শেষের পাতা
শাবিতে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ মুখোমুখি
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১৬ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার
রোববার মধ্যরাতে উত্তেজনা দেখা দেয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। ঢাকার আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কোটা সংস্কার আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা রাতে ক্যাম্পাসে জড়ো হন। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীরাও ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকে। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন; ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্যাম্পাসে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তবে; হামলার ঘটনা অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতারা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- হামলায় ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির, রসায়ন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ গালিব ও গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম আহত হন। তিনজনকেই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারীদের অবমাননা করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে রাত সাড়ে ১১টায় প্রধান ফটক থেকে ক্যাম্পাসের দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ছাত্রী হলের দিকে গেলে দুই শ’ থেকে তিন শ’ ছাত্রীও এতে যোগ দেন। পরে মিছিলটি ছাত্রীদের আবাসিক হল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে আসে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’, ‘মেধা না কোটা, মেধা মেধা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিপরীত দিক থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মীও শাহপরাণ হল থেকে একটি মিছিল নিয়ে আসেন। তারা স্লোগান দেন ‘আমার সোনার বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই’। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। সবার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে, তা দেখলেই বুঝা যাবে। বরং আমরা সড়কের পাশে গিয়ে তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই অভিযোগ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, দুইপক্ষ মুখোমুখি হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে তা স্বাভাবিক হয়ে যায়। এদিকে ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার ঘটনায় গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘কটূক্তি’র প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়। সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের রাজাকারের বাচ্চা বলতে পারেন না। এটা তার মুখে মানায় না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। তার এ উক্তি তুলে নিয়ে অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবিপ্রবি’র সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান কোটা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে চরম অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন। এতে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলে অভিহিত করেন। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মিছিল চলাকালে ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই, অতিদ্রুত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। তা না হলে ছাত্রসমাজ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। এদিকে অবস্থান কর্মসূচি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা। স্মারকলিপিতে শাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়েছেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে এ অভিযোগও করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চায় পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ প্রস্তুতি প্রশাসনকে রাখার আহ্বান জানান। স্মারকলিপির বিষয়ে শাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, স্মারকলিপি শিক্ষার্থীরা অফিসে জমা দিয়েছে। আমি এখনো দেখিনি। এদিকে; স্বাধীনতাকে কটাক্ষ, একাত্তরের ঘৃণিত গণহত্যাকারী রাজাকারদের প্রতি সাফাই এবং আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতা তৈরির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। বিকাল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হল থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করেন নেতাকর্মীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সভাপতি মো. খলিলুর রহমান, সহ-সভাপতি মামুন শাহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন মিয়া। বক্তব্যে সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, বিগত কিছুদিন যাবৎ কোটা সংস্কার আন্দোলন হচ্ছে। এ আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের একটি পজিটিভ ভাব ছিল। যখন শিক্ষার্থীরা কোনো যৌক্তিক দাবি নিয়ে হাজির হয় তখনই জামায়াত-বিএনপি’র কুলাঙ্গাররা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে চেপে বসে ক্ষমতার মসনদে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। আমরা তাদেরকে দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আপনাদের এ মনোবাসনা কখনো পূর্ণ হবে না। নগরে বিক্ষোভ: সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের (প্রতিবন্ধী) জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে বিল পাস করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সিলেটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজনে নগরীর চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এক মশাল মিছিল বের হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিটি পয়েন্টে এক বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হয়। এমসি কলেজের শিক্ষার্থী তানজিনা বেগমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সাকিব আহমদ, এমসি কলেজের আয়শা আক্তার, লিডিং ইউনিভার্সিটির বুশরা সুহাইল, সিলেট সরকারি কলেজের সানি, সরকারি মদনমোহন কলেজের আল মাহমুদ প্রমুখ। বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, আমাদের সর্বজনশ্রদ্ধেয় মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে অংশগ্রহণকালে ব্যক্তিগত কোনো সুবিধা চেয়েছিলেন কিনা জানি না। আমরা ইতিহাস পড়ে, জেনে, শুনে এতটুকু নিশ্চিত যে, এ ভূ-খণ্ডের উপর তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের করা নানান সীমাহীন বৈষম্য আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে ওনারা যুদ্ধে গিয়েছেন, জীবনবাজি রেখে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আমরা তাদের সম্মান করি, তাদের যেকোনো সময়ের অসচ্ছলতা, অসুস্থতা, দুর্বলতার প্রেক্ষিতে সহযোগিতার হাত বাড়াতে চাই, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই।