয়ে এই প্রাণ নিয়ে আর কতকাল চলবো?