ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

‘সব তো শেষ আমরা কথা বলবো না’

বিল্লাল হোসেন রবিন, নারায়ণগঞ্জ থেকে
২৬ জুলাই ২০২৪, শুক্রবারmzamin

ছয় বছরের ছোট্ট শিশু রিয়া। পুরো নাম রিয়া গোপ। এ বছর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। ফুটফুটে শিশুটি সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখতো। ঘরের বাইরে তার খেলার জায়গা বলতে বাড়ির খোলা ছাদ। প্রতিদিনের মতো শুক্রবার দুপুরের খাবার খেয়ে ছাদে যায় রিয়া। খেলা করছিল। কিন্তু হঠাৎ ভবনের নিচে ও চারপাশে হৈচৈ, চিৎকার চেঁচামেচি আর গুলির শব্দ শুনে দৌড়ে ছাদে যান মেয়েকে ঘরে আনতে দীপক কুমার গোপ। মেয়েকে কোলে তুলে নিতেই বুলেট এসে বিদ্ধ হয় রিয়ার মাথায়। মুহূর্তেই ঢলে পড়ে বাবার কোলে। রক্তে ভিজে যায় দীপকের শরীর। দ্রুত রিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে। চিকিৎসক অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। রাতেই মাথায় অস্ত্রোপচার হয়। সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা। রিয়াকে রাখা হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। বলা হয়, ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না। অস্ত্রোপচারের পর শনিবার পার হয়। রোববার ও সোমবার আইসিইউতে একটু একটু করে আঙ্গুল নাড়ছিল রিয়া। স্বজনদের বুকে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু বুধবার সকালের দিকে রিয়ার সে নড়াচড়াও থেমে যায়। সবাইকে কাঁদিয়ে রিয়া চলে যায় না-ফেরার দেশে। রিয়ার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় বুধবার সন্ধ্যার দিকে। মর্গ থেকে এম্বুলেন্সে তোলার আগে স্ট্রেচারে রাখা মেয়েটির মুখ দেখানো হয় স্বজনদের। মুহূর্তেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। রিয়ার ছোট খালা আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার ছোট মারে, তুই আমাদের ছেড়ে চলে গেলি! তোরে ছাড়া আমরা কেমনে বাঁচবো?’

নারায়ণগঞ্জের হোশিয়ারি ব্যবসা কেন্দ্র শহরের নয়ামাটি এলাকায় পাঁচতলা দ্বীনবন্ধু মার্কেটের পঞ্চম তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন দীপক কুমার গোপ। দীপক কুমার গোপ ও বিউটি ঘোষ দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল রিয়া। বিয়ের পাঁচ বছর পর এ দম্পতির ঘর আলো করে আসে রিয়া। দেখতে পুতুলের মতো সুন্দর। এ বছরই রিয়া নয়ামাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল।

পারিবারিক তথ্যমতে, শুক্রবার দুপুরের পর থেকে শহরের ডিআইটি এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল পুলিশের। পরিস্থিতি দেখার জন্য পরিবারের সদস্যরা ছাদে যায়। সঙ্গে রিয়াও যায়। কিছুটা সময় দেখে তারা সবাই বাসায় চলে আসে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। এরমধ্যে রিয়া খাবার খেয়ে আবারো ছাদে যায় খেলতে। খানিক পরে গুলির শব্দ পেয়ে দৌড়ে ছাদে যান মেয়েকে ঘরে আনতে বাবা দীপক কুমার। মেয়েকে কোলে তুলে নিতেই বুলেট এসে রিয়ার মাথায় লাগে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিয়ার মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়, ‘গানশট ইনজুরি’। বুধবার রাতেই শহরের মাসদাইর শ্মশানে রিয়ার সৎকার করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, বাড়ির তিনদিকে অন্যান্য বিল্ডিংয়ের কারণে শুধু পশ্চিম দিকে খোলা। ফলে ছাদ থেকে ডিআইটি এলাকায় গুলশান সিনেমাহল দেখা যায়। ওই খান থেকেই গুলি এসে শিশু রিয়ার মাথায় বিদ্ধ হয়।

গতকাল বিকালে সরজমিন দ্বীনবন্ধু মার্কেটে তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায় রিয়াদের বাসায় যাওয়ার স্টিলের গেট ভেতর থেকে বন্ধ। পুরো মার্কেট জুড়ে সুনসান নীরবতা। স্তব্ধ রিয়ার পরিবার। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েও গেট খুলতে রাজি হননি দীপক কুমার গোপ। ভেতর থেকে কেউ একজন বলছেন, লিখে আর কি হবে। সব তো শেষ। আমরা কথা বলবো না। পরিবারের সদস্যদের দেয়া তথ্যে জানা যায়, শুক্রবার মেয়ে গুলি খাওয়ার পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন মা বিউটি ঘোষ। তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গতকাল দুপুরেও তাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। 

নানা কৌশলে দীপক কুমারের সঙ্গে কথা হলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, নিজের বাসায়ই তো মানুষ নিরাপদ না। আমার মেয়ে মারা গেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে, ‘আমি কি নিয়ে বাঁচবো, বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। 
 

পাঠকের মতামত

হাসিনাকে দেশে এনে এর বিচার করতেই হবে।

Mohsin
৬ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন

মর্মান্তিক ঘটনা!!! মহান আল্লাহর কাছে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি, আমিন।

MD REZAUL KARIM
২৬ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, ২:৫২ অপরাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status