ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

স্টাফ রিপোর্টার
১৫ জুলাই ২০২৪, সোমবার
mzamin

বঙ্গভবন অভিমুখে কোটা বিরোধীদের গণপদযাত্রা ছবি: নিজস্ব

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের একদফা দাবিতে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর পৌনে ৩টার দিকে বঙ্গভবনে শিক্ষার্থীদের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আদিল চৌধুরীর হাতে এ স্মারকলিপি তুলে দেন। স্মারকলিপিতে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী) কোটা রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করার দাবি জানানো হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোটা সংস্কারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দাবি করেন তারা। একই সঙ্গে এ সময়ের মধ্যে শাহবাগ থানায় হওয়া মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান। বেঁধে দেয়া সময়ে দাবি আদায় না হলে নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে থেকে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের গণপদযাত্রা। এতে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার সাত কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। বঙ্গভবন অভিমুখী এ পদযাত্রায় তিনবার পুলিশের বাধার সম্মুখীন হন আন্দোলনকারীরা। শিক্ষা চত্বর, গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ও জিপিও মোড়ে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। শিক্ষা চত্বর ও জিরো পয়েন্টের ব্যারিকেড ভেঙে শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেলেও জিপিও মোড় থেকে আর সামনে আগাতে দেয়নি পুলিশ। বঙ্গভবনে স্মারকলিপি দেয়া শেষে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা জিপিও মোড়ে শিক্ষার্থীদের জমায়েতে ফিরে এসে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

 এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, স্মারকলিপিতে আমরা মহামান্য প্রেসিডেন্টের কাছে ২৪ ঘণ্টার একটি সুপারিশ করেছি; আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদের অধিবেশন ডেকে আমাদের একদফা দাবি বাস্তবায়নে আইন পাসের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হোক অথবা অধিবেশন আহ্বান করা হোক। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা এই দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চাই। তিনি বলেন, আমাদের দমন করার পরিকল্পনা হচ্ছে। কিন্তু আজ আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি, আমাদের মিছিল থামানো যায়নি। আমরা জানানোর চেষ্টা করছি যে, চাইলে আমরা ১০-২০ হাজার মানুষের জমায়েত করতে পারি। কিন্তু আমরা চাইছি না জনদুর্ভোগের কর্মসূচি করতে আমাদের বাধ্য করা হোক। আমরা দাবির বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ চাইছি। আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করবো যে সরকার, মহামান্য প্রেসিডেন্ট ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে কী ধরনের বক্তব্য বা পদক্ষেপ আসছে। এরপর আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করবো। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় হওয়া অজ্ঞাতনামা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এটি আমরা আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়ে দিচ্ছি। এর মধ্যে মামলা প্রত্যাহার করা না হলে আমাদের কর্মসূচি কঠোরতর হবে। নাহিদ ইসলাম বলেন, কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ তৈরি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আমরা এখনো কোনো আশ্বাস পাচ্ছি না। সব গ্রেডে কোটা সংস্কারের এখতিয়ার নির্বাহী বিভাগ ও সরকারেরই। 

আমরা চাইছি, সংসদের মাধ্যমে আইন করে যথাযথভাবে বিষয়টি বিধিবদ্ধ করার জন্য। তিনি বলেন, সবগুলো দরজায় গেলেও আমাদের ফেরানো হচ্ছে, তারপর আবার বলা হচ্ছে যে, আমরা বারবার দাবি পরিবর্তন করছি। সরকার প্রথমেই এখানে হস্তক্ষেপ করলে আমাদের এত বক্তব্য দিতে হতো না। আজকে আমরা মহামান্য প্রেসিডেন্টের কাছে এসেছি। সরকারের কাছ থেকে যেহেতু আমরা কোনো আশ্বাস পাচ্ছি না, আমরা চাইছি রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি হস্তক্ষেপ করে আমাদের একদফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইন পাস করতে ভূমিকা রাখবেন এবং প্রয়োজনে জরুরি অধিবেশন আহ্বান করবেন। আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১২ জনের একটি দল বঙ্গভবনে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। মহামান্য প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিবের হাতে স্মারকলিপিটি দিয়ে এসেছি। তিনি (সামরিক সচিব) নিশ্চিত করেছেন, স্মারকলিপিটি দ্রুতই প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছে দেবেন। স্মারকলিপিতে আমরা সরকারি চাকরিতে সংবিধান অনুযায়ী শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য সব গ্রেডে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রেখে সংসদে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছি। মহামান্য প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে থেকে ছাত্রসমাজের প্রাণের দাবিটি অতি সত্বর বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবেন বলে আমরা আশা করি। 

স্মারকলিপি দেয়ার সময় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলে ছিলেন- সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, আসিফ মাহমুদ,  মো. মাহিন, আব্দুল কাদের,  আব্দুল হান্নান মাসউদ, আরিফ সোহেল (জাবি), আশিক আহমেদ  (শেকৃবি), নিদ্রা (জবি), সুমাইয়া আখতার (ইডেন), সহ-সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম ও রশিদুল ইসলাম রিফাত। স্মারকলিপিতে বলা হয়, ছাত্রসমাজ দীর্ঘদিন যাবৎ ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে রাজপথে ঝড়-বৃষ্টি-খরতাপকে উপেক্ষা করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি মেনে নেয়ার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আমাদের কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হোক তা আমরা কখনোই চাই না। আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চাই। ছাত্রসমাজ আশা রাখে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। অন্যথায় ছাত্রসমাজ নিজেদের অধিকার রক্ষায়, বৈষম্যমুক্ত ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ নির্মাণে সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হবে। পূর্বঘোষিত জমায়েত কর্মসূচিতে যোগ দিতে সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের খণ্ড খণ্ড মিছিল আসতে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ছাড়াও এতে যোগ দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

দুপুর ১২টার সময় শুরু হয় শিক্ষার্থীদের গণপদযাত্রা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে পদযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, শিক্ষা চত্বর, গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট হয়ে জিপিও মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়া পদযাত্রায় একাধিকবার পুলিশের বাধা আসে। শিক্ষা অধিকার চত্বরে পুলিশ প্রথম ব্যারিকেড দেয়। সেটি ভেঙে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের রাস্তা দিয়ে বঙ্গভবনের দিকে এগুতে থাকে। কিন্তু গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে আবার বাধার সম্মুখীন হন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা সেখানে বসে পড়েন ও কোটা বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাদানুবাদ হয় পুলিশ সদস্যদের। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের নেতারা মাইকে কাউকে বিশৃঙ্খলা না করার অনুরোধ করেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা শেষে গুলিস্তানেও ভেঙে ফেলা হয় পুলিশের ব্যারিকেড।

 এরপর জিরো পয়েন্ট থেকে জিপিও মোড়ের দিকে এগুতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এ সময় কিছুটা বৃষ্টির বাধা আসলেও শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়েননি। জিপিও মোড়ে গিয়ে পুলিশের কঠোর বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। সেখানে আগে থেকেই পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন ছিল। ছিল সাঁজোয়া যান। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীদের ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রেসিডেন্ট বরাবর স্মারকলিপি দিতে যান। ২টা ৪০ মিনিটে তারা বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। ২০ মিনিট সেখানে অবস্থান শেষে বিকাল ৩টার দিকে বঙ্গভবন থেকে বের হন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এদিকে শিক্ষার্থীদের পদযাত্রার কারণে দুপুরে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, পল্টন, মতিঝিল, গুলিস্তান, তাঁতীবাজারসহ আশপাশের এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। এদিকে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলার আন্দোলনকারীরা পদযাত্রা করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।

 

পাঠকের মতামত

এই সরকার ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত মেধাবীরা সরকারি চাকরি পাবে তার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। সম্প্রতি পিএসসি কান্ডের পরেও যদি কেই মনে করে মেধার মাধ্যমে চাকরি পাবে, তবে সে বোকার স্বর্গে বাস করছে। তাই মূল বিষয় বাদ দিয়ে কোটা নিয়ে আন্দোলনের কোন যুক্তি নেই। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সুভ বৃদ্ধি কামনা করছি, যাতে তাদের আন্দোলনের মূল বিষয় তাদের উপলব্ধিতে আসে এই কামনা করছি। ধন্যবাদ।

SM. Rafiqul Islam
১৫ জুলাই ২০২৪, সোমবার, ৮:৪৮ অপরাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status