ঢাকা, ১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবার, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

কার্যকর হয়নি ওসমানী’র তদন্ত কমিটির সুপারিশ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৫ জুলাই ২০২৪, সোমবারmzamin

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুর্নীতিবাজ ওয়ার্ড মাস্টার ও নৈশপ্রহরীর বিরুদ্ধে ৩ মাস আগে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখনো ওই তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশ কার্যকর করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে নানা কানাঘুষা চলছে হাসপাতালে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছে; ওসমানী মেডিকেলের স্বার্থ বিবেচনায় ওই রিপোর্টে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা নেবে অধিদপ্তর। কিন্তু এ ব্যাপারে রহস্যময় নীরব রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ উঠেছিল ওসমানী হাসপাতালের আলোচিত ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে দুদকের ৫ই মার্চের এক আদেশের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্তের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এসএম আসাদুজ্জামানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিতে সদস্য রাখা হয়- বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আস আদ দ্বীন মাহমুদ ও সিনিয়র স্টোরকিপার ডা. জলিল কায়সার খোকনকে। ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা গত ২৮শে মার্চ এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন হাসপাতালের পরিচালক বরাবর প্রেরণ করেন। আর ওই রিপোর্টে তদন্ত কর্মকর্তারা সুপারিশ করেন সংঘটিত ঘটনার প্রেক্ষাপটে ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে অভিযুক্ত ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব ও নিরাপত্তাপ্রহরী আব্দুল জব্বারকে লঘুদণ্ড হিসেবে দুরবর্তী যেকোনো স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে  (যেমন- পার্বত্য অঞ্চল) বদলি করা যেতে পারে। একইসঙ্গে তাদের দুর্নীতির অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে অধিকতর তদন্ত করা যেতে পারে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া ২৮শে মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. ময়নুল আহসান বরাবর প্রেরণ করেছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এখনো তদন্ত কমিটির সুপারিশ আমলে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এই অবস্থায় হাসপাতালে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তারা। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাদের সাড়া মেলেনি। হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব ও কর্মচারী সমিতির সভাপতি ও নৈশপ্রহরী আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ তুলেছিলেন সিলেট শহরতলীর কামালবাজারের বাসিন্দা মো. ইসলাম উদ্দিন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির সদস্যরা অভিযুক্তদেরও বক্তব্য গ্রহণ করেন। তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়; ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব ও কর্মচারী সমিতির সভাপতি নতুন মেডিকেল কলোনির ক্যাম্পাসে অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরি করে এবং ক্ষেত্রীপাড়া কোয়ার্টারে বরাদ্দ ছাড়াই অবৈধভাবে ভাড়া দিয়ে অর্থ গ্রহণ করেন। কিন্তু অভিযুক্ত দু’জন প্রভাবশালী হওয়ার কারণে অনেক সাক্ষী এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেও অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া বহির্বিভাগ, ক্যাম্পাসের নানা স্থানে অবৈধ দোকান, এম্বুলেন্স রাখার অবৈধ স্থান থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এতে হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। কর্মচারীদের ডিউটি রোস্টার, লাভজনক স্থানে স্থানান্তর অর্থের বিনিময়ে করে থাকেন। তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়; নিরাপত্তাপ্রহরী ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সভাপতি। পূর্বেও তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বিগত ২০১৮ সালের ২৮শে অক্টোবর হাসপাতালের চুরির ঘটনায় হাতেনাধে ধরা পড়ে অভিযুক্ত হন। কিন্তু তিনি অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ায় তাকে গুরুদণ্ড না দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লঘুদন্ড প্রদান করেছিলেন। ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিবের ব্যাপারে বলা হয়েছে; তিনি অসংখ্য নারীকে নানাভাবে যৌন নির্যাতন করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তৎকালীন বুশরা সিকিউরিটির আউট সোর্সিং কর্মচারী রুপা খানম তার দ্বারা যৌন নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। ২০২১ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি এ সাধারণ ডায়েরি করা হয় বলে রিপোর্টে জানানো হয়। তবে তদন্ত কমিটির সদস্যরা অভিযুক্ত ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব ও কর্মচারী আব্দুল জব্বারের সম্পত্তি অনুসন্ধানসহ নানা বিষয়ে দুর্নীতির অধিকতর তদন্ত দুর্নীতি কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত করার সুপারিশ করেছেন। তদন্ত রিপোর্টের শেষ সুপারিশ প্রস্তাবে তদন্ত কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন; ‘ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব, নিরাপত্তাপ্রহরী আব্দুল জব্বার উঁচু পদবীধারী ও প্রভাবশালী হওয়ার কারণে হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভয়ে তাদের ব্যাপারে মুখ খোলেন না। এমতাবস্থায় হাসপাতালের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে তাদের দ্রুত দূরবর্তী কোনো স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে বদলির সুপারিশ করা হলো।’ তদন্ত কমিটির এক সদস্য মানবজমিনকে জানিয়েছেন; হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের উপর যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেটি তারা অভিযোগকারী, অভিযুক্ত দু’ব্যক্তি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য’র ভিত্তিতে সম্পাদন করেন। এরপর সুপারিশসম্বলিত তদন্ত রিপোর্ট দ্রুততম সময়ে দাখিল করেন। পরবর্তী সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নেবে। 
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status