প্রথম পাতা
ঢাকা যেন এক ডুবন্ত নগরী
স্টাফ রিপোর্টার
১৩ জুলাই ২০২৪, শনিবার
বৃষ্টিতে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন এলাকা পানির নিচে -নিজস্ব ছবি
আষাঢ়ের বিদায় ঘণ্টা বাজতে বাকি ৩ দিন। এরইমধ্যে গতকাল ভোররাত থেকে কয়েক ঘণ্টার ঝুম বৃষ্টি। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় ঢাকা। থৈ থৈ পানি। কোথাও কোমর সমান, কোথাও হাঁটু সমান পানি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অলিগলি থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দোকানপাট, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রধান সড়কেও থৈ থৈ পানির স্রোত ছিল। জলাবদ্ধতায় পড়ে শত শত গাড়ি রাস্তায় বিকল হয়েছে। জলজটে সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানির নিচে ঢাকা ছিল অনেক বিকল গাড়ি। জলজটের সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে যানজটের। ধীরগতিতে চলছিলো যানবাহন। নটর ডেম কলেজের সামনে প্রায় ডুবে যাওয়া একটি প্রাইভেটকারের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই এই ছবি নিয়ে বিভিন্ন রকম মন্তব্য করেছেন। ছুটির দিন থাকায় অধিকাংশ নগরবাসী ঘরেই ছিলেন। তবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। তবুও কর্মজীবী বহু মানুষকে বের হতে হয়েছে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই। বৃষ্টিতে ভিজে এবং পানি জমা অলিগলি ও সড়কে নাকাল হতে হয়েছে তাদের। মহানগর জুড়ে সৃষ্টি হয়েছিল স্থবিরতা।
সরজমিন দেখা যায়, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, বায়তুল মোকাররম, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, আরামবাগ, প্রগতি সরণি, নিউ মার্কেট, ধানমণ্ডি রাপা প্লাজা, বংশাল, মিরপুর রোকেয়া সরণি, দয়াগঞ্জ মোড়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, টয়েনবি সার্কেল রোড, ধানমণ্ডি ২৭, এলিফ্যান্ট রোড, মৎস্য ভবন, কাওরান বাজার, বিজয় সরণি, ঢাকা গেট ভিআইপি রোড, মিরপুর মাজার রোডসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ডুবে ছিল পানিতে। দেখা যায়, রাস্তাগুলো জলমগ্ন হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। কোনো কোনো এলাকায় যান চলাচল একবারেই বন্ধ ছিল। বৃষ্টিতে মহানগর জুড়ে স্থবির হয়ে পড়েছিল জনজীবন। এ অবস্থায় রাজধানীবাসীকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সময় হাতে নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ।
নিউমার্কেট ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় দেখা যায়, নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে শুরু করে নীলক্ষেত পর্যন্ত সড়কে জমে আছে বৃষ্টির পানি। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাস্তার পার্শ্ববর্তী ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। বৃষ্টির সময় উপচে সড়কের সব পানি প্রবেশ করেছে মার্কেটের ভেতরে। ফলে দোকানে রাখা শাড়ি, কাপড়, বইসহ অন্যান্য সবকিছু ভিজে গেছে। রাস্তায় ও গলিতে পানি জমে থাকার কারণে এসব এলাকার অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। রাস্তায় চলাচল করতে ব্যবহার করতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশা। বাসার নিচে পানি বাধায় সামান্য পথ যেতে হয়েছে রিকশা বা ভ্যানে। পুরান ঢাকায় পানি জমেছে সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকায় বয়ে গেছে পানির স্রোত। এখানে অনেক ব্যাটারিচালিত রিকশা চলে। কোনো কোনো সড়কে পানিতে ডুবে থাকায় রিকশার মোটর বন্ধ হয়ে গেছে। থমকে গেছে সিএনজি। নিমতলী, চাঁনখারপুল এলাকা জলমগ্ন হওয়ায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে সৃষ্টি হয়েছে যানজটের। নটর ডেম কলেজের সামনে দেখা যায়, চারদিকে কোমর সমান থৈ থৈ পানির নিচে একটি সাদা রংয়ের মাইক্রোবাস বিকল হয়ে পড়ে আছে। মিরপুর বাংলা কলেজের সামনে থেকে ১ নম্বর মোড় পর্যন্ত সড়কে পানি জমা ছিল। ঘর হতে বের হতে পারেনি অনেকে।
দুর্ভোগে পড়া নগরবাসীরা বলেন, সারাদিনে এমন জলাবদ্ধতায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, মোহাম্মদপুরের হাউজিং এরিয়াসহ বিভিন্ন জায়গা কোমর পানিতে ডুবে ছিল। অফিসে আসতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।
ফার্মগেট এলাকা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন শিহাব। তিনি নিচে নেমে দেখেন পুরো বাসার নিচতলায় রাস্তার পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, রাস্তায় বের হয়ে কোনো ভাবেই সামনের দিকে যাওয়া যাচ্ছিলো না। কোমর পর্যন্ত সড়কে পানিতে তলিয়ে ছিল। একটা রিকশা নিয়ে মূল সড়কে এলেও সামান্য পথ পাড়ি দিতে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়েছে তাকে।
নিউমার্কেটের বই ব্যবসায়ী আতিকুল বলেন, রাস্তার পানি দোকানে ভেতরে প্রবেশ করে অনেক বই ভিজে গেছে। বইগুলো আর কোনো কাজে আসবে না। অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায়। আমার যে ক্ষতি হয়েছে সেটি বলার মতো নয়। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে অনেক বেগ পেতে হবে।
আজমল নামে এক ব্যক্তি বলেন, মেয়েকে নিয়ে সকালে হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে দেখি কোমর পানিতে তলিয়ে আছে। আর হাসপাতালে যাওয়া হয়নি। গলির এক ব্যবসায়ী বলেন, সামনের ড্রেনগুলো থেকে পানি সরছে না। সকাল থেকে বিকাল হয়ে গেলেও দোকানের সামনের রাস্তা থেকে পানি সরেনি। সারাদিনে আজ দোকান খুলতে পারিনি। অনেক লস হয়ে গেল।
এদিকে সকাল থেকে নিরবচ্ছিন্ন ভারী বৃষ্টি হওয়ায় পানি অপসারণ হতে কিছুটা সময় লেগেছে বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসি থেকে বলা জলাবদ্ধতা নিরসনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন পাঁচ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এ ছাড়া ১০টি অঞ্চলে কাজ করছে ১০টি কুইক রেসপন্স টিম। তারা প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি নিষ্কাশন করেছে। ভারী বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসনের জন্য কল্যাণপুরে পাঁচটি পাম সকাল থেকে একযোগে কাজ করেছে বলেও জানায় ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নির্দেশে প্রকৌশল বিভাগ, বর্জ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ভোর থেকে কাজ করছে। জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক তদারকি করে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয় নগর ভবন থেকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ৬ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৩০ মিলিমিটার। আর সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় রাজধানীতে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি শুধু রাজধানীতে নয়, দেশের সব জায়গায়ই হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, শুক্রবার সারাদিন কমবেশি বৃষ্টি হবে। তবে শনিবার থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসবে। তিনি বলেন, বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসলে স্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা একটু বেড়ে যাবে। সামনের সপ্তাহে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তি থাকবে। এতে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হবে।
আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজধানীসহ প্রায় সারা দেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে ৩০৯ মিলিমিটার। এ ছাড়া সন্দ্বীপে বৃষ্টি হয়েছে ২১৯ মিলিমিটার, সীতাকুণ্ডে ১০২ মিলিমিটার। আবহাওয়া অফিস জানায়, মৌসুমি বায়ু এখন অতিমাত্রায় সক্রিয় থাকার কারণেই এই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এই মৌসুমি বায়ুর অক্ষ ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ এবং ভারতের আসাম হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু অতিমাত্রায় সক্রিয় থাকায় উপকূলীয় এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। দেশের ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে চলেছে। মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা কমে আসবে। এর ফলে কাল থেকে মাঝেমধ্যে হালকা আবার মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হলেও এমন ভারী বর্ষণ হবে না বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
পাঠকের মতামত
Smart Bangladesh ?
ধারাবাহিক উন্নয়নের জোয়ার। হা হা হা।
We would like to remember former mayor Mr. Anisul Huq for his good job in Uttara area. His initiative made Uttara waterless in the rainy season. Thanks to Mr. Anisul Huq. We always remember him and pray for his departed soul. May Allah grant him Jannatul Ferdous.
শুধু ঢাকা সিলেট নয় এভাবে সারাদেশ পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সামনের দিনগুলোতে। এগুলো সবই আমাদের কর্মের ফলাফল। পানি চলাচলের সব রাস্তা বন্ধ করে দিলে পানি জমা হতে বাধ্য। আমরা কেবল অন্যের কাছে আশা করি অন্য কেউ সঠিক কাজটি করবেন এবং তার ফল আমরা ভোগ করি। আমরা নিজেরাই একটু চিন্তা করে দেখি কয়জন বিল্ডিং কোড অনুযায়ী স্থাপনা নির্মাণ করেছি, কয়জন ডাস্টবিনে ময়লা আবর্জনা ফেলি সঠিকভাবে, কয়জন রাস্তা বা ড্রেনের জন্য জায়গা রেখেছি এবং কয়জন বৃষ্টির পানি রিচার্জ (মাটির নিচে যাওয়ার) হওয়ার জন্য উন্মুক্ত জায়গা/ উঠান রেখেছি কংক্রিটের ঢালাইয়ের পরিবর্তে? কয়জন জলাশয় ভরাট করেছি? কয়জন নদী খাল আর রাস্তা দখল করে বিল্ডিং/ অবকাঠামো নির্মাণ করেছি?
মুগদা মেডিকেল কলেজ সামনের রাসতাটা দেখলে মনে হবে এটি একটি নদী, অথছ এখানে আইডিয়াল school, সরকারী হাসপাতাল ও জনবহুল রাসতা , মনে হয় দেখার কেউ নেই,
Who is responsible???
উন্নয়নের ভেলকি
সমস্যা নাই। চেতনা দিয়ে এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠবো আমরা!