শেষের পাতা
প্রশ্নফাঁসে জড়িত সোহেলের বোন শিক্ষা অফিসার
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে
১৫ জুলাই ২০২৪, সোমবার
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৭ জনের একজনের বাড়ি কুমিল্লায়। তবে তিনি ঢাকার মিরপুরের ব্যবসায়ী হিসেবেই তার গ্রামে পরিচিত। নাম আবু সোলেমান মো. সোহেল (৩৫)। বাড়ি কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বানাশুয়া গ্রামে। তার গ্রেপ্তারের পর থেকেই বিস্মিত গ্রামবাসী। তারা জানতেন সোহেল ব্যবসায়ী। আর এখন শুনছেন তিনি প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সদস্য।
সোহেল বানাশুয়া গ্রামের আবদুল ওহাবের ছেলে। তার তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সোহেল ছোট। নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা ছাত্র বলে জানান দিতেন। সরজমিন সোহেলের বাড়ি কুমিল্লার সদর উপজেলার বানাশুয়া গ্রামে দেখা গেছে, একতলা ভবনের একটি বাড়ি খালি পড়ে আছে। তারা ৩ ভাই ২ বোন। বড় দুই ভাই স্বর্ণ ব্যবসায়ী। আর সোহেল বর্তমানে কারাগারে। একবোন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার। অপর বোন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তার কাছেই থাকেন সোহেলের বাবা-মা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সোহেলের বোন হালিমা বেগম উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার। যিনি ২০১৪ সালের ২৯শে জানুয়ারি চাকরি পেয়েছেন। জীবনে তিনি ৩টি চাকরির পরীক্ষার আবেদন করেছিলেন। অংশ নিয়েছিলেন দু’টিতে। একটি বিসিএস। সেই বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিতেও পাস করতে পারেননি। আর একবার ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন করলেও পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়। এরপর পরীক্ষা দেন পিএসসি’র সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে। জীবনের দ্বিতীয় পরীক্ষায় করেন বাজিমাত। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে চাকরি পেয়ে আর কোনো পরীক্ষায় অংশ নেননি। এরপর থেকে ১০ বছর ধরে এই পদেই চাকরি করছেন। বর্তমানে তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় কর্মরত আছেন।
হালিমা বেগম বলেন, আমার ভাইয়ের প্রশ্নে আমি পরীক্ষা দেইনি। আমার পরীক্ষা পিএসসিই নিয়েছিল। কিন্তু আমি নিজ যোগ্যতায় পাস করেছি। যদিও বিসিএস প্রিলিতে আমি পাস করতে পারিনি। ভাইয়ের এসব বিষয়ে জড়িত থাকার বিষয়টি তিনি বিশ্বাস করেন না মর্মে জানান, আমরা আগে থেকে সম্ভ্রান্ত। আমাদের টাকা পয়সার অভাব ছিল না। শেষদিকে শুনেছি সোহেল ভালো ব্যবসা করেন। আমার অন্য ভাইদের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন। সোহেল শেয়ার, বন্ড, বিল্ডার্স, ল্যান্ড বিজনেসসহ বিভিন্ন ব্যবসা করতেন। সে অনেক আগে আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ধার নিয়েছিল। তিন মাস আগে সেটা ফেরত দিয়েছিল। আমার ভাই ভালোই ছিল। কে জানি আমাদের সর্বনাশ করলো। এ সময় তিনি বলেন, আমার ভাই ৩-৪ বার বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে। যদি প্রশ্ন পেতো তাহলে তো সে নিজেই চাকরি নিতো। সে কোনোবার পাস করেনি।
অপরদিকে বড় ভাই মো. সুজনের স্ত্রী (সোহেলের ভাবী) নাজনিন সুলতানা পলি স্থানীয় মহিষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি ২০১১ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করে ২০১২ সালে পরীক্ষা দেন। ২০১৪ সালে চাকরিতে প্রবেশ করে ২০১৭ সালে আসেন মহিষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে। এর আগে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার একটি স্কুলে তিনি কর্মরত ছিলেন। সোহেলের ভাবী নাজনিন সুলতানা বলেন, ভাইয়ের প্রশ্নে পরীক্ষায় পাস করিনি। আমি যোগ্যতায় পেয়েছি। এই চাকরি ছাড়া তেমন কোনো চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেইনি। ভাই প্রশ্ন দিলেতো আরও ভালো চাকরি করতাম। আমি ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম। আমার আরও ভালো চাকরি পাওয়া দরকার ছিল।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সোহেলের এক ভাইয়ের কুমিল্লা নগরীর ছাতিপট্টিতে সোনার দোকান রয়েছে। আরেক ভাই বুড়িচং উপজেলা সদরে স্বর্ণের ব্যবসা করেন। গত রমজানের ঈদের আগে সোহেল বাড়ির পাশে ৬০ শতক জমি দেড় কোটি টাকায় কেনেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সফিউল আলম বলেন, বিষয়টি খুবই কনফিডেনশিয়াল (গোপনীয়)। এই বিষয়ে আমাদের কী করার আছে? যদি সত্যি হয় তাহলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এতে আমাদের সহযোগিতা লাগলে আমরা প্রস্তুত আছি।