মত-মতান্তর
অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পিটুনি- কার তদন্ত কে করে?
যুক্তরাজ্য থেকে ডাঃ আলী জাহান
(৪ সপ্তাহ আগে) ১৬ জুলাই ২০২২, শনিবার, ১:২১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১:২৫ অপরাহ্ন

ডা: আলী জাহান
১. বাংলাদেশে মানুষকে পিটুনি বা গণপিটুনি দেয়া কি শৈল্পিক আকার ধারণ করেছে? তা না হলে মানুষ এসব খবর পড়ে এবং দেখে বিনোদন পাচ্ছে কেন? সাধারণ মানুষকে পুলিশ পিটুনি দেয়- গ্রেফতারের সময় এবং রিমান্ডে- এ খবর এখন পুরনো। সাধারণ মানুষ ধরেই নিয়েছে যে, পুলিশের হাতে পড়লে আপনাকে পিটুনি খেতেই হবে। রিমান্ডে নিয়ে গেলে হাত-পা ভেঙ্গে বা থেঁতলে দেবে- এমন ধারণা মানুষের মধ্যে এখন স্বাভাবিক।
২. যেটি এখনো শৈল্পিক আকার ধারণ করেনি তা হচ্ছে যে নির্বাচিত এমপির হাতে শিক্ষককে প্রকাশ্যে অন্য শিক্ষকদের সামনে পিটুনি দেয়ার ঘটনা। গুরুতর অভিযোগ উঠেছে যে রাজশাহীর এক এমপি মহোদয় (ওমর ফারুক চৌধুরী) অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে এমপি সাহেবের অফিসে আরো ৭/৮ জন কলেজ অধ্যক্ষের সামনে পিটিয়েছেন। সবার সামনে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে এমপি সাহেব বেপরোয়াভাবে কিল লাথি ঘুষি এবং হকিস্টিক দিয়ে নির্মমভাবে প্রহার করেছেন। নির্মম প্রহারের কারণে অধ্যক্ষ সাহেবের শরীরে বিভিন্ন স্থানে কালশিরা জমে ওঠার রিপোর্ট এসেছে। ঘটনা ঘটেছে ০৭ জুলাই। তবে বিভিন্ন কারণে পত্রিকায় আসতে সময় লেগেছে।
৩. কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকার করতে সময় লাগেনি। ঘটনা মিডিয়ায় আসার পরের দিন মাননীয় আইন প্রণেতা এবং অধ্যক্ষ মহোদয় যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পরিবর্তে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেছেন, অন্য অধ্যক্ষদের সাথে তার কিছু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।
৪. তাহলে কি অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পিটুনির ঘটনা ঘটেনি? তাহলে যারা এই খবর রটিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে পুলিশি অ্যাকশন শুরু হোক। এই ধরনের একটি ঘটনাকে ভাইরাল রূপ দিতে গিয়ে কিছু বেকুব মানুষ সম্মানিত অধ্যক্ষ এবং মহাসম্মানিত এমপি সাহেবের মানহানি ঘটিয়েছেন। তাদেরকে কেন আইনের আওতায় আনা হবে না?
৫. ঘটনাটি আসলেই ঘটেছে কিনা তার তদন্ত করবে কে? নিশ্চয়ই পুলিশ। একটি অপরাধ সংঘটিত হবার খবর এসেছে। আসলেই এমন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা তা বের করার দায়িত্ব নিশ্চয়ই পুলিশের। পুলিশ কি ওমর ফারুক চৌধুরী এবং অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে এ ব্যাপারে কোন জিজ্ঞাসাবাদ করেছে? যদি না করে থাকেন তাহলে এর কারণ কী? এই অপরাধের তদন্ত করবে আসলে কে?
৬. এই তদন্তের ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মোল্লা মাহফুজ আল হোসেন একটি মজার বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন 'অধ্যক্ষ সংবাদ সম্মেলনে কী বললেন তা আমাদের জানার বা শোনার সময় নেই।আমরা আমাদের প্রশাসনিক পদ্ধতিতে কাজ করছি এবং যেটা সঠিক সেই বিষয়টাই উঠে আসবে'। আমার কাছে মনে হচ্ছে উনার এই বক্তব্য এমপি অধ্যক্ষ মহোদয় ছাড়াও পুলিশের মান ইজ্জতের উপর সরাসরি হামলা!
৭. তারপর কী হবে? ঘটনার সত্যতা প্রকাশ পাবে? সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ এবং তাঁর সহকর্মীরা তো বলেই দিয়েছেন এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। তাহলে আপনারা কেন আবার তদন্তে নেমেছেন? আমরা ধারণা করতে পারি যে, আপনারা বিশ্বাস করেন যে সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে তা সঠিক নয়। তবে আপনারা যে আবার সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যকে আরো ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করবেন না তার কোনো গ্যারান্টি নেই।
৮. আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের পুলিশ জানে আসলে ঘটনা ঘটেছে কিনা। তাহলে উনারা কোন বক্তব্য দিচ্ছেন না কেন? প্রাথমিকভাবে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা তা বের করা পুলিশের জন্য নিশ্চয়ই কঠিন কাজ নয়। তবে সেই সহজ কাজটি করার জন্য যে ন্যায়নীতি ও সাহসের দরকার আর কতটুকু পুলিশের মধ্যে রয়েছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করার অবকাশ থেকেই যাচ্ছে।
৯. আইন ভঙ্গ করা এবং অপরাধ সংঘটিত করা এখন অনেকটা শৈল্পিক পর্যায়ে। নাটক সিনেমা উপন্যাসে এমন ভুরি ভুরি প্রমাণ পাবেন।কেউ এ নিয়ে আর প্রশ্ন করতে সাহস পায় না। এখানে আইন সকলের জন্য সমান নয়। রাজশাহীর অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ১৫ মিনিট ধরে প্রকাশ্যে অন্যান্য শিক্ষকের সামনে পিটুনি দেয়ার পরও পুলিশের নীরবতা এবং পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অধ্যক্ষকে দিয়ে ঘটনা অস্বীকার করানো সেই সত্যকে আবার প্রতিষ্ঠিত করছে।
ডা: আলী জাহান
কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট, যুক্তরাজ্য
সাবেক পুলিশ সার্জেন, যুক্তরাজ্য পুলিশ
পাঠকের মতামত
আমরা বাঙালীরা কত সহজে মিথ্যা বলি যা উন্নত দেশগুলোতে একেবারে criminal offence এবং সেখানে স্কুল লেভেল থেকে শেখানো হয় মিথ্যা বলা একটা criminal offence।
Try start teaching law and order, respect and speaking the truth from the kindergarten and hope new generation will follow.
ক্ষমতায় থাকলে আপনার জন্য আইন কানুন প্রযোজ্য হবেনা- বাংলাদেশ তার উৎকৃষ্ঠ উদাহরণ