প্রথম পাতা
বিদ্যুৎ-গ্যাস
প্রি-পেইড গ্রাহকদের চরম দুর্ভোগ
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
২৩ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবারচলমান কোটা বিরোধী আন্দোলন ও কারফিউর মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতের কার্ড রিচার্জে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। কার্ডের ব্যালেন্স শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ ও গ্যাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে দুর্ভোগে পড়েছেন। গভীর রাতেও রাজধারীতে বিদ্যুতের রিচার্জে দীর্ঘলাইন ছিলেন হাজার হাজার গ্রাহক। ডিপিডিসি এলাকায় সমস্যা সমাধানে সাময়িক হিসেবে সিঙ্গেল ফেজ গ্রাহককে ২ হাজার টাকা এবং ডাবল ফেজ গ্রাহককে ৫ হাজার টাকা ধার দেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন এই টাকা কেটে নেয়া হবে।
রোববার গভীর রাত জেগে রাজধারীর ডিপিডিসি ও ডেসকোর অফিসে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের রিচার্জে দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়েছিলেন হাজার হাজার গ্রাহক। মিরপুর বাঙলা কলেজ এলাকায় ডেসকোর অফিসের সামনে হাজার হাজার গ্রাহক রাত জেড়ে দীর্ঘ লাইন দেন। কিন্তু অনেকে রিচার্জ করতে ব্যর্থ হন। ফলে তারা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রাত যাপন করেন। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন দেশের মানুষ। নেটওয়ার্ক জটিলতায় প্রিপেইড মিটারের ব্যালেন্স শেষ হলে তারা টাকা রিচার্জ করতে পারছেন না। ফলে বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সংকটও দেখা দিয়েছে। গ্যাসের প্রিপেইড গ্রাহকরাও দুর্ভোগে পড়েছেন। বিদ্যুৎ অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কার্ড রিচার্জ করতে পারছেন না অনেক গ্রাহক।
রাজধানীসহ সারা দেশে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের কার্ড রিচার্জ করতে গিয়ে ডিপিডিসি, ডেসকো, তিতাসের এলাকার অফিসগুলোতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন। কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের কার্ড রিচার্জ করতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শত শত গ্রাহককে দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
আগারগাঁও এলাকায় ডেসকো অফিসে বিদ্যুতের কার্ডের রিচার্জের জন্য শত শত লোককে দীর্ঘলাইনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। মিরপুর ৬০-ফিট এলাকায় থাকেন আদনান। বিদ্যুতের কার্ডের ব্যালেন্স শেষ হয়ে যায়। দু’দিন ধরে ম্যানুয়ালি চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বাধ্য হয়ে অন্য বাসায় রাতযাপন করছিলেন তিনি। দু’বছরের শিশু নিয়ে এখন দুর্বিষহ দিন পার করছেন এই গ্রাহক। আরেক গ্রাহক আকরাম হোসেন। একই এলাকায় থাকেন। বৃদ্ধ বাবা হার্টের রোগী। বাবাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আকরাম। কারণ বিদ্যুতের কার্ড রিচার্জ করতে পারছেন না। যেকোনো সময়ে তার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিদ্যুতের কার্ড রিচার্জ করতে সকাল সাড়ে ৯টায় এসে ডেসকো অফিসে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ান তিনি। বেলা সাড়ে ৩টার দিকেও তার সামনে ৮ জন লোক ছিল। ৬ ঘণ্টা অপেক্ষার পরেও এই গ্রাহক জানান, যতক্ষণ সময় লাগে তাকে কার্ড রিচার্জ করতেই হবে।
রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকায় আড়ংয়ের পেছনে ডিপিডিসি’র বিদ্যুতের কেন্দ্রে কার্ড রিচার্জে দীর্ঘলাইন ছিল গ্রাহকদের। কার্ড রিচার্জ করার জন্য সকাল ১০ টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তাজমহল রোডের এক নারী গ্রাহক। দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা অপেক্ষার পর বিদ্যুতের কার্ড রিচার্জ করেন তিনি। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও তাকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তার মতো শত শত গ্রাহক এভাবে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বিদ্যুতের কার্ড রিচার্জ করতে গিয়ে।
এদিকে পাড়া-মহল্লায়ও কার্ডে বিদ্যুতের ও গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে গিয়ে বিভিন্ন রিচার্জের দোকানেও দীর্ঘলাইন দেখা গেছে। পুরান ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় নিলম্ব সাহা রোডে বিদ্যুতের কার্ড রিচার্জের দোকানে কথা হয় বিল্লাল হোসেন নামের এক গ্রাহকের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কার্ডের টাকা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ চলে যায়। কারফিউর মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেলে রিচার্জ করা কঠিন। এরমধ্যে তার বাসায় বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। প্রচণ্ড গরমে কষ্ট করতে হয়েছে তাকে। বলেন, এখন রিচার্জ করতে এসে দেখি দীর্ঘলাইন। নেটওয়ার্কের কারণে টাকা দিতে দেরি হচ্ছে। অন্যদিকে মোবাইলেও রিচার্জে ব্যাপক সমস্যার মুখে পড়ছেন মোবাইল গ্রাহকরা। বিকাশ থেকে কোনো মোবাইল রিচার্জ করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে ডিপিডিসি’র পরিচালক (অর্থ) গোলাম মোস্তফা মানবজমিনকে বলেন, অনলাইন সমস্যার কারণে বিদ্যুতের বিল পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে গ্রাহকদের। তিনি বলেন, দুই ভাবে বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করা যায়। একটা হলো গ্রাহক নম্বরে। অন্যটি হলো কেন্দ্রে গিয়ে কার্ডের মাধ্যমে রিচার্জ করে। এখন অনলাইন সমস্যার কারণে কেন্দ্রে গিয়ে পরিশোধ করতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। তবে সিঙ্গেল ফেজ গ্রাহককে ২ হাজার টাকা এবং ডাবল ফেজ গ্রাহককে ৫ হাজার টাকা ধার দেয়া হচ্ছে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন এই টাকা কেটে নেয়া হবে। এতে আর কোনো সমস্যা হবে না বলেও তিনি গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেছেন।
গ্যাস-বিদ্যুতের রিচার্জের সমস্যা প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের রিচার্জের সমস্যা দ্রুতই সমাধান করা হবে। ক্যাবল লাইনে ও বিদ্যুতের সাব-স্টেশনে হামলা হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে। ফলে অনলাইন বন্ধ থাকায় ছোট ছোট কেন্দ্র থেকে রিচার্জ করতে হচ্ছে। এজন্য একটু সমস্যা হয়েছে।